মায়ের জন্যই টোকিও অলিম্পিক বক্সিংয়ে সোনা জিততে চান করোনাজয়ী লাভলিনা

মীরাবাঈ চানু ভারোত্তোলনে ব্রোঞ্জ জিতে দেশে ফিরেছেন। মণিপুরের চানুর এটি ছিল দ্বিতীয় অলিম্পিক। তবে অসমের বক্সার লাভলিনা বরগোঁহাইয়ের অলিম্পিক অভিষেক হয়েছে টোকিওয়। আর সেখানেই ওয়েল্টারওয়েটে পদক নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। তারপরই জানিয়ে দিয়েছেন, সোনা নিয়েই ফিরতে চান ভারতে। অলিম্পিক থেকে মেয়ের পদক তাঁর মায়ের দ্রুত আরোগ্যলাভে সহায়ক হবে বলেও আশাবাদী লাভলিনার গর্বিত পিতা টিকেন বরগোঁহাই।

পদক নিশ্চিত লাভলিনার

চাইনিজ তাইপের চেন নিন-চিনকে স্প্লিট ডিসিশনে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছেন লাভলিনা। বক্সিংয়ে সেমিফাইনালে হেরে গেলেও ব্রোঞ্জ নিশ্চিত। তবে লাভলিনার নজরে অলিম্পিক সোনাই। প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি দাপটের সঙ্গেই হারিয়েছিলেন জার্মানির নাদিন আপেটজকে, ৩-২ ব্যবধানে। সেমিফাইনালে তিনি রিংয়ে নামবেন শীর্ষ বাছাই তুরস্কের বুসেনাজ সার্মেনেলির বিরুদ্ধে। ৪ অগাস্ট ভারতীয় সময় সকাল ১১টায় শুরু সেই বাউট।

খেলা দেখেনি পরিবার

শুটিং, গল্ফ বা তিরন্দাজির মতো লাভলিনার বাউট কিন্তু আজ ভারতীয় সময় ভোরবেলায় ছিল না। সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বাউট নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর পরিবার এদিন লাভলিনার বাউট দেখেনি। বড়পাথরের বাসিন্দা লাভলিনার বাবা টিকেন বরগোঁহাই বলেন, লাভলিনার খেলা আমরা সরাসরি দেখি না। আমাদের পরিবারের কেউই দেখে না। আমাদের সমস্যা হয়। অর্থাৎ মেয়ের খেলার চাপ কাটাতেই যে খেলা দেখা এড়িয়ে চলা সেটাই বোঝাল পরিবার। টিকেন জানান, লাভলিনা ভোর পাঁচটা নাগাদ ফোন করেছিল। তখন আমরা ঘুমাচ্ছিলাম। মেয়েকে আশীর্বাদ করেছি। লাভলিনা আমাদের কথা দিয়েছে সোনা জিতেই ফিরবে। আমার বিশ্বাস আছে সে পারবে। তাঁর বাড়ির সামনে অনেকে ভিড় জমালেও টিকেন বরগোঁহাই গ্রামে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। সকলের উল্লাসে বোঝেন মেয়ে পদক নিশ্চিত করেছে।

সোনা চাই

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী লাভলিনা যেভাবে অলিম্পিকে ৬৯ কেজি বিভাগে নিজেকে মেলে ধরেছেন তার প্রশংসা করছেন অনেকেই। বিশেষ করে আজ যাঁকে হারালেন শেষ সাক্ষাতে তাঁর কাছেই পরাস্ত হতে হয়েছিল লাভলিনাকে দিল্লিতে। লাভলিনার কাউন্টার অ্যাটাক বিপক্ষের সমস্যা বাড়াচ্ছে বারেবারেই। অথচ এই লাভলিনাকেই পেরোতে হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। গত বছর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই কারণে ইউরোপে ট্রেনিং ক্যাম্পেও যেতে পারেননি। ফলে আজ পদক নিশ্চিত হতেই তৃপ্তির ছাপ ধরা পড়ে লাভলিনার চোখে-মুখে। হবে না-ই বা কেন? ২০০৮ সালে বিজেন্দ্র সিংয়ের পর ২০১২ সালে মেরি কম ব্রোঞ্জ এনেছিলেন অলিম্পিকের আসর থেকে। রিওতে কোনও বক্সারই পদক আনতে পারেননি। মেরি কমকে আদর্শ মেনে চলা প্রত্যয়ী লাভলিনা চাইছেন, ব্রোঞ্জকে সোনায় উন্নীত করতে। মেরি কম নিজেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লাভলিনাকে। এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী-ই হতে পারে?

