বিয়েতে বরকে সাজতে হয় কনে, হবু স্ত্রী পরেন পুরুষের পোশাক! যোদ্ধা রুদ্রমাদেবীর পরিবারে কেন প্রচলিত এমন রীতি

বিয়ে বাড়িতে বর আসা মানেই কনের বাড়িতে হই হই লেগে যায়। বরের গাড়ি সামনে জমে যায় ভিড়। এমন অবস্থায় বরের প্রথম ঝলক দেখতে হুড়মুড়িয়ে পড়েন অনেকে। অন্যদিকে, কনেটি বিয়ের মাঝে সাজ সজ্জায় নিজেকে কতটা অপরূপে করে রেখেছেন, তা দেখার হিড়িকও থাকে। অনেকেই দেখতে চান কনের গলায় গহনার কতটা রয়েছে। কতটা সোনায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে কনেকে! তবে অন্ধ্রপ্রদেশের গান্নামানি পরিবারে এমন ঘটনা ঘটে না। কারণ সেখানে বর ও কনের রূপের বদল হয়।

গান্নামানি পরিবার ও বিয়ের রীতি

অন্ধ্রপ্রদেশের গন্নমানি পদবী যাঁদের রয়েছে সেই পরিবারে একটি বিশেষ রীতি পালিত হয়। পরিবারের পুরুষ সদস্য বিয়ের দিন শাড়ি পরেন, আর কনে পরেন পুরুষের পোশাক সাদা শার্ট ও প্যান্ট। শুনে অবাক হলেও, এটাই সত্যি। সেখানে রীতিমতো বিয়েতে পুরুষরা যেমন সাজেন , সেই সাজ ধারণ করেন বিয়ের কোনে। আর পুরুষকে পরতে হয় 'পট্টু শাড়ি'।

চোখে কালো চশমা, পরে শার্ট পরে কনে যান বিয়ের মঞ্চে!

আর চার পাঁচটা বিয়েতে কনে রীতিমতো লজ্জা রাঙা হয়ে থাকেন। আর আর লাল চেলিতে সেজে উঠে সোনার গয়না গায়ে নিয়ে তাঁরা বিয়ের মঞ্চে আসেন। কনের রূপের ঝলক দেখতে তখন অনেকেই উদগ্রীব থাকেন। তবে অন্ধ্রপ্রদেশের যোদ্ধা পরিবারে, বিয়ের কনে রীতিমতো চোখে কালো চশমা ও পরনে শার্ট ও প্যান্ট পরে আসেন। চুলের স্টাইলও থাকে পুরুষদের মতো। ফলে তাঁকে দেখে কার্যত চেনা দায় হয়।

বরের সাজ

গন্নামানি পরিবারে পুরুষরা বিয়ের দিন পট্টু শাড়ির সঙ্গে প্রচুর গহনা পরেন। গর্বের সঙ্গে পরিবারের ছেলেরা এমন সাজে সাজিয়ে নেন নিজেকে। সঙ্গে থাকে ওরনা । চারিদিকে ফুলের সাজ দিয়ে সাজানো থাকে বিয়ের মণ্ডপ। তাতেই গিয়ে বসেন এই পুরুষরা। এমন বেশে বর ও কনেকে দেখতে তখন হাজারো মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। কারণ এমন বিয়ে সচরাচর দেখা যায় না দেশের কোনও প্রান্তে।

কুলদেবতাকে পুজো দিয়ে বিয়েতে বলি-দান করা হয়

পরিবারের পরম্পরা মেনে এই বিয়েতে কুলদেবতাকে পুজো দিয়ে সম্পন্ন হয় বিয়ে। আর পুজোর সময় বিয়েতে একটি বলি দেওয়া হয়। বলি দেওয়া হয় একটি ভেড়াকে। সেই বলিতে কপলদেবতীকে সন্তুষ্ট করার রীতি প্রচলিত। তারপরই রীতিমতো সানাই বাদ্যি বাজিয়ে হয় বিয়ের পর্ব।

রুদ্রমাদেবীর গনন্নমানি পরিবারে লুকিয়ে কোন ইতিহাস?

দাক্ষিণাত্যে এককালে যোদ্ধা রুদ্রমাদেবীর সাহসের কাহিনি লোক মুখে ঘুরে বেড়াত। শোনা যায়, ১২৬৩ থেকে ১২৮৯ পর্যন্ত রুদ্রমাদেবী দাক্ষিণাত্যে নিজের তেজকে প্রতিফলিত করেন। কাকতীয় বংশের মেয়ে রুদ্রমাদেবী গন্নমানি পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। চালুক্য পরিবারের মেয়ে রুদ্রমা। বাবা গণপতিদেবার হাত ধরেই রাজত্বে হাতেখরি রুদ্রমার। ইতিহাস গড়ে বাবার সঙ্গেই মেয়ে রুদ্মা শাসন করেন সাম্রাজ্য। জমিহারাদের জমি পাইয়ে দেওয়ার যুদ্ধে ভারতীয় ইউতিহাসে রুদ্রমাদেবীর নাম উল্লিখিত রয়েছে। সাম্রাজ্য দখলের সময় তিনি বীর যদাবদের পরাজিত করেন বলেও উল্লিখিত রয়েছে ইতিহাসে। তিনি নিজে পুরুষদের পোশাকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে নামতেন। তবে কেন তিনি পুরুষদের পোশাক বেছে নেন তারও এক নেপথ্য কাহিনি রয়েছে। যা থেকে এই পরিবারে বিয়ের আজব রীতি প্রচলিত। শোনা যায়, বীরভদ্রকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। এই বিয়ে একেবার রাজনৈতিক বিয়ে ছিল। অম্বদেব যুদ্ধে পরাজিত হন তিনি।

এমন বিয়ের রীতির নেপথ্য কাহিনি

বহু যুদ্ধে রুদ্রমাদেবীর সেনা পুরুষদের হারায়। তখন রুদ্রমাদেবী নিজে মহিলাদের নিয়ে যুদ্ধবাহিনী তৈরি করেন। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে মহিলারা শাড়িতে লড়াই করতে অলুবিধা বোধ করেন, অন্যদিকে, শত্রুপক্ষও মহিলা যোদ্ধা দেখে হাসি ঠাট্টা , কটাক্ষ করতে পারেন, এই ভেবেই রুদ্রমাদেবী পুরুষের পোশাক দেন নারীদের। আর তা পরেই সমরে জয়লাভ করেন তাঁরা। তারপর থেকেই রুদ্রমা দেবীর পরিবারে পুরুষের পোশাক পরে বিয়ের রীতি প্রচলিত।

(সাম্প্রতিক এক দক্ষিণী ছবিতে রুদ্রমাদেবীর জীবনের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। মূল ভঊমিকায় ছিলেন অনুষ্কা শেট্টি।)

(প্রতীকী ছবি)


খবরের ডেইলি ডোজ, কলকাতা, বাংলা, দেশ-বিদেশ, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা, জ্যোতিষ - সব আপডেট দেখুন বাংলায়। ডাউনলোড Bengali Oneindia

More ANDHRA PRADESH News  

Read more about:
English summary
Weird News in Bengali : a Spcecial Wedding Tradition in Andhra Pradesh, where Groom dresses up as bride , and vice versa.