মায়ের কষ্ট কমানোটা মূল লক্ষ্য ছিল
চানুর মা টম্বি দেবী। প্রায় ৬০ বছর বয়স। মেয়ের সাফল্যে আজ গর্বিত তিনি। কীভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করে চানু তাঁর খেলা চালিয়ে গিয়েছেন সেই কথায় জানিয়েছেন তাঁর মা। তিনি জানিয়েছেন, বাড়ির ছোট মেয়ে হলেও জীবনটা খুব একটা সরল ছিল না তাঁদের। মাথায় করে জ্বালানি কাঠ বয়ে নিয়ে আসতেন চানু। ইম্ফলের কাছাকাছি একটি গ্রামের বাসিন্দা তাঁরা। পরিবারে চানু ছাড়াও রয়েছেন আরও ছয় সন্তান। টম্বি এবং তাঁর স্বামী সাইখোম কৃতি সিং এবং তাঁদের পাঁচ সন্তান আজ চানুর সাফল্যে আবেগে আপ্লুত। চানুর মা জানিয়েছেন, প্রতিবেশির একটি জমিতে চুক্তিভিত্তিতে কাজ করতেন। আর ছোট থেকে তাঁর হাতেহাতে তাঁর সহযোগিতা করতেন ছোট মেয়ে চানু। তিনি বলেন, আমার বাকি সন্তাণরা যখন পড়াশুনা করত, সেলাই করত চানু তখন মাথায় করে জ্বালানির কাঠ বয়ে নিয়ে সাহায্য করত। কখনও দিনের বেলাতে তিন থেকে চার ঘন্টা কাটিয়ে আবার সন্ধ্যাতেও বেশ কয়েক ঘন্টা আমাকেই সময় দিত চানু। ওর একটাই উদ্দেশয ছিল আমার কাজের বোঝা কীভাবে কমাবে? আজ মনে হচ্ছে, গোটা ভারতের ভার আজ যেন ও কাঁধে তুলে নিয়েছে, আবেহতাড়িত চানুর মা।
খাবার জোগানও কঠিন ছিল
কৃষক পরিবারের সদস্য টম্বি দেবী এবং তাঁর স্বামী! বর্তমানে তাঁর নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত। এবং ছয় সন্তানের এই পরিবারকে সংস্থান যোগাতে চায়ের দোকান চালাতেন টম্বিদেবী। আর মাঠে চুক্তিভুত্তিক কাজ করতেন। টম্বিদেবী জানিয়েছেন, তাঁর পূর্বপুরুষরা সবাই চাষের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর স্বামী চাষের কাজের বাইরে দুই থেকে মাত্র তিন হাজার টাকা রোজগার করতেন। পাশাপাশি তাঁর চায়ের দোকান চালিয়ে যা টাকা আসত তাতে চানুদের খাবারও জুঠত না ঠিক মতো!
ভাগ্যের পরিহাস!
ছোট থেকেই লড়াই করে উঠে এসেছেন চানু। প্রথমে তিরন্দাজ হতে চেয়েছিলেন তিনি। পরে ঘটনাচক্রে ভারতোল্লনের পারদর্শী হয়ে ওঠেন চানু। বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের থেকে খোঁজ নিয়ে ট্রেনিং সেন্টার খুঁজে বের করেছিলেন তিনি। খেলাতে এতটাই উৎসাহ ছিল তাঁর যে একেকদিন রাতে বাড়ি ফিরতেন না। থেকে যেতেন ট্রেনিং সেন্টারে। তাঁর এক টিমমেট জানিয়েছেন, বাড়িতে তৈরি ব্ল্যাক রাইস টিফিনে নিয়ে আসতেন চানু। যাতে থাকত প্রচুর পরিমানে কার্ব হাইড্রেট। প্রথম প্রথম কাঠ তুলে প্র্যাকটইস করতেন। নিজের ওজনের প্রায় দ্বিগুণ প্রায় ৭০ কেজি ওজন তুলতে সক্ষম ছিলেন তিনি। তাঁর কোচ মনিকা চানু জানান, মীরার মা সন্ধ্যা বেলা অপেক্ষা করে থাকতেন ছোট মেয়েরর জন্যে। কখনও সাইকেলে কখনও বালির লরিতে বাড়ি ফিরত মীরাবাঈ চানু। কখনও কখনও অর্ধেক রাস্তাতে যাওয়ার মতো টাকা থাকত। বাকিটা হেঁটে যেত সে। তাঁর বড় দিদি সেলাই করে টাকা বাঁচিয়ে চানুর হাতে তুলে দিত।