সব লড়াইয়ের পিছনে একটা গল্প থাকে! মীরাবাঈ চানুও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। আজ শনিবার সকালে যে তরুণী দেশের মুখ উজ্জ্বল করে রুপো জিতেছেন তাঁকেও শুরুর দিকে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় গোটা পরিবার তাঁর ঢাল হয়ে দাঁড়ায়!
আর সেই জোরেই ফের একবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয় মনিপুরের ছোট্ট একটি গ্রামের মেয়ে মীরাবাঈ। আজকের এই সাফল্যে হয়তো তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। তবে সেই কঠিন লড়াই তাঁর এগিয়ে চলার পাথেয় হবে...!
লড়াইটা দীর্ঘদিনের। ২০১৪ সালের কমলওয়েলথ গেমসে বড়সড় সাফল্য আসে মীরাবাঈ চানুর কাছে। মোট ১৭০ কেজি ভার তুলে গ্লাসগোর এই খেলায় রুপো জেতেন চানু। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতা হয়নি তাঁকে। একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে চানুর জীবনে।
রিও অলিম্পিকের আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে ১৯২ কেজি ভার তুলে রেকর্ড তৈরি করেন। ১২ বছর আগে কুঞ্জারিনির একটি রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে দেন মীরাবাঈ। কিন্তু সবার জীবনে কিছু ওঠাপড়া থাকে। আর তাই রিও অলিম্পিকে বড়সড় ধাক্কা খেতে হয় চানুকে।
সেখানে ব্যর্থ হতে হয় তাঁকে। আর এরপরেই ভেঙে পড়ে চানু। কার্যত কিছুটা মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়ে সে। শুধু সে নয়, গোটা পরিবার কার্যত ভেঙে পড়ে বাড়ির ছোট মেয়ের এহেন ব্যর্থতার খবর সামনে আসার পর। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার।
মীরাবাঈ চানু সেই সময় তাঁর মাকে জানান, আমি খুব নার্ভাস হয়ে পড়ছি। আমার পক্ষে আর খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশিত খবরে চানুর মা টম্বিদেবী এমনটাই জানিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারে টম্বিদেবী জানান, মেয়ের এমন অবস্থায় কি করা উচিৎ প্রথমে আমরাও বুঝতে পারেনি।
তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মা টম্বিকে মেয়েকে বোঝান, এই অবস্থায় গোটা পরিবার তাঁর পাশে আছে। যে কোনও বিষয়ে সমর্থক করতে প্রস্তুত তাঁরা! তবে সেই সময় মেয়েকে একটাই শর্ত দিয়েছিলেন মা...! কোনও ভাবেই চানু খেলা ছাড়তে পারবে না। তাঁকে এই লড়াইয়ে জিততে হবে। সেই জোর মীরাবাঈয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে ছিলেন মা। টম্বিদেবী জানান, মেয়ের আঘাত যাতে দ্রুত সেরে ওঠে সেজন্যে দিনের পর দিন রাতে ঘুম আসত তাঁর। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে যেতেন যাতে দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে মেয়ে ফের খেলার জগতে ফিরে আসতে পারে।
মায়ের অসীম ধরিজ্য আর মেয়ের অদম্য লড়াইয়ের ইচ্ছা ফের একবার সাফল্যের দিকে এগিয়ে দিয়েছে মেয়েকে। গত পাঁচ বছরে ফের একের পর এক সাফল্য এসেছে। ২০১৮ব সালে কমলওয়েলথ গেমে ফের সোনা যেতে সে। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ থাইলেন্ড ২০১৯ এও সাফল্য আসে। ব্রোঞ্জ ছিনিয়ে নিয়েছেন Asian Championships -এও। একের পর এক সাফল্য!!!
টম্বিদেবী জানিয়েছেন, একটা সময় আমেরিকাতেও ট্রেনিং নিতে গিয়েছিলেন মীরাবাঈ চানু। আর সেই সময় তাঁকে সবসময় শান্ত থাকতে বলতাম। কোনও টেনশন না সবসময় বেস্ট দেওয়ার জন্যে মীরাকে বলতাম। অলিম্পিকে এই সাফল্যের পর এমনটাই জানিয়েছেন টম্বি। তাঁর মা আরও জানান, মেয়ে যখনই ইম্ফলে আসত তখনই এলাকার বাছাদের খেলাধুলো ইয়ে ট্রেনিং করতে চলে যান মীরাবাঈ।
জীবনসঙ্গী খুঁজছেন? বাঙ্গালী ম্যাট্রিমনি - নিবন্ধন নিখরচায়!