ধীরে ধীরে কি মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক হারাচ্ছেন সুকান্ত-শুভেন্দুরা? শান্তিপুরে তৃণমূলের জয়জয়কারে উঠছে প্রশ্ন
বাংলায় রেকর্ড ব্যবধানে জয় তৃণমূল কংগ্রেসের। গোসাবা, দিনহাটাতে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়। বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতেও পদ্ম ফোটাতে পারলেন না সুকান্ত-শুভেন্দুরা। একের পর এক জেতা আসনে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। যেমন শান্তিপুর। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয় পায় বিজেপি।
এবার আর সেই কেন্দ্র ধরে রাখতে পারল না বিজেপি। প্রায় ৬০ হাজারের বেশি ব্যবধানে ভোটে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী ব্রজো কিশোর গোস্বামী। যদিও ভোট লুঠের অভিযোগ বিজেপির।

৩০ হাজারেরও বেশী ভোটে জয় পায় বিজেপি
শান্তিপুর অন্যতম বিজেপির শক্তঘাঁটি। এক কেন্দ্র থেকে সাংসদ রয়েছে বিজেপির। গত বিধানসভা নির্বাচনে সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে প্রার্থী করে বিজেপি। প্রায় ৩০ হাজার বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন তিনি। কিন্তু ফল প্রকাশের পরেই সাংসদ হিসাবেই থাকতে চান জগন্নাথবাবু। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন।
ফলে ওই কেন্দ্রটি ফাঁকা হয়ে যায়। আর সেই কেন্দ্রেই ভোট হয়। ফলে জেতা আসন ধরে রাখাটা রীতিমত চ্যালেঞ্জের ছিল বঙ্গ বিজেপির কাছে। কিন্তু তৃণমূলের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না বিজেপি।

৬০ হাজারের বেশি ব্যবধান
শান্তিপুর উপনির্বাচনে এবার তৃণমূলের মাস্টারস্ট্রোক ছিল ঠাকুরবাড়ির সদস্য ব্রজো কিশোর গোস্বামী। ফলে শান্তিপুরে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা ভোট চলে আসা তৃণমূলের কাছে। প্রায় ৬০ হাজারের বেশি ব্যবধানে ভোটে জিতে সদ্য বিজয়ী বিধায়ক ব্রজো কিশোর গোস্বামী এই জয়কে মমতা বন্দ্যোয়াধ্যায়কেই উৎসর্গ করেন।
তিনি বলেন, এটি মমতার জয়, উন্নয়নের জয়। যদিও এত ব্যবধানে জিতবে বলে আশা করেননি তৃণমূলের এই প্রার্থী। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই জয় শান্তিপুরবাসীর জয়।
আগামী দিনে শান্তিপুরকে আরও উন্নয়ন করা কিভাবে যায় সেদিকে নজর রাখতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি তৃণমূল বিজয়ী প্রার্থীর।

প্রশ্নের মুখে মতুয়া ভোট
শান্তিপুরে একটা বিশাল অংশের মানুষ মতুয়া। শুধু তাই নয়, বৈষ্ণব ধর্মের মানুষও বসবাস করেন। আর সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। কাজে লাগেনি শুভেন্দুর টোটকাও। গত লোকসভা নির্বাচন, পরবর্তীকালে বিধানসভা নির্বাচনেও মতুয়াদের একটা অংশ বিজেপির সঙ্গেই ছিল। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কথা রাখেনি বিজেপি সরকার। এখনও নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার সাহস দেখাতে পারেনি। সেখানে দাঁড়িয়ে মতুয়াদের ক্ষোভ যে তৈরি হয়েছে তা কার্যত স্পষ্ট এই ফলাফলে।

রামকৃষ্ণের ধর্ম বোঝেন! কটাক্ষ ফিরহাদের
শান্তিপুরে বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়তেই বিজেপিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেণ ফিরহাদ হাকিম। তাঁর দাবি, শান্তিপুরের মানুষ রামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ যে হিন্দুধর্মের কথা বলেছেন সেই পথে চলে। বিজেপির দেখানো পথে তাঁরা হাটেন না। উল্লেখ্য, শান্তিপুরের ভোটে শুভেন্দু অধিকারী ধর্মকে হাতিয়ার করেন।

এক নজরে ফলাফল
শান্তিপুর বিধানসভা উপ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী বিজয়ী হয়েছেন। ব্রজবাবু তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপির নিরঞ্জন বিশ্বাসকে 64675 ভোটে পরাজিত করেন। শ্রী গোস্বামী পেয়েছেন 1,12, 087 টি ভোট। ভারতীয় জনতা পার্টির নিরঞ্জন বিশ্বাস পেয়েছেন 47412 ভোট। সিপিআইএমের সৌমেন মাহাতো 39958 টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে, কংগ্রেসের রাজু পাল 2877 টি ভোট পেয়ে চতুর্থস্থানে যায়।