টিকাকরণের লক্ষ্য
আইসিএমআরের এক গবেষক নিবেদিতা গুপ্তা তাঁর এই সমীক্ষাতে জানিয়েছেন যে টিকাকরণের লক্ষ্যই হল কোভিড-১৯-এ মৃত্যু দমন করা ও রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার কমানো। এর সঙ্গে টিকাকরণের লক্ষ্য এও রয়েছে যে ভারতে দ্বিতীয় ওয়েভ চলাকালীন উচ্চ-সংক্রমিত ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট, যা লস অ্যাঞ্জেলস থেকে মেলবোর্নে ছড়িয়ে পড়েছে সেটাকেও দমন করা। নিবেদিতা গুপ্তার সমীক্ষা অনুযায়ী, টিকাকরণের পর যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ০.৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে, যাকে ব্রেকথ্রো সংক্রমণ বলা হচ্ছে। এছাড়াও ১০ শতাংশের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়েছে। এই সমীক্ষা করা হয় ৬৭৭ জন কোভিড রোগীর জেনোম সিক্যুয়েন্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে, সেখানে দেখা গিয়েছে যে সম্পূর্ণ টিকাকরণের পরও ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ শতাংশ।
ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট প্রতিরোধ
এই সমীক্ষার ফলে এটা কিছুটা হলেও বোঝা যাচ্ছে যে কোভিড ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে চরম পরিণতি প্রতিরোধে শটগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট, যা কমপক্ষে ১০৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই ভাইরাসটি প্রতিরোধ করতে টিকাকরণের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে প্রথম ভারতে এই ভাইরাসটি সনাক্ত হয়, এই ভ্যারিয়ান্ট ব্রিটেন, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতে শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে, যা জনস্বাস্থ্য আধিকারিকদের দ্বিগুণ সামাজিক দুরত্ব জারি করার জন্য বাধ্য করেছে।
টিকাকরণের কৌশল
সমীক্ষা বলছে, ‘এটা খুব স্পষ্ট যে টিকাকরণ মৃত্যুর তীব্রতা ও হাসপাতালে ভর্তির হ্রাস কমিয়েছে। তাই টিকাকরণ কর্মসূচি বাড়ানো ও দ্রুত জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে কোভিড-১৯-এর পরবর্তী মারাত্মক ওয়েভ থেকে বাঁচার এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা পদ্ধতির ওপর থেকেও চাপ কমবে।' সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৫৯২ জন মানুষ দু'টি ডোজ পেয়েছেন এবং ৮৫ জন একটি ডোজ পেয়েছেন। প্রসঙ্গত, ভারতের নাগরিকদের অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসির কোভিশিল্ড টিকাকরণ দেওয়া হচ্ছে, এটি একটি ঐতিহ্যগত ভেক্টর-ভিত্তিক শট, যা ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা নিয়ে উচ্চ-কার্যকর ফাইজারের আরএনএ ভ্যাকসিন ও মডার্না ইঙ্কের তুলনামূলকভাবে সন্দেহের মুখে পড়েছে।
ডেল্টা মিউটেশন
সম্ভাব্য বৃহৎ ও প্রথম জাতীয় স্তরের সমীক্ষায় টিকাকরণের পর ভারতের ব্রেকথ্রো সংক্রমণ। গবেষণায় দু'টি নতুন ডেল্টা মিউটেশনের প্রমাণ মিলেছে, ডেল্টা এওয়াই.১ ও ডেল্টা এওয়াই.২, এর পাশাপাশি কিছু পুরনো ভ্যারিয়ান্ট আলফা ও কাপ্পা রয়েছে। ভারতে ডেল্টার প্রভাবে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে মে মাসের গোড়াতে দৈনিক সংক্রমণ রেকর্ড ৪ লক্ষে পৌঁছেছিল। যার কারণে হাসপাতালগুলিতে উপছে পড়েছিল রোগীদের ভিড় এবং শ্মশান ও কবরস্থানেও ছিল না শেষকৃত্য করার মতো জায়গা। হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও কোভিড সংক্রান্ত ওষুধগুলির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নাগরিকদের কাতর আর্জির বন্যা বয়ে গিয়েছিল সেই সময়। ব্লুমবার্গ ভ্যাকসিন ট্র্যাকার অনুযায়ী, দেশে ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ টিকাকরণ পেয়েছে এমন লোকের সংখ্যা ৫.৭ শতাংশ।
তৃতীয় ওয়েভ
দেশের কিছু কিছু রাজ্য, যেমন মহারাষ্ট্র ও কেরলে পুনরায় করোনা কেস বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। যা তৃতীয় ওয়েভ আশার আশঙ্কাকে প্রবল করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করে জানিয়েছেন যে পুনরায় যাতে সংক্রমণ না বাড়তে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে যাতে সংক্রমণ দমন করা যায়। তবে বেশ কিছু সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে তৃতীয় ওয়েভ আসার সম্ভাবনা রয়েছে অগাস্টের শেষের দিকে।
যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁরা "বাহুবলী'! প্রত্যেককে ভ্যাকসিন নিতে আহ্বান মোদীর