লর্ডসে ভারতের বিরাট জয়ে একাধিক নজির, রুটদের আপরুটে কার কী প্রতিক্রিয়া?

লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯তম টেস্টে ভারত ইংল্যান্ডকে এই নিয়ে হারাল তৃতীয়বার। প্রথমবার ভারত লর্ডসে জিতেছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর ২০১৪ সালে। নাটকীয় শেষ দিনে ম্যাচের রং বদলে দুরন্ত জয় নিশ্চিত করলেন ভারতীয় পেসাররা। জো রুটের শতরান সত্ত্বেও এই প্রথম কোনও টেস্টে পরাজিত হল ইংল্যান্ড। রুটদের শিবিরে তাই শুরু হয়েছে ময়নাতদন্ত। সুনীল গাভাসকর কটাক্ষ করে বলেছেন, ইংল্যান্ডের এই দল দেড়জনের। জো রুট আর আধা অ্যান্ডারসন! বিরাট কোহলির অধিনায়ক হিসেবে নজির গড়ার টেস্ট জয়ে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন থেকে বর্তমানরা।

What a game of cricket 👌
Everyone stepping up, love the commitment and attitude. Way to go boys 🇮🇳 💪 pic.twitter.com/hSgmxkLiiP

— Virat Kohli (@imVkohli) August 16, 2021

From At beginning of the day, “ bacha paayenge kya”,to registering this win at Lords, not many teams can turn around their fortunes in overseas Test Matches like we have done. Kamaal kar diya ladkon ne..
And as they say, Never ever ever ever underestimate the Indian’s #LordsTest pic.twitter.com/pLTz49AxUq

— Virender Sehwag (@virendersehwag) August 16, 2021

বিরাট কীর্তি

সুপার প্রাউড। স্বাধীনতা দিবসের পরদিনই লর্ডসে স্মরণীয় জয় ছিনিয়ে নিয়ে দল নিয়ে এটিই ছিল বিরাট কোহলির প্রতিক্রিয়া। বিরাটের নেতৃত্বে ভারত এই নিয়ে ৩৭টি টেস্ট জিতল। ফলে অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক টেস্ট জয়ীদের তালিকায় ক্লাইভ লয়েডকে টপকে চারে চলে এলেন বিরাট কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ ৫৩টি টেস্ট জিতে তালিকার শীর্ষে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই প্রাক্তন অধিনায়ক, রিকি পন্টিং (৪৮) ও স্টিভ ওয়া। বিরাট ৬৩টি টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে ৩৭টি টেস্টে জিতলেন। হেরেছেন ১৫টিতে। ড্র ১১টি টেস্ট।

ইশান্তের নজির

লর্ডস টেস্টে প্রথম ইনিংসে তিনটি ও দ্বিতীয় ইনিংসে দুটি উইকেট নিলেন ইশান্ত শর্মা। ২০১৪ সালে লর্ডসে ভারতকে টেস্ট জেতানোর অন্যতম কারিগর ইশান্ত ম্যাচে পাঁচটি উইকেট নেওয়ায় তাঁর উইকেটসংখ্যা দাঁড়াল ৩১১। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় জাহির খানকে স্পর্শ করে ইশান্ত এখন রইলেন যুগ্ম পঞ্চম স্থানে। এই প্রথম ইংল্যান্ডের মাটিতে পরপর দুটি টেস্টে একটিও উইকেট গেল না ভারতীয় স্পিনারের ঝুলিতে। সব কটিই গিয়েছে পেসারদের দখলে। চলতি শতকে এই প্রথম ভারতের ৯ ও ১০ নম্বর ব্যাটসম্যানরা দুই ইনিংসেই ২৫-এর উপর রান করলেন।

