বিরাট মিথ্যাচার কেন? অবাক সৌরভ নস্যাৎ করলেন ভারতের ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে বিরাটের দাবি!
টি ২০ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগেই ফের চর্চায় বিরাট কোহলির বড় সিদ্ধান্ত। আচমকাই বিরাট সোশ্যাল মিডিয়ার মারফত জানিয়ে দিয়েছিলেন, টি ২০ বিশ্বকাপের পর দেশকে আর নেতৃত্ব দেবেন না। পরে আইপিএলের ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার ঘোষণাও করেন। তবে নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাট কোহলি যে সঠিক কথা বলছেন না, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল খোদ বিসিসিআই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্যেই।

বিরাটের মিথ্যাচার!
বিরাট কোহলি জাতীয় দলের টি ২০ নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণার সময় দাবি করেছিলেন, অনেক দিন ধরেই তিনি বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় দলের ডিসিশন মেকিং টিমের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইঙ্গিত ছিল বোর্ডকর্তাদের ওয়াকিবহাল থাকারও। কিন্তু সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, বিরাট কোহলির ভারতীয় দলের টি ২০ নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণায় তিনি নিজেই অবাক হয়েছেন। মোটেই বিষয়টি নিয়ে অনেক আগে থেকে কোনও আলোচনা হয়নি। বোর্ডও বিরাটের উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করেনি। ইংল্যান্ড সফরের পরই বিরাট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি সৌরভের। তবে আগে যে তিনিও জানতে পারেননি সেটি বুঝিয়ে দিতে ভোলেননি প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। সৌরভের কথায়, আমিও ৬ বছর ভারতের অধিনায়ক ছিলাম। ফলে বিরাটের উপর চাপ তৈরির প্রশ্নই নেই। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া নিঃসন্দেহে সম্মানের। তবে টানা নেতৃত্ব দিতে দিতে শারীরিক ও মানসিক বার্নআউটের সমস্যাও দেখা দেয়। সে কারণেই বিরাট এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন বলে মত মহারাজের।

কোহলির পাশে
বিরাট কোহলির ব্যাটিং ফর্ম নিয়েও উদ্বিগ্ন নন বিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, বিরাট ১০-১১ বছর ধরে খেলছেন। প্রতি মরশুমই যে সমান ভালো যাবে তা হয় না। কেরিয়ার গ্রাফে ওঠা-নামা থাকবেই। খারাপ সময় কাটিয়ে বিরাটকে যে ফের স্বমহিমায় দেখা যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত সৌরভ। আইপিএলের পর টি ২০ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতীয়দের সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন অনেকে। সৌরভ বলছেন, আইপিএল না হলেও যদি এখানে টি ২০ বিশ্বকাপ খেলতে হতো তাহলেও ভারতের অসুবিধা হতো না। কেন না, এখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ ভারতের মতোই। ভারতের পাশাপাসি টি ২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডকেও কাপ জয়ের দাবিদার বলে মনে করছেন সৌরভ। তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডকে বরাবরই আন্ডারডগ ধরা হয়। কিন্তু বিগত তিন-চার বছর ধরে তারা দারুণ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে চলেছে।

আইসিসি ট্রফির খরা
বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারত এখনও আইসিসি ট্রফি জেতেনি। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর কোনও আইসিসি ট্রফি জেতেনি ভারত। ২০১১ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জয়, তারও আগে ২০০৭ সালে টি ২০ বিশ্বকাপ জয়। আইসিসি ট্রফির খরা টি ২০ বিশ্বকাপের মেটার ব্যাপারে আশাবাদী সৌরভ। তবে তিনি বলেন, টি ২০ ক্রিকেটে যে কেউ জিততে পারে। বড় ম্যাচ জেতাটা জরুরি। ভারত ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলেছে। ২০১৬ সালের টি ২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলেছে। ভারতীয় দল সব সময়ই কাপ জয়ের দাবিদার। তবে চেন্নাই সুপার কিংসও ২০১১ সালের পর ২০১৮ সালে গিয়ে আইপিএল ট্রফি জিতেছে। সিএসকে, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বড় নাম। কিন্তু সেখানেও ট্রফি জয়ের মধ্যে বড় ব্য়বধান থাকে। ফলে ভারতের কাপ জয়ের খরা খুব একটা উদ্বেগের কিছু নয়। তবে সকলের মতোই আশাবাদী সৌরভ বলছেন, ফিঙ্গার ক্রসড!
|
ধোনি যখন মেন্টর
টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের মেন্টর হিসেবে রাখা হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। ধোনি এদিন অনুশীলনে থ্রোডাউন স্পেশালিস্টের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হয়েছেন। সৌরভ বলেন, আমি ও জয় শাহ অনেকদিন ধরেই পরিকল্পনা করছিলাম কী করে ধোনিকে ভারতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত রাখা যায়। ধোনি নিজে এখনও পুরোপুরিভাবে খেলা ছাড়েননি। ভারত তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। সেই অভিজ্ঞতায় ভারতীয় দল যাতে সমৃদ্ধ হয় সে কারণেই এই বিশ্বকাপের জন্য তাঁকে মেন্টর হিসেবে রাখার পরিকল্পনা। হেড কোচ রবি শাস্ত্রী-সহ সাপোর্ট স্টাফরা থাকা সত্ত্বেও ধোনিকে এভাবে মেন্টর হিসেবে নিয়োগ জটিলতা তৈরি করবে না বলেই দাবি সৌরভের। তাঁর কথায়, ধোনি জানেন কোথায় তাঁকে থামতে হবে, কতটুকু কথা বলতে হবে। ফলে কোনও সমস্যাই হবে না। দেশের প্রাক্তনদের যে নানাভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতিতে সৌরভ জুড়তে চান সেই ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন।

দ্রাবিড়কে নিয়ে
ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় হতে চলেছেন বলে যে জল্পনা চলছে তা নিয়ে সৌরভ বলেন, রাহুল দুবাইয়ে এসে ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমির বিষয়ে নানা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমিও সংবাদমাধ্যমে দ্রাবিড়ের কোচ হওয়ার খবর দেখছি। তবে এখনও দ্রাবিড় এনসিএ-র কোচ। দেখতে হবে দ্রাবিড় ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার আবেদন করেন কিনা। ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতিতে এনসিএ-র ভূমিকা অনস্বীকার্য। দ্রাবিড় নিজেও এনসিএ নিয়েই আগ্রহী। তবে তিনি সময় চেয়েছেন নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ফ্যাক্টর
বিশ্বকাপে ভারতকে কখনও হারাতে পারেনি পাকিস্তান। এর অন্যতম কারণ যে দুই দেশের পরিকাঠামোগত ফারাক সেটাই মনে করেন সৌরভ। তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়ে খেলছে। তার আগে পাকিস্তান দারুণ শক্তিশালী দল ছিল। ভারতে ক্রিকেট পরিকাঠামো এখন দারুণ জায়গায় পৌঁছেছে। ক্রিকেটাররা উঠে আসছেন, তাঁরা পারফর্ম করতে মুখিয়ে থাকছেন। তবে ভারতকে আবার পাকিস্তান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হারিয়েছে। আইপিএলে যেমন দারুণভাবে জেতা দল পরের ম্যাচেই হেরে যায়, তেমনই টি ২০ বিশ্বকাপে যেদিন যে ভালো খেলবে তারই জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে বলে মন্তব্য সৌরভের।