রাত নামলেই এখনও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থল থেকে

গুগল ম্যাপ বলছে, কলকাতা থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরের এক অঞ্চলের নাম খেমাশুলি৷ রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ত খড়গপুর স্টেশন থেকে ঝাড়গ্রাম যেতে তিন নং স্টপেজে ছোট্ট এক রেলস্টেশন রয়েছে। হাওড়া-নাগপুর-মুম্বইয়ের প্রায় প্রতিটি ট্রেনই আসে যায় ওই স্টেশনের ওপর দিয়ে। গুটিকতক ট্রেন থামে, বেশিরভাগই আবার থামে না ছোট্ট স্টেশনটিতে। এই স্টেশন থেকে কয়েক কিলোমটার জঙ্গল ধরে এগোলেই দেখা যাবে, রেললাইনের পাশে পড়ে রয়েছে কিছু দুমড়ে মুচড়ে থাকা ট্রেনের কোচ ও মালগাড়ির কামরা। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, রাত তো দূর দিনের বেলাতেও এই অঞ্চলটিকে পারতপক্ষে এড়িয়েই চলেন স্থানীয়রা। কিন্তু কেন?

দিনের বেলাতেও গরু-অগল নিয়ে এই এলাকায় পা রাখে না গ্রামের লোক!

জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখানেই আতঙ্কের সাক্ষ বহন করছে পরিত্যক্ত ট্রেনের কোচগুলো। অধিকাংশই দুমড়ে মুচড়ে গেছে, কোনওটা আবার পুড়ে কালচে হয়ে গেছে। উদ্ধারকাজের সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোচটিকে তো কেটেই ফেলতে হয়েছিল। একদিকে হেলে থাকা ট্রেনের বগিগুলিকে দেখলে মনে হবে যেন লোহার কোনও ময়াল সাপ শেষ শয্যা নিয়েছে। ঝড়ে-জলে ক্ষয়ে যাচ্ছে তার শরীর, বেরিয়ে আসছে কঙ্কাল, ক্রমেই ভয়ের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠছে সেই দৃশ্য। ভয়াবহতা এতটাই যে গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে ছাগল-গরু চরে বেড়ানোর স্বাভাবিক দৃশ্যও অমিল সেখানে!

স্থানীয়দের দাবি, অন্ধকার নামলেই কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে কামরাগুলো থেকে!

শোনা যায়, এই জায়গা থেকেই নাকি আর্তনাদ ভেসে আসে রাতে! ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকেন আশেপাশের সমস্ত গ্রামবাসীরা৷ তাঁদের দাবি, ট্রেন চালকরা নাকি এই অংশ পেরোনোর সময়তেই বহু লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন লাইনের পাশে। এই তথ্যের ভিত্তি কী? বক্তাদের মধ্যে কেউ কি ট্রেন চালক? নাহ, সেই উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি৷ অনেকে আবার বলেন, দুর্ঘটনাস্থলের পাশে যে মোরামের রাস্তা রয়েছে, সেখানে অলৌকিক সব কাণ্ড ঘটে৷ অনেকেই খেমাশুলি থেকে সারদিয়া যাওয়ার পথে শুনতে পেয়েছেন, কারা যেন পেছন থেকে নাম ধরে ডাকছে তাঁদের। তবে এক্ষেত্রেও দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে সেরকম কোনও প্রমাণ মেলেনি।

এলাকা জুড়ে বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ শুনেছে অনেকে!

১১ বছর আগের এই দুর্ঘটনায় বেশ কিছু শিশুও প্রাণ হারিয়েছিল। স্থানীয়রা বলেন তারপর থেকেই এই দুর্ঘটনাস্থল থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। কিন্তু কারা শুনতে পেয়েছেন এই আওয়াজ? অধিকাংশের মুখেই উত্তর তাঁরা নিজেরা নন, তাঁদের পরিচিত কেউ পেয়েছেন শুনতে।

কী বলছেন বিজ্ঞানমনষ্ক অলৌকিক ঘটনার গবেষকরা?

অলৌকিক ঘটনা খুঁজে বেড়ানো বিশেষজ্ঞদের দাবি, গোটা বিষয়টাই মানুষের মনের। এক্ষেত্রে অজানা ভয় গ্রাস করেছে স্থানীয়দের। যদিও এক্ষেত্রে তাদেরও সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী তাঁরা। স্থানীয় গ্রামবাসীরা এক লহমায় প্রায় শতাধিক জনের মৃত্যুদেহ দেখেছেন চোখের সামনে। তারপর থেকেই লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে ভৌতিক গল্প। আসলে এরকম দুর্ঘটনার পর ভৌতিক কিছু না থাকলেও একটা ট্রমা বোধহয় থেকেই যায়।

দেয়ার আর মোর থিং ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ, হোরাসিও!

তবে এত সব কিছুর পরও প্রশ্ন থেকেই যায় কেন ১১ বছরেও দুর্ঘটনা কবলিত মালগাড়ি ও ট্রেনের বগিগুলিকে সরালো না রেল? কেনই বা দিনের বেলাতেও ওই বিস্তৃর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলেন স্থানীয়রা? তা কী শুধুই মনের ভুল? আতঙ্ক? নাকি সত্যিই জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনাস্থল জুড়ে ছড়িয়ে আছে অন্য কোনও আলো-আঁধারির খেলা? ইংরাজি ভাষায় কিংবদন্তী সাহিত্যিক শেক্সপিয়ার তাঁর বিখ্যাত নাটক হেমলেটের একজায়গাতে লিখেছেন, ' দেয়ার আর মোর থিং ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ, হোরাসিও/ দেন আর ড্রিমট অফ ইন ইয়োর ফিলোসফি।' অর্থাৎ এই পৃথিবী ও সর্গের মাঝে এমন অনেক জিনিস আছে যা মানুষের বিশ্বাস ও দর্শণের উর্ধ্বে৷'

শেক্সপিয়রের বক্তব্যের মতো জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাস্থল অনেক না পাওয়া প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন? বাঙ্গালী ম্যাট্রিমনি - নিবন্ধন নিখরচায়!

More GHOST News  

Read more about:
English summary
As soon as night falls, the sound of crying still comes from the accident site of Janeshwari Express
Story first published: Sunday, July 25, 2021, 15:24 [IST]