ক্লান্তিকে দায়ী করলেন বুমরাহ! টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিরাট ব্যর্থতার পিছনে রয়েছে কোন কোন কারণ?
পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে পরাজয়ের এক সপ্তাহ পর নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হার। দুটি ম্যাচেই ডুবিয়েছে ব্যাটিং। দুটি ম্যাচ মিলিয়ে জসপ্রীত বুমরাহ ছাড়া আর কোনও বোলার উইকেট পাননি। অথচ ভারতীয় দলের অনেকেই আইপিএলে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছিলেন। সাফল্যও পাচ্ছিলেন। ভারতের ব্যর্থতার জন্য আইপিএলকে দায়ী করা হচ্ছে। রয়েছে আরও বেশ কিছু কারণ।

ক্লান্তি যখন ফ্যাক্টর
নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের কারণ হিসেবে জৈব সুরক্ষা বলয়ের ক্লান্তি অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে এসেছে খোদ জসপ্রীত বুমরাহর কথায়। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে তিনিই দুটি উইকেট পেয়েছেন। বিসিসিআই ক্রিকেটারদের স্বার্থরক্ষায় যারপরনাই চেষ্টা করছে বলে আইন বাঁচানো কথা বললেও বুমরাহ বলেছেন, টানা ৬ মাস ধরে বায়ো বাবলে রয়েছি, টানা খেলে চলেছি। ফলে আমাদের বিশ্রামও দরকার। পরিবারের চেয়ে দূরে থাকা মনের উপর প্রভাব ফেলে। যদিও মাঠে সে ব্যাপারে ভাবা যায় না, কিন্তু সেই প্রভাবও অস্বীকারের উপায় নেই। বায়ো বাবলের ক্লান্তি, মানসিক ক্লান্তি কাটানোর চেষ্টা করেই অতিমারি পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকে খেলতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রীড়াসূচি-সহ অনেক কিছুর উপরই আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

টানা খেলছেন ক্রিকেটাররা
গত বছর আইপিএলের পর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ভারত। তারপর থেকে টানা খেলছে। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ। তারপরই আইপিএল। মে মাসে ইংল্যান্ড সফরে যায় ভারত। তার আগে দেশে নিভৃতবাসে থেকে ইংল্যান্ডে গিয়েও নিভৃতবাসে থাকতে হয়েছিল। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ও টেস্ট সিরিজের মাঝে অবশ্য দিন কুড়ি জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। তারপর ফের আইপিএলের জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ, সেখান থেকে বিশ্বকাপের আসরে। আইপিএলের জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশের আগেও ৬ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টিনে থাকতে হয় ইংল্যান্ড-ফেরত ক্রিকেটারদের। পাকিস্তান ম্যাচের ১০ দিন আগে ছিল আইপিএল ফাইনাল।

আইপিএলের পারফর্মাররা কোথায়?
আইপিএলের পারফরম্যান্সকেও গুরুত্ব দেওয়া হল কোথায়? বিশ্বকাপ শুরুর আগেও দলে পরিবর্তন আনা যেত। আইপিএলে সর্বাধিক উইকেটশিকারী হর্ষল প্যাটেল (১৫ ম্যাচে ৩২ উইকেট) বা আবেশ খানের (১৬ ম্যাচে ২৪ উইকেট) নাম বিবেচিতই হয়নি। অনেকেই বলছেন যুজবেন্দ্র চাহালকে না রাখা ভারতের স্পিন আক্রমণকে দুর্বল করে দিয়েছে। চাহাল আরসিবির হয়ে ১৫ ম্যাচে ১৮ উইকেট নেন। বরুণ চক্রবর্তী ১৭ ম্যাচে ১৮ উইকেট নেন। স্পিনারদের মধ্যে আইপিএলে সর্বাধিক উইকেটশিকারী বরুণ বিশ্বকাপে উইকেট পাননি। তাঁকে বিপজ্জনক মনেও হয়নি। এমনকী বরুণ আদৌ কতটা ফিট তা নিয়েও সংশয় থাকছে। বসিয়ে রাখা হয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও। আইপিএলে সর্বাধিক রান করা বা ফর্মের তুঙ্গে থাকা ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে শুধু ফরর্মের নিরিখেই তো দলে নেওয়া যেত। আইপিএলে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় প্রথম পাঁচে থাকা শিখর ধাওয়ানকেও বিশ্বকাপের দলে রাখা হয়নি। ফলে আইপিএলের পারফরম্যান্সকে যদি ভারতের দল নির্বাচনে গুরুত্ব দেওয়া না হয় তাহলে আইপিএল কি শুধু পয়সা কামানোর জন্য? এমন প্রশ্ন উঠছে। মিডল অর্ডারে তো হার্দিককে বসিয়ে ভেঙ্কটেশ আইয়ারকেও বিশ্বকাপের দলে রাখা যেত। আইপিএলে কেকেআরের আইয়ারও ছিলেন দারুণ ফর্মে।

