তৃণমূল আর বিজেপি- দু-দলের আর গড়াপেটা নেই
২০২১-এর নির্বাচনে হারের পর সিপিএমের উপলব্ধি, তৃণমূল আর বিজেপি- এই দু-দলের আর গড়াপেটা নেই। দুই দলই এখন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনই তা প্রমাণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সিপিএমের তা বুঝতে দু-বছর সময় লেগে গেল। তাই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও একই অবস্থান নিয়ে লড়াই চালিয়েছে বাংলার লাল-পার্টি।
তৃণমূল ও বিজেপিকে একাসনে রেখে লড়াই করবে না সিপিএম
সিপিএম এতদিনে বিজেপি ও তৃণমূলের গড়াপেটা বা মোদী-মমতা সেটিংয়ের তত্ত্ব থেকে সরে এসে লড়াইয়ের ক্যাচলাইন ঠিক করতে চলেছে। তার জন্যই পাঠচক্রে ডাকা হয়েছে দলের সমস্ত শাখা কমিটি। তার আগে সাফ করে দেওয়া হয়েছে- আর তৃণমূল ও বিজেপিকে একাসনে রেখে লড়াই করবে না সিপিএম।
গোটা বামফ্রন্টের অস্তিত্বই বিলোপ হতে বসেছে
সিপিএম এবার বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য হয়ে গিয়েছে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে সিপিএমের অস্তিত্ব। গোটা বামফ্রন্টের অস্তিত্বই বিলোপ হতে বসেছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিধানসভায় কোনও বাম-সদস্য নেই। এবার একটি আসনও জোটেনি বামফ্রন্টের। কেবলমাত্র সংযুক্ত মোর্চার তরফে আইএসএফ একটি আসনে জিতেছে। তৃণমূল আর বিজেপি ভাগ করে নিয়েছে রাজ্যের বাকি আসন।
তৃণমূলের এক ও একমাত্র বিরোধী বিজেপি
সিপিএমের যুক্তি, ২০১৯-ও মূল লড়াই হয়েছিল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। সিপিএম তথা বামফ্রন্ট একটি লোকসভা আসনও দখল করতে পারেনি। কংগ্রেস দুটি আসনে জয় লাভ করেছিল। বাকি ৪০টি ভাগ করে নিয়েছিল তৃণমূল ও বিজেপি। তৃণমূল ২২ এবং বিজেপি ১৮। তখন থেকেই তৃণমূলের এক ও একমাত্র বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি।
তৃণমূল ও বিজেপি একই কয়েনের দু-পিঠ! তত্ত্ব ফেল
তারপর ২০২১-এর পর রাজ্য বিধানসভায় এখন তৃণমূল আর বিজেপি। তৃণমূল একাই ২১৩ এবং বিজেপি ৭৭। কংগ্রেস ও সিপিএমের কোনও বিধায়ক নেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম চাইছে না তৃণমূল ও বিজেপি একই কয়েনের দু-পিঠ তত্ত্ব নিয়ে প্রচার চালাতে। তাতে তৃণমূল ও বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ ও ২০২১ প্রমাণ- গড়াপেটা আর নেই
সিপিএমের সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র আগেও জানিয়েছিলেন, বিজেপি ও তৃণমূলকে এক করে ফেললে হবে না। গড়াপেটার তত্ত্ব বা সেটিংয়ের তত্ত্ব আর খাটবে না। তাই এবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে নোট লিখে তিনি বার্তা দিলেন বিজেপি-তৃণমূলকে এক করে আর লড়াই করলে হবে না। ২০১৯ ও ২০২১ প্রমাণ করেছে দু-দলের আর গড়াপেটা নেই।
আগে বিজেপি, তারপর তৃণমূলের বিরোধিতা
সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বঙ্গ সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করে ফেলেছেন, বিজেপিকে এবার আলাদা করে মোকাবিলা করা হবে। তৃণমূল বিরোধিতা তাঁর পরে। উভয়ের বিরোধিতাই তাঁরা করবে, কিন্তু আগে বিজেপি, তারপর তৃণমূলের বিরোধিতা। তৃণমূল আর বিজেপির সঙ্গে সমান দূরত্ব রেখে এতদিন চলে এসেছে সিপিএম। এবার একটু আগুপিছু করে আক্রমণ শানানো হবে।
শূন্যে নেমে বোধোদয় সিপিএমের
সিপিএম মনে করে, বিজেপি আর অন্য কোনও দল (সেটা তৃণমূলও হতে পারে) এক নয়। আগে কোনওদিন বিজেপি-তৃণমূলের সেটিং থাকলেও ২০১৯-এর পর থেকে দু-দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই দেখে এসেছে বাংলা। তাই বিজেমূল প্রচার করে কোনও ফায়দা হবে না তা আগেই বোঝা উচিত ছিল সিপিএমের। কিন্তু সিপিএম দু-বছর দেরি করে ফেলেছে। সেই ভুলের ফলে সিপিএম এখন শূন্যে নেমে এসেছে।
বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলা এবার পৃথকভাবে
সিপিএম শূন্য থেকে শুরু করতে চাইছে। তারা এবার বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলা করবে পৃথকভাবে। সিপিএমের মূল্যায়ন, বিজেপি নামক ফ্যাসিবাদী শক্তিকে অন্য কোনও দলের সঙ্গে না মিশিয়ে পৃথকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। তাই নেতা-কর্মীদের নোট লিখে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিজেপি-তৃণমূল সমান আমরা এ কথা আর বলব না। বিজেমূল স্লোগানও তুলব না।
আমরাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছি ছোট্ট ভুলে
সিপিএম মনে করে, মানুষকে বিভ্রান্তির মুখে ফেলে দেওয়াতেই সিপিএমের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে গিয়েছে। মানুষ বুঝতে পারেনি আমাদের অবস্থান। আমরা বিজেপি বিরোধিতা করছি, নাকি তৃণমূল বিরোধিতা করছি, তা স্পষ্ট হয়নি। অর্থাৎ আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি আমাদের প্রধান শত্রু কে। কার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। দুজনকে সমান চোখে দেখতে গিয়ে আমরাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছি।