কৃষ্ণনগর থেকে মুকুলের প্রথম ভুল, দ্বিতীয় ভুল বিধানসভায়
কয়েকদিন আগে কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের সাংগঠনিক সভায় গিয়ে মুকুল রায় বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে। এই কৃষ্ণনগরে স্বমহিমায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি। নিজের ক্ষমতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি। পরক্ষণেই তিনি ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু তখন দেরি হয়ে গিয়েছে। আর তার সাতদিন পরই আবার ভুল। এবার তিনি বলেন, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে ফের প্রার্থী হলে তিনিই জিতবেন বিজেপির টিকিটে। তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালে কী হবে তা মানুষ ঠিক করবে।
তৃণমূলে এসেই অসংলগ্ন কথাবার্তায় বিতর্ক তৈরি করছেন কেন মুকুল?
একটা সময়ে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন, তৃণমূলের চাণক্য বিজেপিতে গিয়ে বাংলার চাণক্যের মর্যাদা আদায় করে নিয়েছিলেন। তারপর বিজেপি ছেড়ে তিনি ফিরে এসেছিলেন তৃণমূলে। কিন্তু তৃণমূলে এসেই অসংলগ্ন কথাবার্তায় তিনি বারেবারে বিতর্ক সৃষ্টি করে চলেছেন। তাঁর এই অসংলগ্ন কথার জন্য শারীরিক সমস্যাকে দায়ী করছেন পুত্র শুভ্রাংশু। তিনি বলেন, মায়ের মৃত্যুর শোক সমলে উঠতে পারেনি বাবা। তাই অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে ফেলছেন। তাঁর স্মৃতিভ্রংশ হচ্ছে।
মুকুল কেন বারবার একই ভুল করছেন? ভুলের মধ্যেই লুকিয়ে কৌশল?
প্রথমবার ভুলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। মমতা বলেছিলেন আমার পুরনো মুকুলকে দরকার। তাই মুকুলকে তিনি ভালো করে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। তাঁকে এইমসে ভর্তির পরামর্শও দিয়েছিলেন মমতা। তারপর ফের একই ভুল করে বসলেন মুকুল রায়। প্রায় একই মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি লকরে তৃণমূলকে ফের অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন তিনি। তারপরই জল্পনা, মুকুল রায় কেন বারবার একই ভুল করছেন? তবে কি ভুলের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কৌশল?
বিজেপির টিকিটে দাঁড়ালে তো জিতবই, কিন্তু তৃণমূলের টিকিট!
মুকুল রায় শুক্রবার বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়- আপনি তো কৃষ্ণনগর উত্তরে বিপুল ভোটে দিতেছিলেন। সেখানে আবার তিনি প্রার্থী হলে কি জিততে পারবেন? তিনি বলেন বিজেপির টিকিটে দাঁড়ালে তো জিতবই। তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালে কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন সাধারণ মানুষ।
পরিকল্পিতভাবেই কি এমন মন্তব্য করছেন মুকুল রায়?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, মুকুল রায় বিজেপির টিকিটে জিতেছেন কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে। তারপর দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিধানসভায় তাঁকে বিজেপির বিধায়ক হিসেবে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান বেছে নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় তিনি পরিকল্পিতভাবেই কি এমন মন্তব্য করছেন?
কৃষ্ণনগরের ক্ষেত্রে মুকুলের মুখে শোনা যাচ্ছে উল্টো সুর
মুকুল রায় ওই মন্তব্যের পর ত্রিপুরায় প্রসঙ্গে তৃণমূলের হয়ে সওয়াল করেছেন। বলেন, ত্রিপুরায় তৃণমূল শক্তিবৃদ্ধি করছে। তৃণমূলের উপরে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন তিনি। তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাও বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন। বলেন, এটা অন্যায় হচ্ছে। দল যদি নির্দেশ দেয়, তবে তিনি ত্রিপুরা যেতে তৈরি। ত্রিপুরা নিয়ে তিনি তৃণমূলের হয়ে সওয়াল করলেন, আর কৃষ্ণনগরের ক্ষেত্রে তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে উল্টো সুর।
মুকুল রায়ের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ একই ভুল করবেন!
রাজনৈতিক মহল মানতে চাইছে না, মুকুল রায়ের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ একই ভুল করবেন। তাই তাঁর ভুলের পিছনেও কোনও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, মুকুল রায় সচেতনভাবে নিজেকে বিজেপি বিধায়ক ও নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ করে পিএসসি চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁরে বরখাস্ত করার জন্য আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে বিজেপি। তাই মুকুল রায় এমন মন্তব্য করছেন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
আইনি দিক থেকে নিজের অবস্থান মজবুত করতে পরিকল্পনা
মুকুল রায় চাইছেন আইনি দিক থেকে নিজের অবস্থান মজবুত করতে। অভিজ্ঞ রাজনীতিক মুকুল রায় এই কৌশল নিয়েছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মুকুল রায় যে তৃণমূলে যোগ গিয়েছেন, তা প্রমাণ করতে তাঁর তৃণমূলে যোগদানের ভিডিও ফুটেজকে অস্ত্র করছে বিজেপি। এবার তার পাল্টা নিজেকে বিজেপি সদস্য হিসেবে প্রতিপণ্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন মুকুল রায়। নিজের যুক্তি তৈরি রাখছেন তিনি। তাই এমন পরিকল্পনা।