বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের পরিসর কেড়ে ভিত মজবুত করছে তৃণমূল, ‘খেলা’ শুরু ত্রিপুরায়

ত্রিপুরা দখলে মরিয়া তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনের দু-বছর আগে থেকেই তৃণমূল ঝাঁপাল গেরুয়া ত্রিপুরার সবুজায়নের লক্ষ্যে। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস ভেঙে নিজেদের দলের ভিত শক্ত করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে বঙ্গ তৃণমূল নেতৃত্ব ত্রিপুরায় পা দিয়েই বিরোধী শিবিরে বড় ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছেন।

২০২৩-এর আগে ত্রিপুরায় খেলা জমাতে চায় তৃণমূল

২০১৬ থেকেই তৃণমূলের সংগঠন ছিল উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায়। মুকুল রায়কে পাঠিয়ে মমতা যে ভিত গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন, তা একেবারে ধসে পড়েনি। সেই ভিতকে আরও মজবুত করে এবার ইমারত গড়ার কাজে নেমেছেন অভিষেক-দেবাংশুরা। নেপথ্যে রয়েছেন প্রশান্ত কিশোর, মুকুল রায়-রা। মোট কথা ২০২৩-এর আগে ত্রিপুরায় খেলা জমাতে চায় তৃণমূল।

বিজেপি এক বছরেই সিপিএমকে হারিয়ে দিতে যদি সক্ষম হয়

বিজেপি যতই কটাক্ষ করুক, তাদের সিকিভাগ সংগঠনও নেই তৃণমূলের, গোকুলে কিন্তু বেড়ে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কংস বধ তারা সময় হলেই করে দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৮-য় ত্রিপুরা জয়ের দু-বছর আগেও বিজেপির কোনও সংগঠন ছিল না। ২০১৭-য় সংগঠনে হাত দিয়ে বিজেপি সিপিএমের মতো সাংগঠনিক শক্তিকে হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

তৃণমূল কেন পারবে না পুরনো ভিত মজবুত করে বিজেপিকে হারাতে

ফলে প্রশ্ন একটাই, বিজেপি যদি এক বছর আগে সংগঠন গড়ার কাজ শুরু করে সিপিএমকে শাসন ক্ষমতা থেকে হেলিয়ে দিতে পারে, তাহলে তৃণমূল কেন পারবে না পুরনো ভিত মজবুত করে বিজেপিকে উৎখাত করতে। বাংলায় বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নিয়েই ত্রিপুরা দখলের ছক কষছে। আটঘাট বেঁধেই এবার নেমেছে তৃণমূল।

মুকুল রায়ের হাতে গড়া তৃণমূলের সংগঠন এখনও অবশিষ্ট

বাংলায় ২০১৬ সালের নির্বাচনের সাফল্যকে মাথায় নিয়ে কংগ্রেস ভেঙে ত্রিপুরায় পথ চলা শুরু করেছিল তৃণমূল। মুকুল রায় নিজের হাতে গড়তে শুরু করেছিলেন তৃণমূলের সংগঠন। কিন্তু এক দমকা হাওয়ায় মুকুল রায়ের গড়া সাজানো বাগান তছনছ হয়ে যায়। মুকুল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। ত্রিপুরার তৃণমূলও ভেঙে ছত্রখান হয়ে যায়।

বিজেপির আড়াআড়ি বিভাজন কাজে লাগাতে চায় তৃণমূল

মুকুল-ঘনিষ্ঠ সেইসব কংগ্রেসত্যাগী তৃণমূল নেতারাই বিজেপিতে গিয়ে সিপিএম শাসনের অবসান ঘটান ২০১৮-য়। তারপর বিজেপির নেতৃত্বে ত্রিপুরার সরকার তিন বছর পূর্ণ করেছে। কিন্তু সরকারে বসেই সঙ্ঘবদ্ধতার অভাব স্পষ্ট হয়েছে বিজেপিতে। বরং আড়াআড়ি বিভাজনের শুরু সরকার গঠনের পর থেকেই। ত্রিপুরা বিজেপিতে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত।

তৃণমূলের সবুজ সংকেত না মেলায় বিজেপিতে ভাঙন অপেক্ষায়

মুকুল রায় সাড়ে তিন বছরের মোহ কাটিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে আসার পর থেকেই ত্রিপুরার গেরুয়া শিবিরে ফাটল তীব্র হতে শুরু করে। মুকুল-ঘনিষ্ঠ নেতারা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এখনও তৃণমূলের সবুজ সংকেত না মেলায় বিজেপিতে ভাঙন শুরু হয়নি। মুকুল-অনুগামী সুদীপ রায়বর্মনরা বিজেপিতেই রয়েছেন।

তৃণমূল দ্রুত ত্রিপুরায় চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠবে শাসক বিজেপির

কিন্তু বিজেপির নিচতুলায় ভাঙন শুরু হয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। তৃণমূলের বঙ্গজয়ের দু-মাসের মধ্যে ২৫ হাজার কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। নিচুতলার নেতারারাও তৃণমূলে ভিড় জমাতে শুরু করেন। কংগ্রেস ও সিপিএম ভেঙেও তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক শুরু হয়েছে যায়। এই অবস্থায় তৃণমূল দ্রুত ত্রিপুরায় চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।

ত্রিপুরা কংগ্রেসে ফের থাবা বসিয়ে দিয়েছে তৃণমূল, বাড়ছে শক্তি

এর মধ্যে আবার ত্রিপুরা কংগ্রেসে ফের থাবা বসিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেসের সাতজন হেভিওয়েটকে তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছে। ত্রিপুরায় খেলা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। প্রতিদিনই তৃণমূলের সংগঠন বাড়ছে। দুই প্রাক্তন বিধায়ক-সহ ৭ জন কংগ্রেস নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার মধ্যে একজন প্রাক্তনমন্ত্রীও রয়েছেন।

কংগ্রেস নেতারা সময়ের ডাকেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, দাবি

কংগ্রেস ভেঙে পথ চলা শুরু হয়েছিল তৃণমূলের, এখনও সেই ধারা অব্যাহত। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশচন্দ্র দাস, প্রাক্তন বিধায়ক সুবল ভৌমিক, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সদস্য পান্না দেব, কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতা মহম্মদ ইদ্রিস মিঞা, প্রেমতোষ দেবনাথ, বিকাশ দাস, তপন দত্ত-রা বলছেন সময়ের ডাকেই তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

ত্রিপুরায় অন্য সমীকরণের গন্ধ পেতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল

তৃণমূল ইতিমধ্যেই খেলা শুরু করে দিয়েছে। বাম-কংগ্রসকে সরিয়ে তাঁরা নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছে সমস্ত পরিসর। বিজেপির নিচুতলা ভেঙে ফাঁক করে দিচ্ছে তৃণমূল, একেবারে শেষে তারা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তথা বিক্ষুব্ধদের ঢোকাবে। ত্রিপুরার কংগ্রেস আবার তৃণমূলকেই যেন নিজেদের দল ভাবতে শুরু করেছে। যেভাবে তারা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে, যেভাবে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়েছে, অন্য সমীকরণের গন্ধ পেতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল। এবং তৃণমূল যে ত্রিপুরায় বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে, তাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন? বাঙ্গালী ম্যাট্রিমনি - নিবন্ধন নিখরচায়!

More ABHISHEK BANERJEE News  

Read more about:
English summary
TMC increases power in Tripura to break BJP CPM and Congress before 2023 Assembly Election