বিপ্লব ও সুদীপের বরাবর দুটি ভিন্ন মেরুতে অবস্থান
ত্রিপুরায় বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন শাসক দলের বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। তিনি বিজেপির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলেই পরিচিত ত্রিপুরার রাজনীতিতে। বিপ্লব ও সুদীপ বরাবর দুটি ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করেছেন। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরির পরীক্ষা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন সুদীপ।
পরীক্ষায় স্থানীয়দের অধিকার সুনিশ্চিত করতে
সুদীপ রায় বর্মন ফেসবুক পোস্ট করে বার্তা দেন, সরকারি চাকরির পরীক্ষার স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। অস্বচ্ছ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান। এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তাও দেন তিনি। তিনি লেখেন, পরীক্ষায় স্থানীয়দের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।
সুদীপ রায় বর্মনের ফেসবুক পোস্টে তিন তির
সুদীপ রায় বর্মন লেখেন- সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ত্রিপুরা জয়েন্ট রিক্রুটমেন্ট বোর্ড সম্প্রতি গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে যে উদ্যোগ নিয়েছে তার বিধিমালা নিয়ে পরীক্ষার্থী মহলে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষার স্বচ্ছতাও প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষা হিসেবে বাংলা ও ককবরক বাধ্যতামূলক হওয়া যুক্তিসঙ্গত। তবে কোনভাবেই ইংরেজি স্থানীয় ভাষার মর্যাদা পেতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে সিলেবাস নির্দিষ্ট করা থাকলেও সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সিলেবাসের কোন পরিসীমা নির্দিষ্ট করা নেই। ত্রিপুরা বিষয়ক কোন কিছুই নির্ধারিত নেই যা নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক। তৃতীয়ত, এই সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অধিকার নিশ্চিত করতে পিআরসি বাধ্যতামূলক হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে যা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। সবশেষে, বিশেষ করে গ্রুপ ডি চাকুরির ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যে কখনোই বহিঃরাজ্যের প্রার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না এবং লিখিত পরীক্ষাও কোনদিন হয়নি। কারণ, এই অংশের চাকরিপ্রার্থীরা অধিকাংশই সার্বিকভাবে দুর্বল হয়। কিন্তু এবারই এর ব্যতিক্রম হল। তবে কার স্বার্থে কেন এমনটা হল, জানার অধিকার রাজ্যবাসীর রয়েছে। এই সার্বিক প্রেক্ষাপটে আমি উল্লেখিত পরীক্ষা কর্মসূচি বাতিল করার জন্য ফের আরেকবার সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি এবং গোটা বিষটির তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কটাক্ষের সুরে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের গলায়
তৃণমূল এই বিষয়ে বিজেপিকে নিশানা করতে শুরু করেছে। কটাক্ষের সুরে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, সরকারি চাকরির পরীক্ষা নিয়ে বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের পোস্ট। কী অবস্থা। মুখ্যমন্ত্রীকে জরুরি ভিত্তিতে বলার সুযোগ দলের সিনিয়র বিধায়কদের নেই। পোস্ট করতে হয় ফেসবুকে।
সুদীপের ফেসবুক পোস্ট রাজ্য রাজনীতিতে অর্থবহ
বিগত কয়েকদিন ধরেই ত্রিপুরা রাজনীতিতে বিপ্লব দেবকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে সুদীপ রায় বর্মন বা তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। তাতে তৃণমূলকে রোখার কাজটা সহজ হবে বলে মনে করছিল রাজনৈতিক মহল। সেক্ষেত্রে বিজেপিতে ভাঙন রোখাও সলৃহজ হত। কিন্তু বিপ্লবের দিল্লি সফরের পর বদলে যায় পরিস্থিতি। তারপর সুদীপের এই পোস্ট রাজ্য রাজনীতিতে অর্থবহ।
সুদীপ রায় বর্মন হয়ে যান জল্পনার আর এক নাম
কংগ্রেস-তৃণমূলত্যাগী সুদীপদের নিয়েই শক্তিশালী হয়েছিল বিজেপি। সিপিএমকে হটিয়ে ২০১৮-য় ক্ষমতায় এসেছি বিজেপি। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সুদীপ রায় বর্মন ও তাঁর অনুগামীদের গুরুত্ব কমে গিয়েছিল বিজেপিতে। তারপর থেকেই দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে। হালে মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফিরে আসা এবং তৃণমূলের ত্রিপুরার মাটিতে পা দেওয়ার পরই সুদীপ রায় বর্মন হয়ে যান জল্পনার আর এক নাম।