টেস্টে জিমি
১৮ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে এখনও অবধি জেমস অ্যান্ডারসন টেস্ট খেলেছেন ১৬৪টি। ৩০৫টি ইনিংসে বল করেছেন ৫৮৮১ ওভার। যার মধ্যে ১৫১৬টি মেডেন ওভার। ১৬,৬৩৮ রানের বিনিময়ে পেয়েছেন ৬২৬টি উইকেট। গড় ২৬.৫৭, ইকনমি ২.৮২। মুথাইয়া মুরলীধরন ও শেন ওয়ার্নের পরই তিনি রয়েছে সর্বাধিক উইকেটশিকারীর তালিকায়। পেসারদের মধ্যে তাঁরই সর্বাধিক উইকেট। ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ৩১বার, ১০ উকেট ৩ বার। ইনিংসে সেরা বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪২ রানে ৭ উইকেট। ম্যাচে সেরা বোলিং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১১ উইকেট ৭১ রানের বিনিময়ে। চলতি বছর ৮টি টেস্টে তাঁর উইকেটের সংখ্যা ২৬। ইনিংসে পাঁচ উইকেট দুবার, যার একটি সদ্যসমাপ্ত লর্ডস টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে।
ভারতের বিরুদ্ধে অ্যান্ডারসন
ভারতের বিরুদ্ধে ৩২টি টেস্ট খেলেছেন। ৬০টি ইনিংসে নিয়েছেন ১২৭টি উইকেট। ইনিংসে সেরা বোলিং ২০ রানে ৫ উইকেট, ম্যাচে ৪৩ রানের বিনিময়ে ৯ উইকেট। দুইবার ভারতের বিরুদ্ধে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। গড় ২৪.৯২, ইকনমি ২.৭৪। ভারতে ১৩টি টেস্টে ৩৪টি উইকেট দখল করেছেন। সেরা বোলিং ৪০ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট। ম্যাচে ৭৯ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট। গড় ২৯.৩২, ইকনমি ২.৬৫। দেশের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে দুবার ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন। ২০১২ সালে নাগপুর টেস্টে তিনি ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন। ওই সিরিজে পিছিয়ে পড়েও জিতেছিল ইংল্যান্ড। মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেছিলেন, দুই দলের মধ্যে ফারাক গড়ে দিয়েছেন অ্যান্ডারসনই। ভারতের বিরুদ্ধে এমন সাফল্য থাকলেও বেশ কয়েকবার তিনি ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বাকযুদ্ধ বা বিতর্কে জড়িয়েছেন।
জাদেজার সঙ্গে ঝামেলা
২০১৪ সালের ঘটনা ট্রেন্ট ব্রিজে। টেস্টের দ্বিতীয় দিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে মাঠ ছাড়ার সময় ড্রেসিংরুমে করিডরের কাছে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে জেমস অ্যান্ডারসন ঝামেলায় জড়ান, কথা কাটাকাটিও হয়। ভারতীয় দলের তরফে বলা হয়েছিল, জাদেজাকে আপত্তিকর কথা বলার পাশাপাশি ধাক্কা দেন অ্যান্ডারসন। ভারতীয় দল আইসিসি-র কাছে অভিযোগ জানালে অ্যান্ডারসন লেভেল থ্রি অপরাধে অভিযুক্ত হন। এতে দোষ প্রমাণ হলে তিনি অন্তত দুটি টেস্টে সাসপেন্ড হতে পারতেন। ইংল্যান্ড পাল্টা অভিযোগ জানায়, করিডরের কাছে জাদেজাই আগ্রাসীভাবে অ্যান্ডারসনের দিকে এসেছিলেন এবং আত্মরক্ষার্থেই অ্যান্ডারসন জাদেজাকে ধাক্কা দেন। ভারতীয় দল অ্যান্ডারসনের শাস্তি দাবি করলেও পাল্টা ইংল্যান্ড শিবিরের বক্তব্য ছিল, তাঁদের সেরা বোলারের মনোবলে আঘাত দিয়ে তাঁকে সাসপেনশনে ফেলতে এটা ভারতের কৌশল ছাড়া কিছু নয়। মহেন্দ্র সিং ধোনি ও অ্যালাস্টেয়ার কুকের সাংবাদিক বৈঠকও বিষয়টি নিয়ে সরগরম হয়।
শাস্তি ঘিরে বিতর্ক
