প্রস্তুতিতে খামতি
বজরং পুনিয়া নিজেও হতাশ দেশকে কুস্তিতে কাঙ্ক্ষিত সোনা এনে দিতে না পেরে। টোকিও অলিম্পিকের আগে হাঁটুর চোট তাঁর প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। অলিম্পিকের আগে শেষ র্যাঙ্কিং ইভেন্ট পোল্যান্ড ওপেন থেকে সরে দাঁড়ান বজরং। তার কাছে পয়েন্ট বাড়ানো নয়, অলিম্পিকের প্রস্তুতিই ছিল প্রাধান্যের বিষয়। রাশিয়াতে তিনি গিয়েছিলেন অনুশীলনের জন্য। সেখানেই একটি স্থানীয় প্রতিযোগিতা আলি আলিয়েভ টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার মাশুল দিতে হয় ডান পায়ের হাঁটুতে চোট পেয়ে। গত ২৫ জুন অনূর্ধ্ব ২৩ ইউরোপীয় রুপোজয়ী আবুলমাঝিদ কুদিয়েভের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল বাউটেই চোট লাগে বজরংয়ের। যে চোটের কারণে তিনি সপ্তাহ তিনেক অনুশীলনই করতে পারেননি। বজরং জানিয়েছেন, অলিম্পিকের আগে একদিন অনুশীলন করতে না পারাই যেখানে বড় ক্ষতি, সেখানে আমি দিন পঁচিশ ম্যাট ট্রেনিংই করতে পারিনি। চোট লাগার পর ভালোভাবে দৌড়াতেই পারছিলাম না।
ঝুঁকি নিয়ে
টোকিও অলিম্পিকে প্রথম তিন বাউটে একেবারেই চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি বজরংকে। সেমিফাইনালে পরাস্ত হতেই শেষ হয়ে যায় সোনা বা রুপো জয়ের আশা। যদিও ব্রোঞ্জ জয়ের ম্যাচে নিজের চেনা ছন্দে ট্যাকটিক্যাল ও অ্যাগ্রেসিভ গেম খেলে পদক নিশ্চিত করেন ভারতীয় এই কুস্তিগীর। নিয়েছিলেন বিশাল ঝুঁকি। সাপোর্ট স্টাফদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে হাঁটুর কোনও প্রোটেকশন না নিয়েই ব্রোঞ্জ জয়ের ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। কপাল ভালো, হাঁটুর সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা না নিয়েও ফের কোনও বড় বিপদ হয়নি। এ প্রসঙ্গে বজরং বলেন, আমার কোচ ও ফিজিও বলেছিলেন হাঁটুতে ব্যান্ডেজ বেঁধেই নামার জন্য। কিন্তু এতে আমার একটা অস্বস্তিবোধ হয়। মনে হয় হাঁটুটা যেন কেউ ধরে রেখেছে। তাই আমি কোচ ও ফিজিওকে বলি, আমার চোট লাগলে বিশ্রাম নিতে পারব। কিন্তু পদক জিততে না পারলে সব পরিশ্রমই বৃথা যাবে। তাই অল আউট ঝাঁপাই। রাশিয়াতে চোট লাগার পর চিকিৎসকরা ভারতে ফিরে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু তখন তাঁদের জানাই এটা সম্ভব নয়। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। তাই রাশিয়ার একটি গ্রামেই রিহ্যাব চলে এবং আমার যা প্রয়োজন ছিল তার সব ব্যবস্থা করেছিল মস্কোর ভারতীয় দূতাবাস।
প্যারিসে সোনার লক্ষ্যে
পোল্যান্ড ওপেন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও কেন রাশিয়ার প্রতিযোগিতায় নামার সিদ্ধান্ত নিলেন সেই প্রশ্নের উত্তরে বজরং বলেন, অনুশীলনের সময়ও চোট লাগতে পারে। টুর্নামেন্টে যেহেতু সবাই ফোকাসড থাকেন, ফলে অনুশীলনেই চোট বেশি লাগার সম্ভাবনা। কেন না, অনুশীলনে আমরা নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি। আমি অলিম্পিকের আগে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, তা যাচাই করতেই ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। প্যারিস অলিম্পিক অবধি ৬৫ কেজি বিভাগেই লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন বজরং। তিনি বলেন, এখনই ৭৪ কেজিতে যাওয়ার কোনও ভাবনা নেই। সামনের বছর কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমস রয়েছে। এখানে সোনা হাতছাড়া করলাম। কিন্তু আমার দুর্বলতাগুলি ঠিকঠাক করে নিয়ে প্যারিসে সোনাই জিততে চাই।
মায়ের হাতের রান্নার প্রতীক্ষায়
দেশে ফিরে রিহ্যাব শুরু করবেন বজরং। অক্টোবরে অংশ নেবেন নরওয়েতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। সেমিফাইনালে হারের পর বজরং কারও সঙ্গে কথা বলেননি। ঘরের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তিনি জানান, ঘুমোতে চেয়েও পারছিলাম না। সেদিন রাতে ঘণ্টা ২-৩ হয়তো ঘুমিয়েছি। মেজাজটাই বিগড়ে গিয়েছিল, কারও সঙ্গে কথাই বলিনি। আপাতত ব্রোঞ্জ জিতে দেশে ফিরে মায়ের হাতের চুরমা খাওয়ার জন্য প্রহর গুনছেন বজরং। তিনি যখনই বাড়িতে ফেরেন তাঁর জন্য এই বিশেষ খাবার প্রস্তুত করেন মা ওম পেয়ারী। বজরং বলেন, জিতি বা হারি, বাড়ি গেলেই চুরমা তৈরি থাকে এবং তা খাই। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা আমার কাছে কোনও সমস্যাই নয়। দেশ থেকে আরও প্রতিভা তুলে আনতে স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে খেলাধুলোকে চিন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বজরং। দেশবাসীর প্রত্যাশার চাপে তিনি নিজে উৎসাহিতও বোধ করেন। বজরংয়ের কথায়, অনেক নতুন অ্যাথলিটকে দেখি প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়তে। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টা তেমন নয়। বরং দেশবাসী আমার কাছে পদকের আশা করছে ভেবে ভালোই লাগে। যখন খেলি, খেলি খোলা মনেই।