সেনাবাহিনীর সতীশ অলিম্পিকে
বৃহস্পতিবার প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে ৪-১ ব্যবধানে জামাইকার রিকার্ডো ব্রাউনকে হারিয়ে শেষ আটে পৌঁছে গিয়েছিলেন বুলন্দশহরের কৃষক পরিবারের সন্তান সুবেদার মেজর সতীশ কুমার যাদব। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশনড অফিসার সতীশ অ্যামেচার বক্সারও। ২০১৪ সালের ইনচেয়নে এশিয়ান গেমসে তিনি সুপার হেভিওয়েট বিভাগে তিনি ব্রোঞ্জও জিতেছিলেন। দাদার মতো সতীশও সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইতেন ছোটবেলা থেকেই। ২০০৮ সালে সেই স্বপ্নপূরণ হয়। সিপাই পদে কর্মরত ছিলেন রানিক্ষেতে। সেখানেই বক্সিং শিবিরে তাঁর উচ্চতার জন্য বাছাই করে পরামর্শ দেওয়া হয় এই খেলার প্রতি গুরুত্ব দিতে। বক্সিং সম্পর্কে তখন ভালো ধারণাই ছিল না সতীশের। তিনি ভাবতেন বক্সিং বুঝি WWE, কারণ সেই খেলা টিভিতে দেখে আন্ডারটেকার, জন সিনাদের নামের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে শুরু করে অলিম্পিকের আসরে রীতিমতো ইতিহাস গড়ে।
পদকের আশা জাগিয়েছিলেন
২০১৮ সালে অর্জুন পুরস্কার পাওয়া সতীশ টোকিও অলিম্পিকের প্রি কোয়ার্টারে পড়েছিলেন জামাইকার রিকার্ডো ব্রাউনের বিরুদ্ধে। বিকাশ কৃষ্ণান, মণীশ কৌশিক, আশিস কুমারদের প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যাওয়ার ব্যর্থতা ঢেকে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন পদক নিশ্চিত করার এক কদম দূরে। পরে বিশ্বের ১ নম্বর অমিত পাঙ্ঘলও ৫২ কেজি বিভাগের প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যাওয়ায় হতাশা মেটাতে সতীশের দিকেই ছিল সকলের নজর।
শেষ আটে কঠিন লড়াই
তবে শেষ আটে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উজবেকিস্তানের বাখোদির জালোলোভ। কোয়ার্টার ফাইনালে সতীশের নামা অনিশ্চিতও ছিল। ব্রাউনের বিরুদ্ধে বাউটের সময় তাঁর চোখের কাছে কপাল ও গাল কেটে গিয়েছিল। বার তিনেক হেড বাটের কারণে এই চোটের জায়গায় বেশ কয়েকটি সেলাইও করতে হয়। তবে সেই চোট পরীক্ষার পর তাঁকে রিংয়ে নামার অনুমতি দেওয়া হয়। শুরু থেকেই জালোলোভ আধিপত্য বজায় রাখেন। বিশেষ করে কাউন্টার অ্যাটাক ছিল বিপজ্জনক। সতীশ ডান হাত বেশি ব্যবহার করে বিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল নিলেও তা সফল হয়নি। শেষ অবধি ০-৫ ব্যবধানে সতীশ হেরে যান। তবে ৩২ বছরের সতীশের সাহস ও মনের জোর মনে রাখার মতো। তৃতীয় রাউন্ড চলাকালীন সতীশের কপালের কাটা অংশে ফের চোট লাগে, রক্ত ঝরতে থাকে। তাতেও শেষ অবধি লড়াই চালিয়ে যান তিনি।
|
ফুটবল থেকে বক্সিংয়ে বাখোদির
২০১৭ সাল থেকে জালোলোভ টানা তিনবার এশীয় চ্যাম্পিয়ন হন। বর্তমানে বিশ্বচ্যাম্পিয়নও। মজার ব্যাপার এই উজবেক বক্সারেরও বক্সিংয়ে আসার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। খানিকটা বাধ্য হয়েই আসা। তিনি জানিয়েছেন, আমি ফুটবল খেলতাম। অলিম্পিক রিজার্ভের জন্য চিরচিক কলেজে যখন পরীক্ষা চলছিল তখন আমি ফুটবলের পরীক্ষা দিতে দেরিতে পৌঁছাই। এরপর আমাকে তাই বক্সিংয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। বক্সিং কেরিয়ার শুরু সেখান থেকেই। ২০১৫ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন বাখোদির। ২০১৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জেতেন সোনা। এর আগে দুবার তাঁর কাছে ০-৫ ব্যবধানেই হেরেছিলেন সতীশ। এদিন ফের হারলেন ২০১৮ সালের ইন্ডিয়ান ওপেন ফাইনাল ও ২০২০ সালের মার্চে এশিয়ান অলিম্পিক কোয়ালিফায়ারের পর। অলিম্পিকে আসার আগে শেষ আটটি সাক্ষাতেই বিপক্ষকে নক আউট করেছেন বাখোদির। প্রি কোয়ার্টারের পর আজ কোয়ার্টার ফাইনালেও জিতলেন ৫-০ ব্যবধানে।