ব্যাঙের বিয়ে থেকে ডিভোর্স! দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি-খরা ঘিরে কিছু আজব রীতি একনজরে

ভারতে বহু উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাঙকে খাওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে। শোনা যায়, যে উপজাতির মানুষ যে প্রাণী মেরে খেতে অভ্যস্ত বছরের পর বছর সেই উপজাতির মানুষকে কখনও কখনও সেই প্রাণীর নামেই ডাকা হয় দেশের বহু এলাকায়। উল্লেখ্য, উত্তরপূর্ব ভারতের বহু জায়গায় ব্যাঙকে খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে বলে শোনা যায়। আবার সেই ব্যাঙকেই বিয়ে দেওয়া হয় খরার আশঙ্কায়। এমন এক রীতি এশিয়ার বুকে ভারত ও বাংলাদেশের বহু স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক এই রীতি ঘিরে কিছু খুঁটিনাটি অজানা তথ্য।

বৃষ্টির দেবতাকে সন্তুষ্ট করার প্রক্রিয়া

ভারতে মূলত বর্ষার জলেই ধান চাষের রীতি আছে। বর্ষার জলই বলে দেয় সেই বছরের ফসল কেমন হবে। ফলে খরা হলেই শস্য শ্যামলা দেশের বহু কৃষিজীবী মানুষের মাথায় হাত পড়ে। আর বহু পুরনো আমল থেকে এই চাষের কাজকে বাঁচানোর জন্য জলভরতি মেঘের দিকে চাতকের মতো তাকিয়ে থাকেন কৃষকরা। সেই দিক থেকেই বৃষ্টির আশায় দেশের বিভিন্ন অংশে পালিত হয় ব্যাঙের বিয়ে। উপজাতিদের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে যে ব্যাঙের বিয়ে দিলেই বৃষ্টি নামবে। শস্য শ্যামলা হবে ধরা।

গায়ে হলুদ থেকে মন্ত্রোচ্চারণে বিয়ে

তবে এই ব্যাঙের বিয়ে যাহোক তাহোক করে সম্পন্ন করা হয় না। রীতিমতো পরম্পরা মেনে হিন্দুশাস্ত্র মতে ভারত ও বাংলাদেশের বহু জায়গায় ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। অসমের দিকে তথা গোটা উত্তরপূর্বের বিভিন্ন অংশে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ উচ্চারণ করে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। ফুলের মালা, লাল চেলি, ছায়া মন্ডপ দিয়ে এই বিশেষ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। শুধু বিয়ে নয়, তার আগে বিয়ের দিন সকালে আয়োজিত হয় গায়ে হলুদ, বিয়ের পর গ্রামের এলাকার বয়স্করা নতুন স্বামী ও স্ত্রী রূপী ব্যাঙকে আশীর্বাদও করেন। শোনা যায়, কোনও গ্রামে এই ব্যাঙের বিয়ের খবর পেলেই আশপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ সেখানে এসে ভিড় করেন। বিয়ের পর চলে হইহই করে খাওয়া দাওয়া।

অসমের রংদোই গ্রামে কীভাবে হয় ব্যাঙের বিয়ে!

শোনা যায়, যে বছর বৃষ্টি হয়না সেই বছর অসমের বুকে নানান জায়গায় ব্যাঙের বিয়ে হয়। এমনই অসমের একটি গ্রাম রংদোই । সেখানে ৩০০ জন স্থানীয়কে নিয়ে হই হই করে আয়োজিত হয় ব্যাঙের বিয়ের পরম্পরা। শাস্ত্র মতে সমস্ত মন্ত্র উচ্চারণ করে দেওয়া হয় বিয়ে। সেখানে কনে ব্যাঙকে ছোট্ট লাল চেলিতে সাজানো হয় । আর বর সাজা ব্যঙকে সাদা কিছু পরানো হয়। এমনই তথ্য শোনা যায় বহু জনের কাছ থেকে। বিশ্বাস করা হয় পরম্পরা মেনে এই ব্যাঙের বিয়ের জন্যই বহু বছরই খরার সমস্যা অসমে কেটে যায়। শোনা যায় অসমের জঙ্গলে বহু জঙ্গলি ব্যাঙ ধরতে বিয়ের দিনে কয়েকদিন আগে থেকে বের হন গ্রামবাসীরা। জঙ্গল থেকে ব্যাঙ ধরে এনে বিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামে যাঁরা অভিজ্ঞ তাঁরা সহজে চিনে ফেলেন কোন ব্যাঙ পুরুষ আর কোনটি নারী। সেই মতো শুরু হয়ে যায় বিয়ের আয়োজন।

জঙ্গল থেকে ধরে আনা ব্যাঙ কোথায় রাখা হয়?

