অ্যান্ডারসনকে এগিয়ে দেওয়া
ভারতের বিরুদ্ধে নটিংহ্যামের মতো লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংসেও শতরান করেন জো রুট। তাঁর এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সৌজন্যে ওই ইনিংসে ভারতের থেকে ২৭ রানের লিড নেয় ইংল্যান্ড। দলের অধিনায়ক একটা কৌশলগত ভুল না করলে হোম টিমের ওই লিড ৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারত। ম্যাচের তৃতীয় দিনের শেষবেলায় রুটের সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। ভারতীয় ফাস্ট বোলার জসপ্রীত বুমরাহের বল তাঁর হেলমেটে লাগলে কনকাশন চেকের আওতায় পড়ে যান জিমি। স্নায়ুর চাপে ভুগতে শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ ফাস্ট বোলার। তা বুঝে অ্যান্ডারসনকে লক্ষ্য করে বডি লাইন বোলিং করতে শুরু করেছিল ভারত। এমনই আবহে দিনের শেষ ওভারের তিন বল খেলে ফেলেন জো রুট। চতুর্থ বলে সিঙ্গলস নিয়ে কৌশলগত ভুল করে ফেলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। নড়বড়ে অ্যান্ডারসন দিনের শেষে আউট না হয়ে গেলে ইংল্যান্ডের লিড আরও কিছুটা বাড়তে পারত।
মন্দ আলো
চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছিল ভারত। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনার কেএল রাহুল ও রোহিত শর্মার উইকেট দ্রুত হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল সফরকারী দল। বিরাট কোহলির দ্রুত সাজঘরে ফিরে যাওয়াটাও ছিল টিম ইন্ডিয়ার কাছে বড় ধাক্কা। ব্যাট হাতে অজিঙ্ক রাহানে ও চেতেশ্বর পূজারার লড়াই কিছুটা আশা জাগালেও দিনের শেষে পরপর উইকেট হারিয়ে নাজেহাল হয়ে যায় ভারত। ক্রিজে ব্যাট করছিলেন তরুণ ঋষভ পন্থ ও বোলার ইশান্ত শর্মা। আবছা আলোয় মইন আলির স্পিন পড়তে সমস্যায় পড়ছিলেন দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান। মন্দ আলোর জন্য খেলা সেদিনের মতো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বারবার ফিল্ড আম্পায়ারের কাছে আবেদন করতে থাকেন ঋষভ ও ইশান্ত। লর্ডসের ঐতিহাসিক ব্যালকনি থেকে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও সতীর্থ রোহিত শর্মাকেও হাত নাড়িয়ে একই কথা বলতে দেখা যাচ্ছিল। সেই আবহে ফের কৌশলগত ভুল করে ফেলেন জো রুট। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বাড়ানোর ভাবনায় শেষবেলায় ফাস্ট বোলারদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আম্পায়ারদের কাজ আরও সহজ করে দেন ব্রিটিশ অধিনায়ক। নয়তো চতুর্থ দিনই ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে দিতে পারত ইংল্যানন্ড।
পঞ্চম দিনে অতিরিক্ত কলহ
তৃতীয় দিনে জেমস অ্যান্ডারসনেক হেলমেটে বল আঘাত করা নিয়ে ভারত ও ইংল্যান্ড শিবিরের ক্রিকেটারদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, তা ম্যাচের পঞ্চম দিনে চরম আকার নেয়। ভারতের অষ্টম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর জসপ্রীত বুমরাহ ব্যাট করতে নামলে পারফরম্যান্সের থেকে প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে বেশি জড়িয়ে পড়ে জস বাটলাররা। তার সুবিধা পেয়ে যান মহম্মদ শামি ও জসপ্রীত বুমরাহ। দুই ফাস্ট বোলারের দুর্দান্ত পার্টনারশিপ ভারতের জন্য জয়ের ভিত তৈরি করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের বোলারদের লাইন ও লেন্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা না বলতে পারাটাকে জো রুটের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। শামি এবং বুমরাহের ব্যাটিংয়ের সময় মাত্র ২ শতাংশ বল ফুল লেন্থে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন স্যাম কারানরা। পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে যে রণকৌশলে কিছু ভুল যে তিনি করেছেন, তা মেনে নিয়েছেন জো রুট নিজে। বলেছেন, সেই সময় তাঁর স্বতন্ত্র কিছু ভাবা উচিত ছিল। তা বলে শামি এবং বুমরাহের কৃতিত্বকেও কোনও অংশেই ছোট করেননি জেন্টলম্যান রুট।
তৃতীয় টেস্টের দিকে তাকিয়ে
ঐতিহ্যের লর্ডসে ভারতের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের টেস্ট হার মেনে নিতে পারছেন না সে দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা। তবে এই বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃতীয় টেস্টে জো রুটের দল ঘুরে দাঁড়াবে বলেও বিশ্বাস ক্রিকেট মহলের। আগামী ২৫ অগাস্ট থেকে হে়ডিংলেতে শুরু হচ্ছে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।