৮ বছর বয়স থেকে শুরু
ক্রিকেট পাগল ভারতে ব্যাডমিন্টনে আসর মাত করা পিভি সিন্ধু এখন এ দেশের অন্যতম ক্রীড়া সেনসেশন। পরপর দুই অলিম্পিক থেকে পদক জয় করা মুখের কথা নয়। কুস্তিগীর সুশীল কুমারের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে সিন্ধুর কীর্তিতে আপ্লুত হয়েছে দেশ। সেই সঙ্গে এও সত্যি যে এই ঐতিহাসিক সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নিরলস পরিশ্রম। আট বছর বয়স থেকে ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে লেগে রয়েছেন সিন্ধু। ভারতের কিংবদন্তি প্রাক্তন শাটলার তথা কোচ পুল্লেলা গোপীচাঁদ যে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চির ব্যাডমিন্টন তারকার জীবনে গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করেন, তা বরাবারই স্বীকার করেন হায়দরাবাদি শাটলার। প্রাক্তন জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড় বাবা এবং মাও পিভি-র কেরিয়ার গ্রাফকে উর্ধ্বমুখী করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেন।
সিন্ধুর বেড়ে ওঠা
১৯৯৫ সালের ৫ জুলাই হায়দরাবাদে জন্ম হয়েছিল পিভি সিন্ধুর। বাবা রমন সিন্ধু দেশের জাতীয় দলের প্রাক্তন ভলিবল খেলোয়াড়। তিনি ১৯৮৬ সালে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। রমন সিন্ধুকে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত করেছিল ভারত সরকার। প্রাক্তন স্পোর্টসম্যান হওয়ার স্বার্থে পিভির স্বপ্ন চিনতে ভুল করেননি তাঁর মাও। ফলে ক্রীড়া পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা সিন্ধু যে বাড়ি থেকেই বিশ্বসেরা হওয়ার প্রথম পাঠ পেয়েছিলেন, তা বলাই বাহুল্য। কেবল প্রয়োজন ছিল তাঁকে সঠিক পথে সঞ্চালিত করা। সেই কাজটিও দুর্দান্তভাবে সেরেছিলেন পিভি-র অভিভাবকরা। ব্যাডমিন্টনেই যে লুকিয়ে মেয়ের সাফল্য, তা বুঝে গিয়েছিলেন রমন ও তাঁর স্ত্রী। আজ সেই মেয়ের আলোয় আলোকিত হচ্ছে দেশ তথা বিশ্ব।
সিন্ধুর সাফল্য
বিশ্বের সাত নম্বর (২০২১ সালের ১৮ মে-র ক্রমতালিকা অনুযায়ী) শাটলার সিন্ধুর সাফল্যের গ্রাফ রিও অলিম্পিকের পর উর্ধ্বমুখেই গিয়েছে। ২০১৬ সালের গেমসে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে নেমেই ফাইনালে পৌঁছেছিলেন পিভি। সোনা জিততে না পারলেও কেরিয়ারের প্রথম অলিম্পিকে দ্বিতীয় হওয়াটা কী কম গর্বের? দেশের প্রথম শাটলার হিসেবে ২০১৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া সিন্ধু একই প্রতিযোগিতার অন্যান্য সংস্করণ থেকে দুটি রূপো ও দুটি ব্রোঞ্জ পদকও জিতেছেন। ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসের ব্যক্তিগত ইভেন্টে রূপো জেতা মহিলা অ্যাথলিট প্রতিযোগিতার ২০১৪ সালের সংস্করণে দলগত ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসের মিক্সড ও ব্যক্তিগত ইভেন্টে যথাক্রমে সোনা ও রূপো জিতেছিলেন সিন্ধু। টুর্নামেন্টের ২০১৪ সালের সংস্করণের ব্যক্তিগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন হায়দরাবাদি শাটলার।
ভারতীয় শাটলারের স্বীকৃতি
দেশের প্রথম মহিলা অ্যাথিলট হিসেবে দুই অলিম্পিকে পদক জেতা পিভি সিন্ধু এখন বিশ্ব ব্যাডমিন্টন ক্ষেত্রে জনপ্রিয় নাম। মাত্র ২৬ বছর বয়সে দেশের গর্ব হয়ে ওঠা হায়দরাবাদি শাটলারকে ইতিমধ্যে একাধিক স্বীকৃতিতে ভূষিত করা হয়েছে। ২০১৩ সালে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল সিন্ধুকে। রিও অলিম্পিকে রূপো জয়ের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে তাঁকে দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রের সেরা পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেলরত্নে ভূষিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে পিভি সিন্ধুকে দেওয়া হয়েছিল পদ্মশ্রী সম্মান। ২০২০ সালে পদ্মভূষণে সম্মানিত হয়েছিলেন পিভি। দুই অলিম্পিকে পদকজয়ী ভারতীয় শাটলারকে এবার ভারতরত্নে ভূষিত করা উচিত বলে মনে করে দেশের ক্রীড়া মহলের একটা অংশ। এ ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখিও শুরু হয়েছে।