মিছে আত্মতুষ্টি
আইপিএলে ক্রিকেটারদের দরও তাঁদের মিছে আত্মতুষ্টির বড় কারণ হয়ে বিশ্বকাপে প্রভাব ফেলছে বলে মত অনেকের। গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের যে একাদশ খেলেছে আইপিএলে তাঁদের বেতন যোগ করলে দাঁড়ায় ১০২.৮ কোটি। ঈশান কিষাণ ৬.২ কোটি, লোকেশ রাহুল ১১ কোটি, রোহিত শর্মা ১৫ কোটি, বিরাট কোহলি ১৭ কোটি, ঋষভ পন্থ ১৫ কোটি, হার্দিক পাণ্ডিয়া ১১ কোটি, রবীন্দ্র জাদেজা ৭ কোটি, শার্দুল ঠাকুর ২.৬ কোটি, মহম্মদ শামি ৬.২ কোটি, বরুণ চক্রবর্তী ৪.৮ কোটি, জসপ্রীত বুমরাহ ৭ কোটি টাকা রোজগার করেছেন এ বছরের আইপিএল থেকেই। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, আইপিএলে নিজেদের দর দেখে ভারতীয় অনেক ক্রিকেটাররাই বাস্তবে বিড়াল হলেও নিজেদের বাঘ ভাবতে শুরু করেছেন। আর টি ২০ বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে যে আইপিএল খেলা যে জরুরি নয় সেটাও দেখিয়ে দিচ্ছে অন্য দলগুলি। সর্বোপরি, বিশ্বকাপের আগে তড়িঘড়ি আইপিএল আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।

ভুল সিদ্ধান্ত
বিরাট কোহলি গতকালের ম্যাচের পর বলেছেন, শট নিতে সংশয়ী থাকাতেই রান তুলতে গিয়ে উইকেট দিতে হয়েছে। ভারত সাহসী হয়ে খেলতে পারেনি। বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও প্রথম থেকে এগিয়ে ছিল নিউজিল্যান্ড। তবে ভারতের ট্যাকটিক্স নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হঠাৎ করে কেন ওপেনিং কম্বিনেশন ভেঙে রোহিত শর্মাকে তিনে ঠেলে দেওয়া হল সেটা অবাক করছে প্রাক্তনদের। হঠাৎ করে কোনও ম্যাচে দুমদাম সিদ্ধান্ত নিয়ে সাফল্য আশা করা যে ঠিক নয় সেটা টুইটে লিখেছেন ইরফান পাঠান। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনুশীলন বাতিল করে বিচ ভলিবলে মেতে থাকা বা হ্যালোইন পার্টি করার মতো বিষয়ও সমালোচিত হচ্ছে। রবি শাস্ত্রী-সহ সাপোর্ট স্টাফদের এটাই শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। বিরাটও আর টি ২০ অধিনায়ক থাকছেন না। কর্মক্ষেত্রে নোটিশ পিরিয়ডে থাকা কর্মীর যেমন অবস্থা হয় ভারতের ছন্নছাড়়া দশার জন্য বিদায়ীদের সেই মানসিকতাও ভারতকে ডোবাচ্ছে বলে কটাক্ষ নেটিজেনদের।