বেসামাল ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের পরাজয় মানতে পারছে না ব্রিটিশ মিডিয়া। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮৫ ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৬৭ রানে অল আউট হয়েও শেষ অবধি টেস্ট দুটি জিতেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ দিনের শুরুতে জেতার জায়গায় থেকেও দিনের খেলা শেষের আগেই ১২০ রানে অ আউট হয়ে যাওয়াকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। দায়ী করা হচ্ছে অকারণে ভারতীয়দের সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে ফোকাস সরে যাওয়াকেও। তৃতীয় দিন থেকে অ্যান্ডারসনের সঙ্গে লেগেছিল বুমরাহদের। হেলমেটে বল লাগার পরও জিমির শরীর লক্ষ্য করে বল করছিল ভারত। সেই নিয়ে তর্কাতর্কির রেশ আজও চলে। বুমরাহ ব্যাটিংয়ের সময় তাঁকে স্লেজিং করা হয়। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ মিডিয়া ভুলতে পারছে না শামি-বুমরাহ-র কাছে ইংল্যান্ড বোলারদের নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনা। কেন উইকেট তোলায় মনোযোগী না হয়ে ক্রমাগত শর্ট পিচ বল করা হল, বাউন্সার দিতে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের থিতু করার সুযোগ দেওয়া হল সেই উত্তর খুঁজছেন সকলে। এই কৌশলই ব্যুমেরাং হল বলে দাবি। যার নিট ফল ভারতের বিরুদ্ধে ১০টি ইনিংসের মধ্যে এই প্রথম উইকেটহীন রইলেন অ্যান্ডারসন। সঙ্গে জঘন্য ব্যাটিং। রুট আউট হতেই পরাজয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। এই প্রথম কোনও টেস্টে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারই শূন্য রানে আউট হলেন। ইংল্যান্ডের পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টের দুই ইনিংসে গোল্ডেন ডাক বা প্রথম বলে শূন্যে ফিরলেন স্যাম কারান।

বিরাটের খোঁচা

ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ম্যাচের শেষে বলেন, টস হারার পরও যেভাবে আমরা নিজেদের কৌশল সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছি তাতে গোটা দলকে নিয়ে আমি সুপার প্রাউড। প্রথম তিন দিন পিচ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি। প্রথম দিনটা ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। তবে চাপের মুখে দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা যেভাবে ব্যাট করেছি, বিশেষ করে শামি ও বুমরাহ তা অনবদ্য। আমাদের বিশ্বাস ছিল ইংল্যান্ডকে আউট করতে ৬০ ওভারই যথেষ্ট। আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসের সময় যে টেনশনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা আমাদের আরও সুবিধা করে দেয়। লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংয়ের উন্নতি নিয়ে ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরের প্রশংসাও করেছেন বিরাট। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে লর্ডসে টেস্ট জেতা আমার কাছে স্পেশ্যাল ছিল। ওই টেস্টেও ইশান্ত শর্মা ভালো বোলিং করেছিলেন। এই জয়টা আরও বেশি স্পেশ্যাল ৬০ ওভারের মধ্যেই জয় ছিনিয়ে নিতে পারায়। লর্ডসে প্রথম খেলতে নেমে সিরাজ যেভাবে বোলিং করেছেন তা আউটস্ট্যান্ডিং। সমর্থকদের দলকে উজ্জীবিত করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিরাট বলেছেন, স্বাধীনতা দিবসের পর এটা আমাদের তরফে দেশের সকলকে সবচেয়ে বড় উপহার। যদিও আত্মতুষ্টিকে প্রশ্রয় না দিয়ে বিরাট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পরের তিনটি টেস্টেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

সেরা রাহুল

ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন লোকেশ রাহুল। যদিও কোনও বোলারকে এই টেস্টে সেরার পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সুনীল গাভাসকর। রাহুল বলেন, প্রতিদিন সকালে এসেই লর্ডসের অনার্স বোর্ড দেখেছি যে আমার নামটা পাকাপাকিভাবে লেখা হয়েছে কিনা। আমার শতরান দলের জয়ে কাজে লাগায় ভালো লাগছে। টস হারার পর বড় রান তুলতে ওপেনিং পার্টনারশিপটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কয়েক মাস ধরে থেকে এখানে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। ট্রেন্ট ব্রিজেও আমরা খেলায় শৃঙ্খলা দেখাতে পেরেছিলাম। এখানেও আমরা যেভাবে খেলে জয় পেলাম তাতে ভালোই অনুভূতি হচ্ছে। রাহুল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সঙ্গে বাকযুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, সমানে-সমানে প্রতিযোগিতায় কথার লড়াই চলতে থাকে। কিন্তু কেউ যদি আমাদের কোনও একজনকে আক্রমণ করেন তাহলে আমরা সকলে এককাট্টা হয়ে তার জবাব দিতে প্রস্তুত থাকি। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমাদের বোলারা বাড়তি তাগিদ নিয়ে বোলিং করেছেন। তার ফলে যে পারফরম্যান্স হয়েছে তাতে সত্যিই খুশি।

