বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন
ত্রিপুরার প্রাক্তন স্পিকার জিতেন সরকার বর্তমানে বিজেপি নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি বাংলার রাজনীতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘ দিনের রাজনীতিবিদ এবার ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁর নাম নিয়েছেন, আর জিতেনবাবু নিজেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
বিজেপি সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সহমত নন জিতেন
জিতেনবাবু ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকার ছিলেন। তখন তিনি সিপিএমের সঙ্গে ছিলেন। বর্তমানে বিজেপির নেতা বলে পরিচিত, জিতেনবাবু বুঝতে পারছেন তৃণমূলের ত্রিপুরা দখলের পরিকল্পনা। বিজেপি নেতা হলেও তিনি রাজ্যে তৃণমূলকে আটকানোর তালিবানি কায়দাকে সমর্থন করেন না। তিনি বিজেপি সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সহমত নন।
তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপির কায়দার সমালোচনা
বাংলায় বিরাট জয় হাসিলের পর তৃণমূল ত্রিপুরা দখলে পাখির চোখ করেছেন। সেইমতো বাংলার তৃণমূল নেতারা ত্রিপুরায় পাড়ি জমিয়েছেন। আর তাঁদের আটকাতে বিজেপি তালিবানি কায়দায় আক্রমণ করছে, গাড়ি ভাঙচুর বা হোটেলে থাকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর মতে, মানুষ এই আচরণের নিন্দা করবে।
মানুষ কখনও এই সব ভালো চোখে নেয় না
জিতেন সরকার বলেন, মানুষ কখনও এই সব ভালো চোখে নেয় না। যাঁরা এসব নোংরা আক্রমণ করছেন তাঁদের অবিলম্বে বিরত হওয়া উচিত। বামেরাও একটা সময় এমন আচরণ কররেছিল। মানুষ তা মেনে নেয়নি। বিজেপি এখন শুরু করেছে। বিজেপিকে বুঝতে হবে, সুযোগ পেলে নিজেকে রক্ষা করতে সবাই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
গণপ্রতিরোধ হলেই মুশকিলে পড়বে বিজেপি
জিতেনবাবু বলেন, অনেকবার বলেছি এমনটা না করতে। তাহলে গণপ্রতিরোধ শুরু হবে। গণপ্রতিরোধ হলেই মুশকিলে পড়বে বিজেপি। একথা আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, জেলা সভাপতিকে বলেছি। বলেছি, এতদিনের রুলিং পার্টিকে মানুষ বিদায় জানিয়ে দিল। তাই গণ প্রতিরোধ হলে বিজেপিকে বিদায় জানাতেও তারা দু-বার ভাববে না।
বিজেপির প্রতি তাঁর রুষ্ট মনোভাবেই জল্পনা
জিতেনবাবু যে দলের প্রতি বিরক্ত, তা তার কথায় স্পষ্ট। বিজেপির প্রতি তাঁর রুষ্ট মনোভাবেই জল্পনা বেড়েছে যে, তিনি তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে গিয়েছেন। ৬০ বছর ধরে ত্রিপুরার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জিতেন সরকার এখন পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেন কি না, সেটাই দেখার। তৃণমূল দাবি করতে শুরু করেছে, জিতেন সরকার তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
সুবল ভৌমিকের যোগদানের পর তৃণমূলের টার্গেট
ত্রিপুরাকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়ে পড়ার পর তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে সুবল ভৌমিক-সহ অনেক কংগ্রেস নেতা যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এবার তৃণমূলের টার্গেট পাঁচবারের বিধায়ক তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন অধ্যক্ষ জিতেন সরকার। মমতার মন্তব্যে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে জিতেন সরকারের দলবদল নিয়ে।
তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন জিতেন!
মমতা নিজের মুখেই নাম নেন জিতেন সরকারের। তিনি বলেনস ত্রিপুরার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা পাঁচবারের বিধায়ক জিতেন সরকার বেশ কিছু অনুগামীকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। মমতার এই মন্তব্যই জল্পনার পারদ চড়িয়ে দেয়। তারপর জিতেন সরকারও দলবদলের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেননি।
২০০৮ থেকে ২০২১- জিতেন সরকারের দলবদল
জিতেন সরকার সিপিএম ছাড়েন ২০০৮ সালর। তারপর তিনি অনুগামীদের নিয়ে যোগদান করেন কংগ্রেসে। ২০১০ সালে কংগ্রেস যোগদানের পর ২০১৬ সালে ফের তিনি ফিরে যান সিপিএমে। কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তাঁর সিপিএমে ঘরওয়াপসি। পরের বছরই অর্থাৎ ২০১৭ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। এবার তাঁর তৃণমূলে যোগদান সম্ভাবনা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে।
তৃণমূলের পদচারণায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপিও
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে ত্রিপুরায় জয়ের চ্যালেঞ্জ এবং জিতেন সরকারের মতো সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যোগদান-জল্পনার পর রীতিমথো সাড়া পড়ে গিয়েছে ত্রিপুরা রাজনীতিকর অলিন্দে। তৃণমূল ত্রিপুরায় বাংলার মতোই পরিষেদা দিতে চায়। তাই বাংলা-মডেলে ত্রিপুরা-বিজয় সারতে চাইছে তৃণমূল। নতুন করে সংগঠন তৈরি করে, সেই সংগঠনে জোয়ার এনে ২০২৩ নির্বাচনে বিজেপিকে উৎখাত করাই লক্ষ্য তৃণমূলের। সেই লক্ষ্য নিয়েই তৃণমূল এগোচ্ছে, তৃণমূলের অগ্রগতিতে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপিও।