পালাবদল হতে চলেছে আফগানিস্তানে। এক গনি প্রস্থানে প্রবেশ ঘটতে চলেছে আর এক গনির। টানটান উত্তেজনার পর রবিবার সকালে নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সমঝোতা বৈঠকের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পথ ধরে অভিষেক ঘটতে চলেছে আর এর গনির।
তালিবান প্রধান আবদুল গনি বরাদর হতে পারেন আফগানিস্তানের নয়া প্রেসিডেন্ট। রবিবার সকাল থেকেই আফগান প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির ছিলেন তালিবান প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। সেখানে আশরাফ গনি ও আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন তালিবান প্রধান। তারপরই চূড়ান্ত হয় সমঝোতা।
শনিবার রাতেই মাজার-ই-শরিফ দখল করে নিয়েছিল তালিবানরা। তারপর থেকেই জনসমক্ষে দেখা যায়নি আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিকে। কাবুল থেকে তাঁর পতনের ঘণ্টা তখনই বেজে যায়। রবিবার সকালে বিনা প্রতিরোধে তালিবান যোদ্ধারা জালালাবাদ দখল করে নেয়। তারপর কাবুলেও ঢুকতে শুরু করে তালিবানরা। কিন্তু তালিবান প্রধানের নির্দেশে থমকে যেতে হয় তাঁদের।
কাবুলের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন তালিবান যোদ্ধারা। সরাসরি আশরাফ গনি ও মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে সমঝোতা চান। তারপর শুরু হয় আলোচনা। জানিয়ে দেন গায়ের জোরে কাবুল দখল করতে চান না তাঁরা। তাঁরা চান শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর। শেষপর্যন্ত অহিংসার শর্তে সমঝোতা হয়। পদত্যাগ করেন আশরাফ গনি।
মার্কিন কূটনীতিবিদ ও ন্যাটো প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন আশরাফ। তারপর বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তালিবান নেতৃত্বকে। আবদুল গনি বরাদরের নেতৃত্বে তালিবান প্রতিনিধি দল প্রোসিডেন্টের বাসভবনে আসেন। তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। নয়া তালিবান অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তালিবান প্রধান।
আবদুল গনি বরাদর। ১৯৯৪ সালে থেক তালিবান আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। ২০০১ সালে আমেরিকা দখল নেয় আমেরিকার। তারপর থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু করেন তালিবানরা। তার নেতৃত্বে ছিলেন ওই আবদুল গনি বরাদর। ২০১০ তিনি পাকিস্তান ও আমেরিকার যৌথ অভিযানে করাচিতে ধরা পড়েন। ২০১২ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে মুক্ত করে দেয়। কিন্তু তালিবানদের পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হয়নি। তারা তা স্বীকার করে ২০১৮ সালে।
পাকিস্তানে গ্রেফতার হওয়ার সময় তালিবানের ধর্মীয় বিভাগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ছিলেন গনি। প্রাক্তন তালিবান প্রধান মোল্লা মহম্মদ ওমরের ঘনিষ্ঠ নেতা বলেই তাঁর পরিচিতি ছিল। তিনি তালিবান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। শেষপর্যন্ত আটঘাট বেঁধেই আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার অধিকার দূর করলেন।