কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এক করতে চান প্রশান্ত কিশোর
প্রশান্ত কিশোরের দৌত্যে বুধবার সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে বৈঠক হয়ে গেল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রশান্ত কিশোর চাইছেন কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব ঘূচিয়ে দিতে। এই মুহূর্তে কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এক হতে হবে, তবেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই সঙ্ঘবদ্ধ হবে। সেই কাজটাই করতে চাইছেন প্রশান্ত কিশোর।
উভয় দলের লক্ষ্য আর নিউক্লিয়াস যখন এক
বাংলায় একুশের যুদ্ধ জয়ের পর তৃণমূল ২০২৪-কে টার্গেট করেছে। কংগ্রেসেরও লক্ষ্য দিল্লির কুর্সি থেকে মোদীকে হটানো। উভয় দলের লক্ষ্য আর নিউক্লিয়াস যখন এক, তখন বৃহত্তর স্বার্থে কংগ্রেস ও তৃণমূল কেন পরস্পরের কাছাকাছি আসবে না। যেটুকু মতপার্থক্য ছিল, তা ঘুচিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলকে একাসনে বসাতে উদ্যোগ নি্চ্ছেন প্রশান্ত কিশোর স্বয়ং।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী ঐক্য সম্ভব নয়
প্রশান্ত কিশোর জানেন, নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। আর কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কখনই বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সেই কারণেই কংগ্রেসের হয়ে সওয়াল করে চলেছেন প্রশান্ত কিশোর। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কংগ্রেস সভানেত্রী ও রাহুল-প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে আলোচনায় বসাতে চেয়েছেন তিনি।
তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্ট গড়ে কোনও ফায়দা হবে না
প্রশান্ত কিশোর মনে করেন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্ট গড়ে তুললে কোনও ফায়দা হবে না। কংগ্রেসকে বাদ কোনও অক্ষশক্তি বিজেপিকে হারাতে পারবে না এই মুহূর্তে। প্রশান্ত কিশোর চতাই ২০২১-এর ভোটপর্বের আগেও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে গিয়েছেন। এবার রাহুল গান্ধীর বাসভবনে পুরো গান্ধী পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করেন পিকে।
কংগ্রেস-তৃণমূলকে একযোগে সামিল করতে হবে
প্রশান্ত কিশোর তলে তলে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন ২০২৪-এর ভোটে বৃহত্তর বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে। তিনি বুঝেছিলেন ২১-এর বিধানসভা ভোটে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপিকে হারানোর পর জোয়ার আসবে দিল্লি রাজনীতিতে। সেই জোয়ারে কংগ্রেস-তৃণমূলকে একযোগে সামিল করতে হবে।
এখনও বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি কংগ্রেস
প্রশান্ত কিশোর জানেন এখনও বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি কংগ্রেস। কংগ্রেস এখনও অধিকাংশ রাজ্যে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই কংগ্রেসকে সামিল করতেই হবে। তৃণমূল এখনও একটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ। নতুন করে সংগঠন গড়ে তুলে বিরোধীদের নিয়ে বিজেপি বিরোধী অক্ষশক্তিতে রূপান্তরিত হওয়া এই স্বল্প সময়ের মধ্যে অসম্ভব।
একুশে জুলাই মমতার ভার্চুয়াল সমাবেশে কংগ্রেসের সখ্যতা
ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের রচিত পথেই কংগ্রেস ও তৃণমূল এগোতে চাইছে। ইতিমধ্যে তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দৌত্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গান্ধী পরিবারের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক করেছেন। তার আগে একুশে জুলাই মমতার ভার্চুয়াল সমাবেশ মঞ্চে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের সখ্যতা। আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে পেগাসাস-কাণ্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অফিসিয়াল হ্যান্ডেল থেকে টুইট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে উভয় দল এখন অনেক কাছাকাছি।
সোনিয়া-রাহুলদের সঙ্গে বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফরের দ্বিতীয় দিনে কংগ্রেসের তিন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও বিরোধী ঐক্যের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না। কংগ্রেসের তিন শীর্ষ নেতা কমল নাথ, আনন্দ শর্মা ও অভিষেকের মনু সিংভির সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকের পর বুধবার সোনিয়া-রাহুলদের সঙ্গে বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
কংগ্রেস ও তৃণমূল কোমর বেঁধেছে তিন বছর আগে থেকেই
এদিকে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বে বিরোধী ঐক্যের বৈঠক বসছে দিল্লিতে। সেই বৈঠকে রাহুল গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়েও জল্পনা থাকছে। মোট কথা এবার কংগ্রেস ও তৃণমূল কোমর বেঁধে তিন বছর আগে থেকেই নেমেছে বিজেপি-বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে।
পিকের টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা ত্রিপুরা পুলিশের, ভিনরাজ্যে সংঘাতে তৃণমূল-বিজেপি
প্রশান্ত কিশোরের দৌত্য স্বীকার কংগ্রেস ও তৃণমূলের
বাংলায় একটা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে জিতেই মোদীর চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠেছেন মমতা। তিনি মোদী বিরোধী মুখ হয়ে উঠতে চাইছেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও চাইছেন বিজেপি বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এগিয়ে দিতে। ২০১৯-এ যে ভুল করেছিলেন বিরোধীরা, এবার সেই ভুল করতে চান না তাঁরা। এবার কংগ্রেস ও তৃণমূল তাই প্রশান্ত কিশোরের দৌত্য স্বীকার করে বৃহত্তর স্বার্থে পা ফেলছে।