উচ্ছ্বসিত প্রাক্তনরা

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে সচিন তেন্ডুলকর, ভিভিএস লক্ষ্মণ থেকে বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, যুবরাজ সিং প্রত্যেকে বিরাটদের এই স্মরণীয় জয়ে উচ্ছ্বসিত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় টুইটে লেখেন, ভারতের ফ্যানটাস্টিক জয়। গোটা দল যে চরিত্র মেলে ধরেছে, যে সাহস আর তেজ নিয়ে খেলেছে, প্রত্যেকে তা খুব কাছ থেকে দেখতে পেরে ভালো লাগছে। লর্ডস টেস্ট তিনি দারুণ উপভোগ করেছেন বলে জানিয়ে সচিন তেন্ডুলকর টুইটে লেখেন, এই দলের চারিত্রিক দৃঢ়তা, সহনশীলতা তাঁকে মুগ্ধ করেছে। ভিভিএস লক্ষ্মণের মতে, টেস্ট ক্রিকেটের এক অসাধারণ দিন,যা অনেক বছর ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে। ব্যাট হাতে শামি-বুমরাহ-র লড়াই এবং চার পেসারের অনবদ্য বোলিং এক দারুণ জয় এনে দিল। যুবরাজ সিংয়ের কথায়, গ্রেট জয়। আমাদের বোলাররা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। শামি-বুমরাহ-র পার্টনারশিপ, সিরাজের অবিশ্বাস্য স্পেল, প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। বীরেন্দ্র শেহওয়াগ টুইটে লেখেন, দিনের শুরুতে ভাবনা ছিল টেস্ট বাঁচাতে পারব কিনা। সেখান থেকে দিনের শেষে লর্ডসে এমন জয়, বিদেশে টেস্টের মোড় আমাদের মতো ঘোরাতে খুব বেশি দল পারবে না। ছেলেরা কামাল করে দিয়েছেন। ভারতীয় দলকে আর কখনও কেউ আন্ডারএস্টিমেট করার ভুল করবে না! প্রাক্তনদের প্রশংসায় ভেসে স্মরণীয় জয়ের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বিরাট কোহলি এবং তাঁর সতীর্থরাও।

We were hungry, had desire and we showed it! Everyone turned up and we leave Lord's with a win that we won't forget soon. We take this momentum and move on. pic.twitter.com/xG9kaWtdU6

— Rishabh Pant (@RishabhPant17) August 16, 2021

Super team effort and a memorable victory! 🇮🇳

Nothing better than the ebbs and flows of test cricket.#InItTogether #IndvsEng pic.twitter.com/08u9lAKsqt

— cheteshwar pujara (@cheteshwar1) August 16, 2021

Can’t put into words the feelings that we’re going through after that win! So proud of the whole team 🔥 pic.twitter.com/FRH20cbujl

— Jasprit Bumrah (@Jaspritbumrah93) August 16, 2021

Love your never give up attitude 🔥🔥🔥 Great win boys 🇮🇳👏 pic.twitter.com/3gHi5mOeBu

— Shikhar Dhawan (@SDhawan25) August 16, 2021

More VIRAT KOHLI News  

Read more about:
English summary
Virat Kohli Overtakes Clive Lloyd To Become The Fourth-Most Successful Captain In Test Cricket. Indian Captain Says That He Is Super Proud Of The Whole Team.
Story first published: Tuesday, August 17, 2021, 2:06 [IST]