প্রত্যাশা মতো ভ্যাকসিন পাচ্ছে না দেশ
প্রসঙ্গত, গত ৩০ মে কেন্দ্র দেশকে আশ্বস্ত করেছিল যে জুন মাসে ১১,৯৫,৭০,০০০ কোভিড ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করা হবে। কিন্তু জুন মাসে সরবরাহ হয় ১১.৪৬ কোটি ডোজ, যা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সামান্য কম। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিন্তু প্রত্যাশিত হিসাবে টিকা দেওয়ার মাত্রা অর্জন করা হয়েছিল। তবে মে মাসে ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ৯৪.০২ কোটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকাকরণ শুরু হওয়ার পর থেকে জুন মাসে তা ব্যাপক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, মে মাসে দৈনিক গড়ে ১৯,৬৯,৫৮০ টিকাকরণের হিসাবে মোট টিকাকরণ হয়েছে ৬,১০,৫৭,০০৩।
৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক টিকা পেয়েছে
টিকাকরণের ১৯৭ দিন পর দেশে এখনও পর্যন্ত ৪৭,০২,৯৮,৫৯৬ কোটি জন বা ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক টিকা পেয়েছেন। ৫০ শতাংশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩৯ শতাংশ প্রথম ডোজ নিয়েছেন এবং মাত্র ১১ শতাংশের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ১৩৬.১৩ কোটি ভারতীয় জমসংখ্যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩৪.৫৫ শতাংশ কোভিড টিকা গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২৭ শতাংশ এবং মাত্র ৭.৬ শতাংশ পেয়েছেন সম্পূর্ণ ডোজ।
সামনে রয়েছে বিরাট কাজ
টিকাকরণের সাম্প্রতিক সংখ্যাকে সামনে রেখে দেশের ৯৪.০২ কোটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৪৬.৯৯ কোটি জনসংখ্যার টিকাকরণ হয়নি। এছাড়াও টিকাকরণ হয়েছে এমন ৪৭ কোটির মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৩৬.৬৮ কোটি। সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে এমন জনসংখ্যার তুলনায় প্রথম ডোজ পেয়েছেন এরকম জনসংখ্যাদের মধ্যে পুনরায় কোভিড-১৯ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মোট ১৩৬.১৩ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে দেশে এখনও ৮৯.১ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পাননি এখনও। এর অর্থ এই যে কোভিড যথাযথ আচরণ অনুসরণ না করলে তৃতীয় ওয়েভের নিশানায় রয়েছে বৃহৎ সংখ্যার জনসংখ্যা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৪০,১৩৪, মৃতের সংখ্যায় সামান্য পতন
টিকাকরণের পদ্ধতি তরান্বিত করতে হবে
জানা গিয়েছে, এপ্রিল ও মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের সময় ভারতে সামগ্রিক টিকাকরণের পদ্ধতি বেশ ধীরগতিতে ছিল এবং কেরল, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপূর্ব রাজ্যে যেভাবে করোনা কেস বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে হয়ত তৃতীয় ওয়েভ খুব শীঘ্র পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেবে না। কেরল, মহারাষ্ট্র, অসম, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মিজোরাম এবং মণিপুর সহ ১০টি রাজ্যে উচ্চ পজিটিভ হারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এই ১০ রাজ্যের ৪৬টি জেলায় পজিটিভ হার ১০ শতাংশের ঊর্ধ্বে আছে। মে এবং জুন মাসে দেশে টিকাকরণের হার বৃদ্ধি পেলেও দৈনিক গড় টিকাকরণ এখনও অনেক কম, যেটা দৈনিক ২৩.৮৭ লক্ষ। এই হারে দৈনিক গড় টিকাকরণ চললে, দেশের পুকো প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যাকে কমপক্ষে প্রথম ডোজ গ্রহণ করানোর জন্য এখনও ৫৬ সপ্তাহ বা ১৩ মাস সময় লাগবে। এইমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তৃতীয় ওয়েভ আসার সতর্কতা জারি করে পরামর্শ দিয়েছেন যে এই সময়ের মধ্যে যত বেশি সংখ্যক দেশের নাগরিকদের টিকাকরণ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু দেখা গিয়েছে যে কোভিড যথাযথ আচরণ বিধি না মানার ফলে এই মাসেই অনেক রাজ্যে তৃতীয় কোভিড ওয়েভ আসার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ একাধিক রাজ্যে করোনা কেস বাড়ছে। মে মাস থেকেই ভারত টিকাকরণ পদ্ধতি তরান্বিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, দৈনিক ও মাসিক টিকাকরণের গতি জুন-জুলাই মাসে বৃদ্ধি পেলেও ভারতের দুই প্রধান ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিনের সীমিত সংখ্যার প্রস্তুতিকরণ টিকাকরণ দ্রুত করায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। ভারত রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনও আমদানি করেছে কিন্তু তাও সীমিত সংখ্যায় রয়েছে। ভারত বর্তমানে দু'টি ডোজের ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে।
অগাস্টের ২৫ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্য
অগাস্টের জন্য যে লক্ষ্য তৈরি করে রাখা ছিল তা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে ভারতের। কোভিড-১৯ ক্ষমতায়ন গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ডাঃ এন কে অরোরা ৩১ মে জানিয়েছিলেন যে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিনের উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অগাস্টে ভারতে ২৫ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহের কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া জুনের শেষে কোভিশিল্ডের উৎপাদনের ক্ষমতা ১০-১২ কোটি ডোজ বৃদ্ধি করে। জুলাইয়ের শেষে একই সংখ্যার ডোজ বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত বায়োটেকও। অরোরা নিশ্চিত করে এও জানিয়েছিলেন যে এই দু'টি ছাড়াও অন্যান্য ভ্যাকসিন ও রাশিয়া থেকে স্পুটনিক ভি-এর সরবরাহ হবে। কারণ অগাস্টে দৈনিক এক কোটি টিকাকরণের লক্ষ্য রয়েছে। তবে ডাঃ ভিকে পালের জানিয়েছেন যে ভারত এর আগে যা পরিসংখ্যান দিয়েছিল তার অনেক কম ১৫ কোটি টিকাকরণ করানোর প্রত্যাশা রয়েছে অগাস্টে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, জুলাইতে ভারত কোভ্যাকসিনের আড়াই কোটি ডোজ গ্রহণ করেছে এবং অগাস্টে সাড়ে তিন কোটি ডোজ পাওয়ার আশা রয়েছে। যদিও কথা ছিল জুলাইতে কোভ্যাকসিনের ৬ কোটি ভ্যকসিন ডোজ পাওয়ার। সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, কোভ্যাকসিন মাসে প্রায় ১০-১২ কোটি ডোজ সরবরাহ করতে না পারার ফলে প্রায় ২৫ কোটি ভারতীয়দের টিকা দেওয়ার অগাস্টের লক্ষ্যমাত্রা শুধু হ্রাস পায়নি বরং এটি জুলাইয়ের মধ্যে ৫১.৬ কোটি ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য থেকে বঞ্চিত করতেও সরকারকে চাপ দিয়েছে।