ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অবদান কখনই অনস্বীকার্য নয়। তবে অধিকাংশ ভারতবাসীই এখনও সঠিকভাবে নেতাজির এই কৃতিত্ব সম্পর্কে অবগত নন। দেশে ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস পালনের পাশাপাশি ভারত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মশতবর্ষ পালন করছে। এই উপলক্ষ্যে দিল্লিতে নেতাজি সুভাষ বোস আইএনএ ট্রাস্ট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যেখানে ব্যক্তি নেতাজির আদর্শ, তাঁর যুব সমাজের প্রতি কর্তব্য ও দেশের প্রতি তাঁর দায়িত্বকে নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য, সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন। নেতাজির চিরস্মরণীয় উক্তি 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো’ আজও যুব সমাজকে উদ্দীপিত করে। গত ১৪ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন আইএনএ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে সম্মান দেওয়া হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইএনএ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ডঃ জে এস রাজপুত।
এদিন তিনি জানিয়েছেন দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে নেতাজির ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশবাসী ও দেশের নবীন প্রজন্ম জানুক সত্যিকারের দেশভক্তি একমাত্র নেতাজির মধ্যেই ছিল। তিনি বলেন, 'নেতাজি সুভাষ বোস আইএনএ ট্রাস্ট এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে যে দেশ যেন সঠিক ইতিহাস পায়। আর আমাদের বিশ্বাস এই যে নেতাজি স্বাধীনতা আন্দোলনে ও স্বাধীনতা অর্জন করতে তাঁর যে যোগদান ছিল তার দেশবাসী কিছুই জানেন না।
নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে, আর আমরা এটা জানি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করে চলেছি। ইতিহাস বইতে এই তথ্য যোগ করার প্রচেষ্টা করেছিলাম কিন্তু এখনও ওই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তার জন্য দরকার দেশের মানুষের বোঝার যে নেতাজি কি ছিলেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব কেমন ছিল, তিনি কিসে প্রভাবিত ছিলেন । আর আজকের অনুষ্ঠানে সকলের বক্তব্যে তাঁর ব্যক্তিত্বের কীরকম বিকাশ হয়েছে, আর এটা যুব সমাজের জন্য জানা খুবই প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, 'নেতাজির কৃতিত্ব মূলত চাপা পড়ার পেছনে দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বত্ত্বা যাঁর হাতে যায়, সেই সব কৃতিত্ব নিতে চান, এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এবং দ্বিতীয় কারণ হল ১৯৭০ সালের আশেপাশে আমাদের যাঁরা ইতিহাসবিদ ছিলেন তাঁরা বিশেষ বিচারধারার পক্ষ নিয়ে লিখতে শুরু করেন, যে কারণে দেশের ইতিহাসকে কাঁটাছেঁড়া করতে তাঁদের হাত কাঁপেনি।
এছাড়াও বহু রাজনৈতিক কারণের জন্য নেতাজির আসল তথ্য চাপা পড়ে যায়। তবে যুব সমাজ যাতে সত্যিকারের নেতাজিকে চিনতে পারেন তার জন্য আমরা অনবরত কাজ করে চলেছি।’ এই অনুষ্ঠানে ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিন্দোল সেনগুপ্ত প্রধান অতিথি হয়ে আসেন এবং তিনি এই অনুষ্ঠানে নেতাজির বিষয়ে একটি অজানা তথ্য তুলে ধরেন। তিনি নেতাজির স্বামী বিবেকান্দের মধ্যেকার যোগাযোগ ও নেতাজির সঙ্গে বিবেকানন্দের আন্তঃযোগাযোগের বিষয়টির ওপর মনোনিবেশ করেন। তিনি জানিয়েছেন যে স্বামী বিবেকানন্দের জীবন তাঁর ওপর খুবই গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে কিছু অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মী একত্রিত হয়ে এই সমাজের জন্য ভালো কিছু করার উদ্যোগ নেন। এর ঠিক এক বছর পর তাঁরা যুব সমাজকে নেতাজির বিষয়ে অজানা ও নানান তথ্য জানানোর জন্য এই ট্রাস্টটি গঠন করেন। তাদের কর্মসূচি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতাদর্শ, দর্শন এবং দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে স্থির করা হয়েছিল। এই অনানুষ্ঠানিক সংস্থাটি প্রায় একই রকম উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে এমন কিছু অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং নেতাজির জন্মদিনে ২০০৭ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম নেতাজি সুভাষ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়।