প্রশ্নের মুখে বোরিস জনসনের সরকার, কোভিড–১৯ কেস ফের বাড়ছে ব্রিটেনে
করোনা ভাইরাসে জর্জরিত ব্রিটেনে টিকাকরণের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পরই স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার জন্য দীর্ঘ সংঘর্ষ করতে হয়েছে। তাই এই দেশটি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে গণ টিকাকরণের ওপর বেশি জোর দিয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের হার ফের বাড়তে শুরু করায় ইউরোপিয়ান প্রতিবেশী দেশের সরকারকে নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে।

বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
গত দু'সপ্তাহে করোনার নতুন কেসের সংখ্যা দৈনিক ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করেছে এবং সোমবার তা ৫০ হাজারে পৌঁছেছে। জুলাইতে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট প্রকোপের পর সোমবারের এই সংখ্যা সর্বোচ্চ বলে জানা গিয়েছে। গরমের সময়ের পর থেকে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা মোট মৃত্যুর সংখ্যাকে নিয়ে গিয়েছে ১৩৮,০০০। মৃত্যুর ক্ষেত্রে ইউরোপে রাশিয়ার পর ব্রিটেন দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জিম নেইসমিথ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটা খুবই দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটেনে এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ ভাইরাসের মাত্রা বেশি, শুধুমাত্র করোনা পজিটিভ টেস্টই নয়, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃ্ত্যুও যথেষ্ট বেশি।'

ইউরোপের অন্যান্য দেশের করোনা পরিস্থিতি
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মধ্যে ফ্রান্সে দৈনিক চার হাজার করে এবং জার্মানিতে দৈনিক দশ হাজার করে করোনা কেস রেকর্ড হচ্ছে। ওই দুই দেশে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ ও ৬০টি করে হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই দেশের করোনা পরিসংখ্যান নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।

চাপে আছে স্বাস্থ্য পরিষেবা
করোনার তৃতীয় ওয়েভ আসার আশঙ্কার মাঝেই বিজ্ঞানীরা তাঁদের সুর চড়াতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা শরৎকাল ও শীতকালে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সংক্রমণের কারণে এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লে তা সামলানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়বে। সোমবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সবসময়ই জানতাম যে আসন্ন মাসগুলি চ্যালেঞ্জের হবে।' তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই বিভিন্ন দেশ সম্ভাব্যভাবে তাদের টিকা কার্যক্রমের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে, তাই তুলনা করা এবং বৈপরীত্য করা কঠিন। তবে জীবন এবং জীবিকার সুরক্ষার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ'।

স্কুল শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়লজির অধ্যাপক সিমন ক্লার্ক জানিয়েছেন যে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার স্পষ্টতই নতুন সংক্রমণের পেছনে দায়ী। ব্রিটেনে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে টিকাকরণের হার যথেষ্ট কম এবং মাস্ক বাধ্যতামূলক নয়। যদিও এই মাসের গোড়াতেই সরকার ঘোষণা করেছে যে করোনা কেস যদি বৃদ্ধি পায় তবে মাস্ক পরার চল ফের চালু করা হবে। ক্লার্ক এ প্রসঙ্গে জানান যে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবান শিশুরা এই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম, তেমনি অভিভাবক, দাদু-ঠাকুমা সহ তাঁদের যত্ন নেওয়ার মানুষ ও শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা টিকা নেওয়া নেই বা স্বাস্থ্যের অবস্থা ঠিক নয় এমন ব্যক্তিদের সংক্রমণ বৃদ্ধি শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

ব্রিটেনে বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা
গভীর এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে ব্রিটেনে ফ্রান্সের তুলনায় দ্বিগুণ ও জার্মনির চেয়ে ছয়গুণ বেশি করোনা টেস্ট করা হয়। লক্ষ্য এও করা গিয়েছে যে ব্রিটেনের তুলনায় জার্মানি ও ফ্রান্সের হাসপাতালের আইসিইউতে বেশি মানুষ ভর্তি হয়েছে। যদিও হাসপাতালে ভর্তির সামগ্রিক সংখ্যা ব্রিটেন এবং ফ্রান্সে প্রায় সাত হাজারের পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু ফ্রান্সের দৈনিক হাসপাতালে ভর্তির হার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে কমে গিয়ে প্রায় ১৫০ জনে এসে থেমেছে, অন্যদিকে ব্রিটেনের গ্রীষ্মকাল থেকে ৫০০-এর নিচে নামেনি এবং এখন তা ৯০০-এরও বেশি হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডে সংক্রমণের হার সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেড়েছে।

ব্রিটেনে জুলাই থেকেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল
প্রসঙ্গত, এ বছরের জুলাইতে ব্রিটেনে কোভিড নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। যার মধ্যে সামাজিক দুরত্ব ও বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা ছিল। যদিও অনেক পরিবহন পরিচালকরা এখনও মাস্ক পরা ও সামাজিক দুরত্বের নিয়ম মেনে চলছে। ইংল্যান্ডে রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল ও নাইট ক্লাবের মতো ভিড় রয়েছে এমন জায়গায় ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক নয়। তবে ওয়েলস ও স্কটল্যান্ড নিজস্ব স্বাস্থ্য বিধি চালু করেছে।

টিকাকরণের কার্যকারিতা
ব্রিটেনে প্রধানত টিকাকরণের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হয়, যা ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট থেকে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কম কার্যকর। এই ভ্যাকসিনের তুলনায় বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে ইউরোপে ব্যবহৃত ফাইজার-বায়োটেক ও মর্ডানা প্রিডোমিনেন্টলি এমআরএনএ ভ্যাকসিন। ব্রিটন অনেক আগেই তাদের টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করলেও ইজরায়েলের অভিজ্ঞতার মতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখন হ্রাস পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত বুস্টার শট পেয়েছে মাত্র ৪১ জন টিকা নেওয়া ব্যক্তি। যার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
২৩১ দিনে দেশে সবচেয়ে কম রয়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, দুর্গাপুজো মিটতেই গ্রাফ কোনদিকে