শস্য শ্যামলা অসমের গভীর জঙ্গলের ভিতর থেকে ওই ব্যাঙগুলিকে ধরে এনে আলাদা আলাগ দুটি বাড়িতে রাখা হয়। গ্রামের দুটি আলাদা বাড়িতে এঁদের রেখে দেওয়ার পর বিয়ের আয়োজন শুরু হয়। আর বিয়ে হয় রীতিমতো রাজকীয় ঘরানায়। একবাড়ি থেকে বর-ব্যাঙকে নিয়ে কনে ব্যঙের বাড়ি যাওয়া হয়। তারপর হয় বিয়ে।

বাংলাদেশের রাজবাড়িতে ব্যাঙের বিয়ে

সদ্য বাংলাদেশে গত ২৩ জুলাই ব্যাঙের বিয়ের খবর শোনা যায়। সেখানে দিনাজপুরের রাজবাড়িতে আয়োজিত হয় ব্যঙের বিয়ে। বাড়ির শিশুরা নেচে গেয়ে এই বিয়ের আসর জমিয়ে দেয়। এছাড়াও প্রভাতফেরীর মতো করে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জোগাড় করে ব্যাঙের বিয়ের চাঁদা। বিভিন্ন বাড়ি থেকে আসে বিয়ের আসরের খরচের টাকা, চাল, খাবার ফুলের মালা, মরিচ, আদা , পেঁয়াজ , তেল। ৭ দিন আগে থেকে এই রাজবাড়িকে ঘিরে শুরু হয়ে যায় এই আয়োজন। এলাকার প্রতিটি বাড়ির মানুষকেই ব্যাঙের বিয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

পাতানো মা, রঙ-কাদা মেখে নাচ ও ব্যঙের বিয়ে

মূলত , বাংলাদেশের রীতিতে দেখা যাচ্ছে, যে বাড়িতে ব্যাঙগুলিকে রাখা হয়, সেই বাড়ির গৃহকর্ত্রীরাই ওই ব্যাঙ্কের মা হয়ে যান। ফলে বরের মা আর কনের মা আলাদা আলাদা বাড়ি থেকে আসেন। সঙ্গে মায়ের হাতে করে আসে ব্যাঙ বাবাজিরাও! ততক্ষণে বিয়ের মণ্ডপ কলাপাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়। শুরু হয় বিয়ে। ওদিকে, এলাকার ছোটরা ততক্ষণে রঙ মেখে, কাদা মেখে নাচতে থাকে।

উত্তরপ্রদেশে ব্যাঙের বিয়ে

হিন্দু ধর্ম মতে দেবরাজ ইন্দ্রকে তুষ্ট করতে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। এমন উদ্দেশ্য নিয়েই উত্তরপ্রদেশেও বৃষ্টির আশায় চলে ব্যাঙের বিয়ে। ফলে একটি থালায় সেখানে ব্যাঙকে রেখে , তাকে মালা পরিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয় বিয়ে। বাজে সানাই। চলে ব্যান্ডপার্টির গান।

হোটেল ভাড়া করে বিয়ে!

এদিকে, ভারতের দক্ষিণে রাজ্য কর্ণাটকে বৃষ্টির আশায় হোটেল ভাড়া করে ব্যাঙের বিয়ের ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। সেখানে উড়ুপিতে একটি হোটেল ভাড়া করে রীতিমতো রাজকীয় চালে এই ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে দুই ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের নামকরণও করা হয়েছে। একজনের নাম বরুণ, অন্যজন বর্ষা। একটি শুভ তিথি দেখে সিংহলগ্নে এদের বিয়ে দেওয়া হয় এলাকায় বৃষ্টির আশায়। ব্যাঙগুলিকে থালায় সাজিয়ে রীতিমতো আরতি করা হয়। তারপর বিয়ে শেষ হলে তাদের জন্য ভজনের আয়োজন করা হয়।

ব্যাঙের বিয়ের পর অতি বর্ষণে ডিভোর্স !

বৃষ্টি দেবতাকে খুশি করতে ব্যাঙের বিয়ে নিয়ে যে রীতি পালিত রয়েছে তা ঘিরেও বহু মজার ঘটনা উঠে আসে। ২০১৯ সালের এক রিপোর্টে জানা যায় যে এই ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হতেই মধ্যপ্রদেশে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। তারপর শেষে ওই ব্যাঙদের এলাকাবাসী ডিভোর্স দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

খবরের ডেইলি ডোজ, কলকাতা, বাংলা, দেশ-বিদেশ, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা, জ্যোতিষ - সব আপডেট দেখুন বাংলায়। ডাউনলোড Bengali Oneindia

More WEDDING News  

Read more about:
English summary
Frog Wedding Rituals : Places around India and Bangladesh had rituals of Frog marriage to please Rain god. Several bizzare incidents happends in Karnataka, Assam and Uttar Pradesh.