প্রচারে বিভ্রান্তি
গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম তথা বামেরা প্রচার করেছিল বিজেপি ও তৃণমূল সমান। পাশাপাশি এই দুই দলকে এক বোঝাতে বিজেমূল শব্দবন্ধনীও ব্যবহার করা হয়েছিল বিভিন্ন প্রচার সভায়। পাশাপাশি তৃণমূল ও বিজেপি মুদ্রাপ এপিঠ-ওপিঠ বলা হয়েছিস। যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কে বড় শত্রু না নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতিতে বাম সমর্থকদের একটা বড় অংশ নো ভোট টু বিজেপি নিয়েও প্রচার করে। যার জেরে ফলাফল ঘোষণার পরে দেখা যায় রাজ্যে সিপিএম তথা বামেদের ভাঁড়ার শূন্য হয়ে গিয়েছে।
বিজেমূল তত্ত্ব ভুল ছিল, বলেছিলেন সূর্যকান্ত
তবে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগেই অবশ্য সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, তারা তৃণমূল ও বিজেপিকে এক বলতে বিজেমূল বলেছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। কার সঙ্গে কার লড়াই, আর কে বড় শত্রু তা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। তিনি এও বলেছিলেন বিজেপিকে পরিচালনা করে ফ্যাসিবাদী আরএসএস। প্রসঙ্গত ভোটের সময়ে বিজেমূল নিয়ে গান ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে শেয়ার পর্যন্ত করেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র।
সীতারাম ইয়েচুরির নিশানা
রাজ্য কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি বিজেমূল প্রসঙ্গ না তুলেই প্রচারে বিভ্রান্তি নিয়ে রাজ্যের নেতাদের নিশানা করেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি বলেন, প্রচার থেকে পরিকল্পনা কোনওটাই ঠিক হয়নি। কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল প্রশ্ন করেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেই কি পার্টি প্রভাবিত হয়েছিল সেই প্রশ্নও তিনি করেন বলে জানা গিয়েছে। হারের কারণ হিসেবে ভুল রণকৌশলকেই তুলে ধরেন তিনি। প্রচারে সিপিএম মানুষের চাহিদাকে তুলে ধরতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। সেই সময় রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র স্বীকার করে নেন প্রচারে বিজেমূল শব্দ ব্যবহার করা ভুল হয়েছিল। পাশাপাশি তৃণমূল ও বিজেপিকে এক আসনে বসিয়ে দেওয়াটাও ভুল হয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করে নেন বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্য ও এরিয়া কমিটির বয়সসীমা বাঁধল আলিমুদ্দিন
কেন্দ্রীয় কমিটি আগে সদস্যদের বয়সসীমা বেধে দিয়েছিল। এবার তা করা হল রাজ্য কমিটি এবং এরিয়া কমিটির ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া রাজ্য কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, রাজ্য কমিটির ক্ষেত্রে বয়সসীমা থাকবে ৭০ বছর আর এরিয়া কমিটির ক্ষেত্রে তা থাকবে ৬৫ বছর। বিষয়টি নিয়ে ঘোষণা করেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সূত্রের খবর অনুযায়ী যা নিয়ে বৈঠকে শোরগোল ফেলে দেন রাজ্য কমিটির একাংশের নেতানেত্রীরা। প্রসঙ্গত এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে দলের সংগঠনে ব্যাপক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম।
রাজ্যের নেতাদেরই নিশানা
জানা গিয়েছে রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, সংগঠনে নতুন মুখের প্রয়োজন। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রবীন ও নবীন মুখের ভারসাম্য না রাখলে আদতে তা সংগঠনের আরও ক্ষতি করবে।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথমবার বামেদের সমর্থন হ্রাসের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর ২০০৯-এ বড় ধাক্কা। তারপর ২০১১-তে ক্ষমতা থেকে বিদায়। তারপর একের পর এর নির্বাচনে বামেদের তথা সিপিএম-এর সমর্থন আরও কমেছে। ২০২১-এর নির্বাচনে তা ফলের নিরিখে শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে।
তবে রাজ্য কমিটির বৈঠকে একাধিক সদস্য বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বকেই নিশানা করেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করেন প্লেনামে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল, তা এই রাজ্যে বাস্তবায়িত হয়নি। যার ফল গিয়ে পড়েছে সংগঠনে। যার জন্য বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররাই দায়ী বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়ে দিয়েছেন, সফল না হলে পদ ছাড়তে হবে নেতাদের, তা তিনি যতবড় নেতাই হোন না কেন।