স্বাধীনতার ৭৫ বছর! ঘোচেনি রক্ত ঋণ, ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া অগ্নিযুগের বীর-বিপ্লবীরা

প্রায় দুশো বছরের বর্বর ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে আজ থেকে ৭৫ বছর আগে স্বাধীনতার স্বাদ পায় ভারত। কিন্তু পরাধীনতার গ্লানি মুছে ভারতের বুকে রক্তরাঙা বিপ্লবের পথা যারা প্রশস্ত করেছিলেন তাদের অনেকেই আজ বিস্মৃতির অতলে। 'নাম’ কুড়িয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের পথসারিতে থাকা বেশকিছু নেতা ও তাঁদের পরিবার। কিন্তু নরমপন্থী হোক বা চরমপন্থী, যে সমস্ত বিপ্লবীদের আমরণ লড়াই, দৃঢ় প্রত্যয় আর সীমাহীন দুঃসাহসিকতার কাঁধে ভর করে স্বাধীনতার রক্ত রাঙা সূর্য দেখল ভারত আজ তাদেরই ভুলতে বসেছি আমরা।

হারিয়ে যাওয়া সূর্যসেন

তবে এই স্বাধীন ভারতের মাটিতে আজও সেই সব বীর বিপ্লবীদেরও রক্ত লেগে আছে। তাঁদের রক্তেই স্বাধীন হয়েছে দেশ। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে মনে পড়ে যায় সেই সমস্ত অকুতভয় বীর বিপ্লবীদের কথা। আর তাদের কথা স্মরণ করতে গেলে প্রথমেই যার কথা মাথায় আসে তিনি হলেন বঙ্গ সন্তান মাস্টারদা সূর্য সেন। তার বিপ্লবী সংগ্রামের উপাখ্যান নিয়ে তৈরি বলিউডে তৈরি 'চিটাগং’ ছবিটি ইতিমধ্যেই সারা দেশেই সমাদৃত হয়েছে।তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লু্ণ্ঠনের ঘটনা। যদিও এই কাজকে লুন্ঠন বলা হবে নাকি ব্রিটিশ শক্তির চোখে চোখ রেখে অধিকার বুঝে নেওযয়ার লড়াই বলা হবে তা নিয়েও আজও বিতর্ক রয়েছে দেশজুড়ে।


ইতিহাসের পাতায় অলুরি সিতারাম রাজু

বিস্মৃতির পাতায় তলিয়ে যাওয়া বিপ্লবীদের কথা স্মরণ করলে শুরুতেই মাথায় আসে অলুরি সিতারাম রাজুর কথাও। এই আলুরি রাজু আবার মায়ানাম বীরুদু নামেও পরিচিত। ইতিহাস বলছে ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চলা 'রাম্পা বিদ্রোহের' নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অলুরি সিতারাম রাজু। ১৮৮২ সালে আসা মাদ্রাজ বন আইনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর থেকেই গোটা দেশ চিনতে থাকে তাঁকে।

বেগম হযরত মহল

ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভুলতে বসা অন্যতম বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম বেগমের হযরত মহল। ইতিহাস বলছে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ শাসনকালেই লখনউয়ের উপর তার কর্তৃত্বের কথা আজও মনে রেখেছেন বিপ্লবের পৃষ্ঠপোষেকেরা। তার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

করতার সিং সরভা

অন্যদিকে গদর বিপ্লবের অন্যতম প্রধান স্থপতি হলেন এমন একজন যিনি ভগৎ সিংকে তাঁর গুরু মনে করতেন। আর সেই বীর বিপ্লবীই হলেন করতার সিং সরভা। সরভা পড়াশুনার জন্য আমেরিকা গেলেও ফিরে এসে ১৯১৩ সালে গদর পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ শুরু করা। কিন্তু নিজ দলেই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন তিনি। অবশেষে তাঁকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। দেওয়া হয় ফাঁসি।

বীরযোদ্ধা লক্ষ্মী সেহগল

অন্যদিকে স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যাওয়া বীর বিপ্লবীদের কথা বলতে গেলে অবশ্যই শুরুতে স্মরণ করতে গয় লক্ষ্মী সেহগলকে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন লক্ষ্মী সেহগল। ইতিহাস বলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সেনার হয়ে লড়াই করার অভিজ্ঞতাও ছিল নেতাজীর অন্যতম প্রধান এই সেনানীর। এমনকী ভারতের মহিলা বিপ্লবীদের তালিকাতেও একদম শুরুতেই স্মরণ করা হয় তাঁকে।

অগ্নি যুগের কনকলতা

১৭ বছরের সংগ্রামী কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া জন্মেছিলেন অসমে। যে বয়সে মেয়েরা এখন সদ্য কলেজে পড়তে শুরু করে সেই বয়সেই বিপ্লবী কনকলতা বড়ুয়া স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। রক্তের ঋণেই স্বাধীন করেছিলেন গোটা দেশকে। ১৯৪২ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের 'ভারত ছাড়’ আন্দোলনের অসমের গওপুরে ব্রিটিশ বাহিনীর চোখে চোখ রেখে লড়েছিলেন এই অগ্নিকন্যা।

স্মৃতির পাতায় পিঙ্গালী ভেঙ্কাইয়া

পিঙ্গালী ভেঙ্কাইয়া ছিলেন একাধারে ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী আবার একাধারে ভারতের জাতীয় পতাকার প্রধান নকশাকারও ছিলেন তিনি। তবে জাতীয় পতাকার নকশা নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক থাকলেও পিঙ্গালী ভেঙ্কাইয়ার নামই সর্বাধিক ক্ষেত্রে শোনা যায়। ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল পরাধীনতার বন্ধন থেকে দেশ-কে মুক্ত করার। মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতেও যোগদান করে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গেও প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন পিঙ্গালী।

বিপ্লবী মদন লাল ধিংরা

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম বিশেষ ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী ছিলেন এই মদন লাল ধিংরা। তাঁর জন্ম ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ সালে। মৃত্যু ১৭ অগাস্ট, ১৯০৯ সালে। তিনি যখন পড়াশোনার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন সেখানে তিনি কার্জন উইলিকে লন্ডন শহরে প্রকাশ্যেই গুলি করে হত্যা করেছিলেন বলে জানা যায়। এই অপরাধে তাঁকে ফাঁসি দেয় ব্রিটিশ সরকার।

More INDEPENDENCE DAY News  

Read more about:
English summary
75 years of independence india s hero revolutionary in the pages of history