বড় সংখ্যায় শিশুরা আক্রান্ত হতে চলেছে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে তৈরি করা কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিশুদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশেষ করে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, ভেন্টিলেটর, অ্যাম্বুল্যান্স-সহ যাবতীয় জিনিস তৈরি রাখতে হবেষ কেননা শিশুরাই বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হতে চলেছে। এই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে।
কো-মর্বিডিটিস যুক্ত শিশুদের দিকে বাড়তি নজর
রিপোর্টে কো-মর্বিটিডিট যুক্ত শিশু এবং যেসব শিশুর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সংস্থার করা পূর্বাভাসেও তৃতীয় তরঙ্গের কথা বলা হয়েছে, তবে তার সবই ছিল অনুমান।
কমিটির বৈঠকে শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশি করে আলোচনা করা হয়, কেননা এখনও তাদের ভ্যাকসিন হয়নি। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন, আক্রান্ত হলেও, শিশুদের অবস্থা সেরকম খারাপ কিছু হবে না। কেননা তারা ভাইরাসকে ছড়াতে সাহায্য করে। আবার বেশ কিছু অনুমানে বলা হয়েছে, তৃতীয় তরঙ্গ দ্বিতীয়ের মতো ভয়ানক হয়ে উঠবে না।
শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকদেরও থাকতে দিতে হবে হাসপাতালে
কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে বাড়িতে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার জন্য এমনভাবে বন্দোবস্ত করতে হবে, যাতে তারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকদের কেউ যাতে তাদের সঙ্গে থাকতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু চিকিৎসকের অভাব নিয়ে বেশি চিন্তিত। কেননা সেখানে চিকিৎসকের অভাব প্রায় ৮২%। পরিস্থিতি এখনই খারাপ। আর করোনা নির্দেশিকা না মেনে চলার কারণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণের কাজ সেরকম না এগনোয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
দ্বিতীয় তরঙ্গেও হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল শিশুদের
কমিটির আলোচনায় উঠে এসেছে দ্বিতীয় তরঙ্গেও শিশুদের আক্রান্ত হওয়া কথা। দ্বিতীয় তরঙ্গে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল কোমর্বিডিটিস এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে। করোনা পরবর্তী সময়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সময়েও সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
গত দুটি তরঙ্গ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃতীয় তরঙ্গের জন্য তৈরি থাকতে প্রস্তুতি নিয়ে বলা হয়েছে রিপোর্টে। রাজ্যগুলি যাতে করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, আইসিইউ, শিশুদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স, ওযুধের ব্যবস্থা করে তার জন্য জোর দেওয়া হয়েছে।
শুরু হয়ে গিয়েছে তৃতীয় তরঙ্গ
রিপোর্টে বলা হয়েছে তৃতীয় তরঙ্গ দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে। কেননা আর ভ্যালু অর্থাৎ করোনার রিপ্রোডাকশন রেট জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেই ০.৯ থেকে ১ হয়ে গিয়েছে। কেরল, যেখানে দেশের মধ্যে সংক্রমণ সব থেকে বেশি, সেখানে এই আর ভ্যালু ১.১। যা তৃতীয় তরঙ্গ শুরুর ইঙ্গিত করছে। কোনও ভাবেই এই পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা যাবে না বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
কমিটির বিশেষজ্ঞরা হলেন, সিএসআইআর-আইজিআইবি-এর ডিরেক্টর অনুরাগ আগরওয়াল, এইমসের প্রাক্তন ডিরেক্টপ এমসি মিশ্র, সিএমসির ভেলোরের অধ্যাপক এবং ইন্ডিয়ান পেডিয়েট্রিশিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট গগণদীপ কাং, স্টেট মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান একে পান্ডে।
এদিন দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০৭২। যা গত ১৬০ দিনে সব থেকে কম। গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮৯ জনের। ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছে ৪৪, ১৫৭ জন। কেরলে সব থেকে বেসি ১৩,৯৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র সেখানে আক্রান্তের সংখ্যাটা ৯ হাজারের আশপাশে। দিল্লিতে গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫১।
সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৩৩,৯২৪ জন। শতাংশের নিরিখে যা ১.০৩%। গত ২০২০-র মার্চের পর থেকে সব থেকে কম। দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪,৩৪, ৭৫৬ জনের। দেশে সুস্থতার হার ৯৭.৬৩% এবং মৃত্যুর হার ১.৩৪%। দেশে এখনও পর্যন্ত ৫৮.২৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।