করোনাকে হারিয়ে

লাভলিনা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন অসুস্থ মায়ের পাশে থাকতে গিয়ে। লাভলিনার মা মামণি বরগোঁহাইয়ের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে গত বছর। তখনই মাকে দেখতে এসে করোনা পজিটিভ হন। অলিম্পিক কোয়ালিফাইং গ্রুপের সঙ্গে ইউরোপ যাওয়ার এক দিন আগেই। তা সত্ত্বেও অদম্য মনের জোর সম্বল করে মেয়ে আজ যে জায়গায় তাতে গর্বিত টিকেন বরগোঁহাই। কিছুটা অভিমান নিয়েই বলেন, অনেকের চোখেই উত্তরাধিকার বহনের ভার পুত্রসন্তানের উপর। কিন্তু তিন কন্যার পিতা হিসেবে আমি নিজে গর্ববোধ করি। আমার মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। আমার স্ত্রী-র যখন কিডনি বিকল হল, তখন লাভলিনা রাতভর জেগে কাটিয়েছে। তার মধ্যেই করোনা পজিটিভ হয়। লাভলিনাই আমাদের পরিবারের মেরুদণ্ড। আমরা কিডনি ডোনর পেয়েছি, লাভলিনা না থাকলে কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভবই হতো না। আমার স্ত্রী দ্বিতীয় জন্ম পেয়েছে। লাভলিনার পদক তাঁর দ্রুত আরোগ্যলাভে সহায়ক হবে। আমাদের প্রচেষ্টা সফল হতে চলেছে।

কিকবক্সিং থেকে বক্সিং

টিকেন বরগোঁহাইয়ের ছোট চা বাগান আছে। লাভলিনার দুই দিদি লিচা ও লিমা। তাঁরা দুজনেই কিকবক্সার। মেয়েদের খেলাধুলোর প্রতি ঝোঁক থাকায় উৎসাহ দিয়েছে বরগোঁহাই পরিবার। টিকেন বরগোঁহাই জানালেন, আমি ও আমার স্ত্রী কখনও চাইনি আমাদের আর্থিক প্রতিকূলতা মেয়েদের স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হোক। তবে আমার যা রোজগার ছিল তাতে সবটা করা সম্ভব ছিল না। মেয়েরা যাতে খেলাধুলো চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য মণিকা বরগোঁহাই স্থানীয় সমবায় থেকে ঋণও নিয়েছিলেন। দিদিদের মতো লাভলিনাও কিকবক্সিং শুরু করলেও পরে বেছে নেন বক্সিংকে। পরিবারের নানা স্বার্থত্যাগ পূর্ণতা পেতে চলেছে তাঁর অলিম্পিক পদক জয়ে। আর সেই সাফল্যে জড়িয়ে থাকছে ২০০২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী বক্সার মহম্মদ আলি কামারও। কলকাতার গর্ব আলি কামারই যে ভারতীয় মহিলা বক্সারদের কোচ হিসেবে রয়েছেন টোকিও অলিম্পিকের আসরে।

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন? বাঙ্গালী ম্যাট্রিমনি - নিবন্ধন নিখরচায়!

More TOKYO OLYMPICS 2021 News  

Read more about:
English summary
Lovlina’s Medal Will Help Her Mother To Recover Faster Than Expected Says Boxer’s Father Tiken Borgohain. Lovlina’s Family Did Not Watch Her Quarter Final Game.
Story first published: Friday, July 30, 2021, 21:57 [IST]