ব্রিটেনের আড়াই লক্ষ শিশুকে নিয়ে গবেষণা
করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়েভে শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে এরকম সংখ্যা নেহাতই কম। তবে তৃতীয় ওয়েভে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অন্যবারের তুলনায় বেশি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তা নিয়ে এখনও কিছু প্রমাণিত হয়নি। অপরদদিকে এই নতুন সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন লন্ডনের কিং কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ, নিউ কাসেল ইউনিভার্সিটি এবং লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষকরা সহ অন্যান্যরা। এই সমীক্ষায় গবেষণার জন্য গবেষকরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্রিটেনের আড়াই লক্ষ শিশু, যাদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছর, তাদের তথ্য সংগ্রহ করেন। এদের মধ্যে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭৩৪ জন শিশুর রিপোর্ট সংগ্রহের ওপর গবেষক দলের আগ্রহ বেশি ছিল।
৬ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছে শিশুরা
গবেষকরা তাঁদের গবেষণায় দেখেছেন যে অসুস্থ হওয়া অধিকাংশ শিশুই গড় ৬ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে। উপসর্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথা ধরা (৬২.২ শতাংশ) ও ক্লান্তিভাব (৫৫ শতাংশ) দেখা গিয়েছিল। একমাস ধরে করোনার উপসর্গ থাকার পর অধিকাংশ শিশুই চার সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে এরকম শিশুর সংখ্যা কম (৪.৪ শতাংশ বা ১,৭৩৪ জনের মধ্যে ৭৭ জন)। অন্যদিকে, যে সব শিশুর সুস্থ হতে একমাসের বেশি সময় লেগেছিল তাদের অসুস্থ হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ৬টি উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। তবে এই উপসর্গগুলি মাঝারি ছিল। যদিও ২৮দিন পর ২টি উপসর্গের মাঝারি প্রভাব কমতে দেখা দেয়।
কোন উপসর্গ বেশি দেখা গিয়েছে
এই ৭৭ জন শিশুর গোটা অসুস্থতার সময়কালে ক্লান্তি, মাথা ব্যাথা, গন্ধ না পাওয়া এবং গলায় ব্যাথা এই ধরনের সাধারণ উপসর্গ বেশি দেখা গিয়েছে। যদিও অসুস্থতার প্রথমদিকে মাথা ব্যাথা খুবই সাধারণ একটি লক্ষণ এবং গন্ধ ও স্বাদ চলে যাওয়ার মতো উপসর্গ পরে ধরা পরে এবং তা অনেকদিন থাকে। গবেষণা শেষ হওয়ার কমপক্ষে ২ মাস আগে ১,৩৭৯ শিশুর মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের মধ্যে ২ শতাংশের কম শিশু আট সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপসর্গ অনুভব করে।
বেশি বয়সের শিশুদের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগছে
তবে ১১ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের সুস্থ হতে একটু বেশি সময় লেগেছিল বলে গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন যে ১২-১৭ বছরের শিশুদের সুস্থ হতে সাতদিন সময় লেগেছে অন্যদিকে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের সুস্থ হতে সময় লেগেছে পাঁচদিন। একটু বেশি বয়সের শিশুদের ছোট শিশুদের তুলনায় চার সপ্তাহ পরেও উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল (১২-১৭ বছর শিশুদের মধ্যে ৫.১ শতাংশ ও ৩.১ শতাংশ ৫ থেকে ১১ বছরেপ শিশু)। তবে এই দু'টি বয়সের শিশুদের মধ্যে অনেকেরই আট সপ্তাহ পরও উপসর্গ ছিল।
করোনা ভাইরাস বনাম শৈশবকালীন অসুস্থতা
তবে গবেষকরা এও দেখেছেন যে কোভিড-১৯ নেগেটিভ ও সর্দি-কাশির মতো অন্যান্য শৈশবের অসুস্থতায় ভুক্তভোগী শিশুদের মধ্যে কোভিড উপসর্গ শিশুরা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকে। সেই তুলনায় শৈশবের অসুস্থতা রয়েছে এমন শিশুরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে শিশুদের ওপর কোভিডের প্রভাব কতটা পড়তে পারে এ নিয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছেন বলে মনে করছেন গবেষকরা। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদেরকেও কোভিড যথাযথ আচরণ বিধির আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং এই সময় শিশুরা বাড়ির বাইরে কম বেরোলে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেশি।