পশ্চিমবঙ্গে জয়ের পরেই তৃণমূলের অভিযান
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জয়ের পরেই ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় তৃণমূল ঝাঁপিয়ে পড়ে ত্রিপুরায়। প্রথমে আইপ্যাকের টিম যায় সেখানে। সেই টিমকে হোটেলে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। তারপর বাংলা মিডিয়ার পাশাপাশি সর্বভারতীয় মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণে সেখানে পৌঁছে যান ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা। তারপরেই প্রথমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। কার্যত তৃণমূলের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বসে সেখানকার বিজেপির নেতা কর্মীরা। লড়াই জোরদার করতে সেখানে তৃণমূল পাঠায় বাছাই করা ছাত্র-যুব নেতানেত্রী দেবাংশু ভট্টাচার্য, জয়া দত্ত এবং সুদীপ রাহাকে। সেখানেও গণ্ডগোল। আমবাসা যাওয়ার পথে তাঁদের গাড়িতে হামলার অভিযোগ। পরে তাঁদের গ্রেফতার নিয়েও শোরগোল। ফের সেই রাজ্যে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছে দেন এখন থেকে প্রতি সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গের নেতারা যাবেন সেখানে। আর তিনি মাসে অন্তত দু থেকে তিনবার সেখানে যাবেন। ১৭ মাস বাদে তৃণমূল ত্রিপুরায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে বলে চ্যালেঞ্জ নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রয়েছে অন্য রাজনৈতিক অঙ্কও
তৃণমূল এইদফায় ত্রিপুরায় কার্যকলাপ শুরু করার পর থেকে সেখানকার লড়াই যেন পশ্চিমবঙ্গের মতোই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বাম কিংবা কংগ্রেসকে সেখানে দেখা যাচ্ছে না। ২০১৮-র নির্বাচনে রাজ্যে ৪৪ শতাংশ ভোট পাওয়া বামেদের ভোট ২০১৯-এর লোকসভায় প্রায় ১৭ শতাংশে নেমে যায়। আর দ্বিতীয়স্থানে উঠে আসে কংগ্রেস। অন্যদিকে পরবর্তী সময়ে এডিসির নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনে জয়ী হয় ত্রিপুরা ইন্ডিজেনাস প্রগ্রেসিভ রিডিওনাল অ্যালায়েন্স। এই জোটে রয়েছে ত্রিপুরা সরকারে বিজেপির সঙ্গে থাকা আইপিএফটি। যার প্রধান ত্রিপুরার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু কংগ্রেস ছেড়ে মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মন তিপ্রা মথা গঠন করেছেন এবং দিল্লিতে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে, তাতে, ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর জোট হয়ে যেতে পারে। আবার তৃণমূলও প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মনকে তাদের দিকে টানার চেষ্টা করতে পারে তৃণমূল। যা হলে বড় সমস্যায় পড়ে যাবে বিজেপি। অন্যদিকে বিজেপিতে থাকলেও প্রাক্তন তৃণমূলী সুদীপ রায় বর্মনকেও নিয়েও নানা জল্পনা। বামেদের শক্তি পশ্চিমবঙ্গের মতোই ত্রিপুরাতেও আরও কমবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। তাতে কারা লাভবান হবে তা নিয়ে রয়েছে অঙ্ক।
বিপ্লব দেবকে দিল্লিতে তলব
এরই মধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তলবে দিল্লিতে গিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। জানা গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে দিল্লিতে গিয়েছেন, ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি মানিক সাহাও। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে বিপ্লব দেবের দিল্লি যাওয়া আগে থেকেই ঠিল ছিল। সূত্রের খবর অনুযায়ী, সাংগঠনিক আলোচনা ছাড়াও অমিত শাহের ত্রিপুরা সফর নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা। কেননা অগাস্টেই ত্রিপুরা যাওয়ার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। তার সঙ্গেই ত্রিপুরা যাবেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ফলে বিপ্লব দেবের দিল্লি সফর যথেষ্টাই তাৎপর্যপূর্ণ।
২০২৩-এর লক্ষ্যে পরিকল্পনা
সুদীপ রায় বর্মন ত্রিপুরায় বিজেপি মন্ত্রিসভার বাইরে। অন্যদিকে মন্ত্রিসভাতেও তিন আসন ফাঁকা রয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যের জোট সরকারের অপর দল আইপিএফটিকে নিয়েও রয়েছে সমস্যা। ফলে সেইসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা। এর আগে দিল্লি গিয়ে কথা বলে এসেছিলেন সুদীপ রায় বর্মন। এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভার তিনটি ফাঁকা আসনে সুদীপ রায় বর্মন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক স্থান করে দিতে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। মন্ত্রিসভায় বড় পদ দেওয়া হতে পারে সুদীপ রায় বর্মনকে। পাশাপাশি সংগঠনেও বড় পরিবর্তন করা হতে পারে। একটাই লক্ষ্য ২০২৩-এর আগে তৃণমূলকে থামিয়ে দেওয়া। তবে বিভিন্ন পরিকল্পনায় বিজেপি কতটা সফল হল তা বলবে ভবিষ্যত।