অমরজিৎ সিনহা কি সত্যিই ইস্তফা দিলেন?
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অমরজিৎ সিনহাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৮৩ ব্যাচের আইএএস অফিসার অমরজিৎ কর্মসূত্রে মোদীর ঘনিষ্ঠ বলেই শোনা যেত। এদিকে, গত বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় দেশে করোনার প্রকোপ। তার মাঝে বহু সময় ই করোনা মোকাবিলায় মোদী সরকারের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। এরপর করোনার দ্বিতীয় স্রোত আসতেই মোদী সরকার সমালোচনার মুখোমুখি হয় বিদেশী মিডিয়ার কাছ থেকেও।
ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে
তবে আদৌ এই আইএএস অফিসার নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠতে থাকে যে কেন বা কী কারণে এমন দাপুটে আইএএস অফিসার নিজের পদ ছেড়েছেন? যদিও বিষয়টি নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতি ও মোদী মন্ত্রিসভা
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই করোনা পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় স্রোতের পরই দেখা গিয়েছে মোদী মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদল হয়। বাবুল সুপ্রিয় সহ বাংলার দুই হেভিওয়েটকে সরিয়ে সেখানে বাংলা থেকে কয়েকজন জায়গা করে নেন। এদিকে, কেন্দ্রীয় হেভিওয়েট মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর থেকে শুরু করে রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো দাপুটে বিজেপি মন্ত্রীরা ক্যাবিনেট থেকে সরে যান। মন্ত্রিসভা থেকে পর পর ইস্তফার খবরে কার্যত জাতীয় রাজনীতি। তারপরই অমরজিৎ সিনহার মতো মোদী ঘনিষ্ঠের পদত্যাগের খবর এদিন চাউর হতে থাকে। যা ঘিরে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এদিকে, মোদী মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে নানা মহলে নানা প্রশ্ন ওঠে। দাপুটে নেতাদের পর পর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেসের মতো দল। প্রশ্ন ওঠে কেন আচমকা এই এতজন হেভিওয়েট নেতা একসঙ্গে পদত্যাগ করলেন? স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষ বর্ধনের পদত্যাগ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি মমতাও। এদিকে আসন্ন ২০২২২ সালে পর পর রাজ্যে বিধানসভা ভোট ও ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে মোদীমন্ত্রিসভা থেকে এই হাই প্রোফাইল মন্ত্রীদের পদত্যাগ অনেকের মনে বহু কৌতূহলের সঞ্চার করেছিল। উল্লেখ্য,কোভিডের মারণ পরিস্থিতিতে যখন দ্বিতীয় স্রোতে জেরবার দেশ, তখন বহু বিদেশী মিডিয়া মোদী মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে পর পর রিপোর্ট প্রকাশ করে। অনেকেই এই ইস্যুতে মোদীর কড়া সমালোচনা করে। এরপর ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ২০২১ এর প্রথমার্ধে ভরাডুবির মুখে পড়ে বিজেপি। এদিকে, ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশে রয়েছে বিধানসভা ভোট। তার আগে '২১ সালে করোনার দ্বিতীয় স্রোতের মধ্যে সেরাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কার্যত বড় ভরাডুবির মুখে পড়ে বিজেপি। তারপর নরে্ন্দ্র মোদীর পরামর্শদাতা অমরজিৎ সিনহার পদত্যাগের রিপোর্ট রীতিমতো প্রাসঙ্গিত হয়ে উঠছে। একাধিক মহল এই পদত্যাগের তথ্যকে কেবলই জল্পনা বলে উড়িয়েও দিচ্ছে। তবে এবিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকে তাকিয়ে সব মহল।
অমরজিৎ সিনহা সম্পর্কে তথ্য
প্রসঙ্গত, অমরজিৎ সিনহা আইএএস হিসাবে দীর্ঘ সময় ধরে ভারত সরকাররে অধীনে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি নিজের পদ থেকে অবসর নিলে , তারপর তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ দাতা হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এর আগে তিনি গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব হিসাবে বহু বছর ধরে ভারত সরকারের সেবা করেন। সেই দফতরের একজন দাপুটে অফিসার হিসাবে তাঁর পরিচিতি সকলেরই জানা। তাঁর সঙ্গে সেই দফতরেই ছিলেন ভাস্কর কুলবে নামের আরও এক দাপুটে আইএএস অফিসার। তবে আচমকা অমরজিৎ সিনহার পদত্যাগ বহু প্রশ্ন ও জল্পনার সঞ্চার করেছে।
পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রকে বড় পদে ছিলেন!
শোনা যায়, পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রকে থাকাকালীন অমরজিৎ সিনহা ধীরে ধীরে দাপুটে অফিসার হিসাবে উঠে আসতে থাকেন। গ্রামীন উন্নয়ন তাঁর নিজের এলাকার সবচেয়ে বড় উন্নয়নের জায়গা ছিল। এই মন্ত্রকের আমলা হিসাবে তিনি বহুমুখী উন্নয়ন করেছেন বলে জানা যায়। তাঁর আলাদা করে বিশেষ ভূমিকা এই মন্ত্রকের আমলা হিসাবে বহু জায়গায় সমাদৃত হয়।
কোন কোন স্কিমে কাজ?
জানা যায়, ন্যাশনাল রুরাল হেল্থ স্কিমের ক্ষেত্রে অমরজিৎ সিনহার অবদান অতুলনীয়। এছাড়াও দেশে যুগান্তকারী সর্বশিক্ষা অভিযানের ক্ষেত্রেও অমরজিৎ সিনহার অবদান বেশ প্রাসঙ্গিক হয়েছিল। এছাড়াও লালবাহাদুর শাস্ত্রী অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অমরজিৎ সিনহা বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন পড়ুয়াদের।