বাবা-মা অসম্মানিত হয়েছেন, ইরাদেবীর সম্পত্তি নিতে অস্বীকার ‘নমিনি’ বুদ্ধদেব-কন্যার
১২ বছরের পেনশন জটিলতা ১২ দিনেই কাটিয়ে ইরা বসুকে স্বস্তি দিয়েছে তৃণমূল সরকার। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা ইরা বসুর পেনশনের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্রে বুদ্ধদেব-কন্যা সুচেতনাকে নমিনি করা হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধদেব কন্যা সুচেতনা ভট্টাচার্য নমিনি থাকতে চান না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

প্রাক্তন শিক্ষিকা জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ভবঘুরে জীবন বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর পরিচয় প্রকাশ্য আসার পর ইরাদেবীর পেনশন ও গ্র্যাচুইটির বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। ইরা দেবী পেনশন ও গ্র্যাচুইটিতে নমিনি করেছিলেন বোন বুদ্ধদেব-মীরার কন্যা সুচেতনাকে। কিন্তু সুচেতনা মাসির সম্পত্তি নিয়ে অস্বীকার করেছেন।
সুচেতনা জানান, ইরা বসুর জন্য তাঁর বাবা-মাকে অসম্মানিত হতে হচ্ছে। তাই আমি ওঁনার সম্পত্তি নিতে পারব না। উনি যেন কোনও কিছুতেই আমাকে না জড়ান। কিন্তু তাঁর এত ক্ষোভের কারণ কী? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা হয়ে ইরাদেবী পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছেন। ফলে তাঁদের রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। বাবা-মায়ের অসম্মানের কারণেই তিনি ইরাদেবীর কোনও সম্পত্তি গ্রহণ করতে পারবেন না।
সুতেনতার মাসি ইরা বসু খড়দহের প্রিয়নাথ হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। ২০০৯ সালে ১ মে অবসর গ্রহণের পর প্রাপ্য পেনশন থেকে বঞ্চিত হয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন নিজের জীবনে। কারও সহায়তা না নিয়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ভবঘুরে জীবনে। বাড়ি-ঘর সবই ছিল। সব ছেড়ে তিনি রাস্তাকেই বেছে নিয়েছিলেন। সেই জীবন থেকে মুক্তি পেলেন নিজের প্রাপ্য পেনশন লাভের পর।
১২ বছর আটকে থাকা পেনশন মাত্র ১২ দিনেই মঞ্জুর হয়েছে ইরাদেবীর। ২০০৯ সালের ১ মে থেকে তিনি বকেয়া পেনশন পাবেন। সেই টাকাও তাঁকে মিটিয়ে দেওয়া হবে শীঘ্রই। রাজ্যের অর্থ দফতর ইরাদেবীর প্রাপ্য পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা অনুমোদন দেয়। আপাতত মাসে ১৩ হাজার ৯৮৫ টাকা করে পেনশন পাবেন ইরা দেবী।
সম্প্রতি ডানলপের কাছে ফুটপাতে ঘুরতে দেখা যায় বুদ্ধদেব-শ্যালিকা ইরা বসুকে। এক সময় তিনি ছিলেন শিক্ষিকা। পড়াতেন জীবন বিজ্ঞান। জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষয়িত্রী একদিন তাঁর নিজের জীবনেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, কংগ্রেসি আমলের শেষে চাকরি পেয়েছিলাম। বাম আমলের শেষে অবসর নিই। কিন্তু অবসরের পর পেনশন পাইনি। তবু আমাকে বলা হত আমি বিশেষ কারও সুবিধায় সবকিছু পেয়েছি। আনন্দের দিনে আর সেসব মনে করতে চাই না। বিশেষ করে ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা এত তাড়াতাড়ি তাঁর সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। তাঁর এই বক্তব্যের পরই সুচেতনা জানিয়ে দেন, ইরা বসুর ব্যবহারে আমার বাবা-মা খুবই ব্যথিত। আমাকে যেন তাঁর কোনও কাগজপত্রে অংশীদার না করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করবেন না।
