তালিবান বনাম পঞ্জশির
তালিবানের তরফে মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ আফগান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে , তাঁরা আফগানিস্তানের পাঞ্জশির এলাকা ঘিরে ফেলেছেন। উল্লেখ্য, এই পাঞ্জশিরে নর্দান অ্যালায়েন্সের হয়ে বহু বছর আগে আহমেদ মাসুদের বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয় তালিবানের বিরুদ্ধে। এর পর তাঁর ছেলে আহমেদ শাহ মাসুদ, আমরুললাহ সালেহ সহ প্রাক্তন আফগান প্রশাসনের একাধিক কর্তা রয়েছেন পাঞ্জশিরে। সেখানে ৩০০ তালিবানি জঙ্গিকে এই মাসুদ বাহিনী নিকেশ করেছে বলে খবর রয়েছে। সেখানে প্রবেশের মুখেই তালিবান কনভয়ে পর পর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই সংগঠনের আগ্রাসনকে পাঞ্জশির জবাব দিয়েছে বলে খবর।
কোন চালে মাত গিয়েছে তালিবান!
তালিবানের কাছে পেশীশক্তি থাকলেও, যুদ্ধবিদ্যা তাদের কাছে সেভাবে রপ্ত নয়। যেখানে বহু সামরিক অস্ত্র নিয়ে তালিবান সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, সেখানে গেরিলা যুদ্ধে তালিবানকে মাত দিয়ে ময়দান জিতে নিচ্ছে তালিবান বিরোধী নর্দান অ্যালায়েন্স ফোর্স। পাঞ্জশির নদীর তীরে স্বপ্নসুন্দর এলাকা এই পাঞ্জশিরের উপত্যকা। হিন্দুকুশ পাহাড়ের কোলের এই এলাকা ১৯৯০ সাল থেকে তালিবানের বিরুদ্ধে লড়েও, তালিবানের হাতে কখনও ধরা দেয়নি। এখানে প্রবেশ করতে পারেনি সোভিয়েতের মতো বিদেশী শক্তিও। যেখানে পাশতুন উপজাতি নিয়ে তালিবান গঠিত, সেখানে পাঞ্জশিরে রয়েছেন বহু তাজাক উপজাতির বাসিন্দা। আর উপজাতিগত যুদ্ধ থেকেই এই এলাকায় কার্যত তালিবান প্রবেশ নিষিদ্ধ।
পান্না পাথরের খনি কীভাবে শক্তি যুগিয়েছে নর্দান অ্যালায়েন্সকে?
পাঞ্জশির জুড়ে বহুমূ্ল্য দামী পান্না পাওয়া যায়। যেখানে সারা দেশে তালিবানি শাসন আর্থিক আনাগোনা নিজের হাতে রেখেছে, সেখানে সেই আর্থিকভাব সবল তালিবানকে তছনছ করতে বহু অর্থের প্রয়োজন যে বিরোধীদের হবে, তা বলাই বাহুল্য। সেই জায়গা থেকে পাঞ্জশিরের নর্দান অ্যালায়েন্সকে আর্থিক শক্তি যুগিয়েছে এলাকার পান্না পাথর। পান্না বিক্রি করে এখানের বাসিন্দারা যে অর্থ পেতেন, তা তালিবান বিরোধী যুদ্ধে কাজে লাগাতে শুরু করেন। এইভাবেই তালিবানের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে আর্থিক জোর।
পিছনে গর্বের ইতিহাস , সামনে লড়াইয়ের হাতছানি
২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে যখন ন্যাটো বাহিনী ছিল, তখন পাঞ্জশির সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা ছিল। ১৯৫৩ সালে এই এলাকায় জন্মানো আহমেদ শাহ মাসুদ ধীরে ধীরে এলাকায় তালিবানের দাপট বাড়তেই তা রোধ করেন। হয়ে ওঠেন তালিবান বিরোধী প্রধান মুখ। এমনকি সেদেশে কাবুলে যখন কমিউনিস্ট সরকার গড়ে সোভিয়েত ,তখনও বিদেশী শক্তির বিরোধীতা করে পাঞ্জশিরে সোভিয়েত রাজ চলতে দেননি মাসুদ। পরে তাঁর লড়াই নয়ের দশকে শুরু হয় তালিবানের বিরুদ্ধে যার ফলাফলে আল কায়দার হাতে মৃত্যু হয় এই দুর্দমনীয় নেতার। তবে তাঁর ছেলে আহমেদ মাসুদ এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের 'মসিহা'। পূর্বের পাঞ্জশিরের গর্বের ইতিহাস গায়ে মেখে আপাতত তিনি লড়তে চলেছেন আফগানিস্তানের বুকে তালিবানের আরও এক নয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে।
বাবার পথে আহমেদ
বাবা আহমেদ মাসুদের যুদ্ধনীতিকে সম্বল করে আমরুল্লাহ সালেহর গুপ্তচরবৃত্তির প্রাক্তন অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়ে আহমেদ শাহ মাসুদ নর্দান অ্যালায়েন্সকে আরও পোক্ত করে চলেছেন তালিবানের বিরুদ্ধে। এদিকে, তাঁর সঙ্গে হাতে হাত মেলাতে যুদ্ধের বড় বড় ট্যাঙ্কার নিয়ে হাজির হচ্ছে আফগান সেনা। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের নর্দান অ্যালায়েন্সে আহমেদ মাসুদ ও কেয়ারটেকার ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহের মিলিত উদ্যোগে রীতিমতো তৎপর আফগানিস্তানের কালিবান বিরোধী সংঘাত।