নীল নকশার প্রয়োজনীয়তা
বিরাট কোহলিকে টেস্ট ক্রিকেটের পোস্টার বয় হিসেবে অভিহিত করে ক্রিকইনফোয় নিজের কলামে ভারত অধিনায়কের একটি পর্যবেক্ষণের দারুণ প্রশংসা করেছেন ইয়ান চ্যাপেল। ট্রেন্ট ব্রিজে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিরাট কোহলিকে। বিরাট জবাবে বলেছিলেন, এটা ক্রিকেটের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে। একমাত্র ক্রিকেটাররাই পারেন টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে। দ্য হান্ড্রেডের মতো ১০০ বলের ক্রিকেটের আবির্ভাব হয়েছে ইংল্যান্ডে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এতো ফরম্যাটের কার্যত বিরোধিতাই করেছেন ইয়ান চ্যাপেল। তাঁর কথায় এর প্রভাব পড়ছে ক্রিকেটে, বিশেষ করে ক্রীড়াসূচি তৈরির ক্ষেত্রে। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে যুক্তিপূর্ণ বিবেচনার মাধ্যমেই ক্রীড়াসূচি তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন অজি অধিনায়ক। ক্রিকেটের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নীল নকশা তৈরির পক্ষেও সওয়াল করেছেন চ্যাপেল। এ বিষয়ে ক্রিকেটার, প্রশাসক, সংবাদমাধ্যম, স্পনসর, চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের মতামত জানতে ফোরাম গড়া উচিত বলেও মত তাঁর।
সোজা পথ
চ্যাপেল নিজের কলামে আরও লিখেছেন, স্কুলস্তর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উন্নীত হওয়ার পথে দশকের পর দশক ধরে যেটা চলে এসেছে তা হল, অল্প বয়সে যত বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলো। একটা পর্যায়ে সাফল্য কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছালে পরের পর্যায়ে উত্তরণ ঘটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে কোন ক্রিকেটারের দক্ষতা কতটা সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার তাঁর কাছে প্রত্যাশিত পর্যায়ের সাফল্য় পাচ্ছেন তাহলে এমনটা দেখা গিয়েছে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে গিয়েও সাফল্য পেয়েছেন। টেস্ট খেলতে হলে দক্ষতা অর্জন করতে হবে ছোট বয়স থেকেই এবং একের পর এক পর্যায় পেরিয়ে যেতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্রিকেট প্রতিভার বিকাশের সঠিক পরিকাঠামোও গড়তে হবে। সঠিক স্কিল থাকলে বিরাট কোহলির মতোই যে কোনও ফরম্যাটে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না।
টেস্টকে বাঁচাতে
চ্যাপেলের কথায়, যে বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা করে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে রূপরেখা তৈরিতে প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হল ক্রিকেটার ও ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে জানতে হবে সবচেয়ে কটি ফরম্যাট থাকলে ভালো, যা সকলেই উপভোগ করবেন এবং পর্যাপ্ত রাজস্বও আসবে। যদি এমন মতামত আসে টেস্ট ক্রিকেট থাকুক, তাহলে আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে মানানসই কী ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে। টেস্ট ক্রিকেট বন্ধ করার চেয়ে প্রয়োজনীয় রদবদল এনে তা থাকা উচিত। চ্যাপেল লিখেছেন, বিরাট কোহলি টেস্ট ক্রিকেটের যে মান বজায় রাখার কথা বলেছেন তা বজায় রাখা যে কঠিন সেটা পরিষ্কার হয়েছে সাম্প্রতিক উদাহরণেই। ইংল্যান্ড দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই টেস্ট দলে এসেছেন হয় দ্য হান্ড্রেড কিংবা টি ২০ ভাইটালিটি ব্লাস্ট বা ৫০ ওভারের রয়্যাল লন্ডন কাপ খেলে। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়েছেন লাল বলে যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই। অস্ট্রেলিয়াতেও এমন সমস্যা দেখা গিয়েছে, একটি টেস্ট সিরিজের দলে ঢুকতে একজন ক্রিকেটারকে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়েছিল বিগ ব্যাশে খেলে! অথচ এখনও টেস্ট ক্রিকেটকেই ক্রিকেটার বা প্রশাসকদের বেশিরভাগ সেরা ফরম্যাট বলেই মনে করে থাকেন।
বিরাটকে নেতৃত্বে চান চ্যাপেল
সীমিত ওভারের ক্রিকেট যে ক্রিকেটারদের মানোন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক হয় সেই যুক্তিও মানতে নারাজ চ্য়াপেল। তিনি বলেছেন, ব্যাটসম্যানরা আরও বেশি পাওয়ারফুল হিটার হয়েছেন এটা ঠিক। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কঠিন বোলিং স্পেল সামলানোর মতো দক্ষতা কি তাঁদের বেড়েছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তর হল না। ফিল্ডিং উন্নতির কথার যুক্তিও অনেকে দেন। সেটাও মানা যায় না। অবিশ্বাস্য, অ্যাথলেটিক ক্যাচের সংখ্যা বাড়লেও স্লিপ ক্যাচিংয়ের উন্নতি হয়নি। ফুটওয়ার্কের সমস্যাও থাকে, যদিও তা ঠিক করার কোনও চেষ্টাও দেখা যায় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ফলে টেস্ট ক্রিকেটকে স্বমহিমায় বিরাজমান রাখতে চ্যাপেল চাইছেন, টেস্ট ক্রিকেটকে যদি ক্রিকেটাররা সেরা ফরম্যাট বলে মনে করেন তাহলে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন এই বিষয়ে। আর তাঁদের মুখপাত্র থাকুন খোদ বিরাট কোহলিই।