বিষয়টি অন্য মাত্রা পায় শাস্তির বহর দেখে। অভিযোগের কোনও ভিডিও প্রমাণ ছিল না। জাদেজা লেভেল ওয়ান অপরাধ করেছেন বলে জানিয়ে ম্যাচ রেফারি তাঁর ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি কেটে নেন। আর অ্যান্ডারসনকে সব অভিযোগ থেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়, কোনও শাস্তিই দেওয়া হয়নি জিমিকে। যা নিয়ে নিজের অসন্তোষ গোপন রাখেননি তৎকালীন ভারত অধিনায়ক ধোনি। তিনি বলেছিলেন, আমি নিজে দেখেছি জাদেজাকে কটূক্তির পাশাপাশি অ্যান্ডারসন ধাক্কা দেন এবং সে ব্যাপারে আইসিসি-র কাছে অভিযোগ জানিয়ে আমি সঠিক কাজই করেছি। যদিও পরে ভারতের আবেদনের ভিত্তিতে জাদেজার শাস্তিও প্রত্যাহার করা হয়। তবে এই ঘটনার রেশ চলে তার পরের কয়েক মাসও। অ্যান্ডারসন এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তাঁর কেরিয়ারে সবচেয়ে বেশি স্ট্রেসে কাটাতে হয়েছে ওই সময়েই। যদিও ২০১৪ সালে ভারতের ওই সফরেই আট ইনিংসে বিরাট কোহলিকে চারবারই আউট করেছিলেন অ্যান্ডারসন।
মুম্বইয়ে বিতর্ক
এরপর ২০১৬ সালে ভারত সফরে আসে ইংল্যান্ড। বিরাট কোহলি তখন টেস্ট অধিনায়ক। এই সিরিজে দারুণ ফর্মে ছিলেন বিরাট। বিশাখাপত্তনমে শতরান ও অর্ধশতরান, মোহালিতে অর্ধশতরান, মুম্বইয়ে দ্বিশতরান। মুম্বইয়ে ২৩৫ রান করায় বিরাট ম্যাচের সেরা হন, পাঁচ টেস্টের সিরিজে বিরাটের দল ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। প্রথম তিন টেস্টে একবারও বিরাটকে আউট করতে পারেননি জিমি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি মনে করেন যে ২০১৪ সালের তুলনায় বিরাট কোহলির খেলা উন্নত হয়েছে? জবাবে বিরাটকে কৃতিত্ব না দিয়ে অ্যান্ডারসন বলেন, আমি মনে করি না তাঁর খেলার মানের কোনও উন্নতি ঘটেছে। তাঁর টেকনিক্যাল খামতিগুলি এখানকার উইকেট পুষিয়ে দিচ্ছে। এখানকার উইকেট থেকে গতি বা মুভমেন্ট আদায় করা যাচ্ছে না, যে গতির ফলে তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচ হয়েছে ইংল্যান্ডে। এই কথাগুলিও ভারতীয় শিবির ভালোভাবে যে নেয়নি, তা বোঝা গিয়েছিল টেস্টের পঞ্চম দিনে। অ্যান্ডারসন ব্যাট করতে নামতেই তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে অশ্বিন বলেছিলেন, আমাদের অধিনায়ক সম্পর্কে কিছু না বলে হার মানতে শিখুন। তখন বিরাট গিয়েই অশ্বিনকে সরান। অশ্বিন খারাপ কোনও কথা বলেননি বলে দাবি করে বিরাট ম্যাচের শেষে বলেছিলেন, আমিও বিষয়টি জানতাম না। অশ্বিনের কাছেই জানতে পারি অ্যান্ডারসনের কথায় তাঁর খারাপ লাগা থেকেই তিনি তাঁকে পরামর্শ দিতে গিয়েছিলেন।
|
উত্তপ্ত লর্ডস
লর্ডস টেস্টের তৃতীয় দিনে জেমস অ্যান্ডারসনের শরীর লক্ষ্য করে বলে করার কৌশল নেয় ভারত। যে ফাঁদে পা দিয়ে মাথা গরম করে ফেলেন অ্যান্ডারসন। বুমরাহ-র বল তাঁর হেলমেটে লাগার পরও ক্রমাগত শরীরের দিকে ধেয়ে আসা বল সামলাতে হয়েছিল জিমিকে। পরদিন বিরাট কোহলিও অ্যান্ডারসনকে লক্ষ্য করে আপত্তিকর শব্দ প্রয়োগ করেন। তার পরের দিন অর্থাৎ শেষ দিন অ্যান্ডারসন-সহ ইংল্যান্ড পেসাররা বুমরাহ ও শামিকে লক্ষ্য করে লাগাতার শর্ট বল করে যান। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্টাম্প টার্গেট না করে এভাবে শর্ট বল করেই নিজেদের হাতে থাকা ম্যাচ ভারতের হাতে তুলে দেয় জো রুটের দল। পরে ইংল্যান্ড যখন ব্যাট করতে নামে তখনও বিরাট কোহলি ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের লক্ষ্য করে কিছু আপত্তিকর শব্দ প্রয়োগ করেন, যা স্টাম্প মাইক্রোফোনে ধরা পড়ে। লর্ডস টেস্ট জেতার পর ইংল্যান্ড শিবিরকে খোঁচা দিয়ে বিরাট বলেন, শেষ দিনের সকালে বুমরাহ ও শামির সঙ্গে যেভাবে ইংল্যান্ড দল বাকযুদ্ধে জড়িয়েছে, তাতেই আমাদের দলের মোটিভেশন বেড়ে যায়।