টানাপোড়েন অব্যাহত
গত মরশুমের আইএসএল চলাকালীনই ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে সংঘাত লেগেই রয়েছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তাদের। আইএসএলের শেষেই শ্রী সিমেন্টের তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে দুই পক্ষের যে চুক্তির কথা হয়েছিল সেই মোতাবেক চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই করতে টালবাহানা করছেন ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা। লাল হলুদ কর্মসমিতির সদস্যদের পাল্টা দাবি ছিল, টার্মশিট-সহ চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের বেশ কিছু শর্তে গরমিল রয়েছে। এমনকী কিছু বিষয় রয়েছে যাতে ক্লাব বিক্রি হয়ে যাওয়ার সামিল। শ্রী সিমেন্টও জানিয়ে দেয়, চুক্তিপত্রে সই না করলে পরের মরশুমের দল গঠন হবে না। এরপর মাসের পর মাস ধরে দুই তরফের বিবৃতির যুদ্ধ, ই মেল চালাচালি, কিছু বৈঠক লাল হলুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি দেয়। আসম্ন মরশুমের আইএসএলের জন্য যখন বাকি দলগুলি তৈরি হচ্ছে, তখন ময়দানের অন্যতম প্রধান ক্লাবের ভবিষ্যৎ বিশ বাঁও জলে।
অনড় কর্তারা
এর আগে ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, চুক্তিপত্রে সই করতে হলে তাঁরা গণপদত্যাগ করবেন। যদিও আজ সন্ধ্যায় ক্লাবে শাটার বন্ধ করে কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন এবং এরপর প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, শ্রী সিমেন্টের পাঠানো চুক্তিপত্রে সই করা হবে না। ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদারের সই করা প্রেস বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, সভাপতির নেতৃত্বে আমরা সকল এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে এগ্রিমেন্টে ক্লাবকে চিরতরে একতরফা দিয়ে দেওয়ার শর্তাবলী রয়েছে, যে এগ্রিমেন্টে সদস্যদের অসম্মান এবং তাঁদের অধিকার খর্ব করে দেওয়ার শর্তাবলী রয়েছে, যে এগ্রিমেন্টে ক্লাবের মৌলিক অধিকার নেই, যে এগ্রিমেন্টে ক্লাবের মাঠ, ক্লাবের লোগো, ক্লাবের নাম, টেন্ট-সহ সমস্ত কিছু চিরতরে নিয়ে নেওয়ার এবং ক্লাবকে সেগুলো ব্যবহার করতে না দেওয়ার শর্তাবলী রয়েছে, যে এগ্রিমেন্টে ক্লাবের কোটি কোটি সমর্থকদের চিরকালীন আত্মাভিমানে আঘাত ও যে এগ্রিমেন্টে সমর্থকদের বলা হয় ট্রেস পাসার্স উইল বি প্রসিকিউটেড সেই এগ্রিমেন্টে আমরা সই করব না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে শতাব্দী প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
অন্ধকারে ভবিষ্যৎ
সকল সভ্য সমর্থক এবং ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির প্রাক্তন খেলোয়াড়দের মতামতও আহ্বান করেছেন ইস্টবেঙ্গল সচিব। তিনি জানিয়েছেন, সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্তই হয়েছে যে, সভ্য সমর্থকের কোনওরকম স্বার্থক্ষুণ্ণ বা অসম্মান হোক সেরকম কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না। সচিব-সহ মোট ২৫ জনের সই রয়েছে চিঠিতে। ফলে শ্রী সিমেন্টও যদি এবার আইএসএলকে সবটা জানিয়ে দেয় তাতে এসসি ইস্টবেঙ্গলের আর আইএসএল খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আই লিগেও ইস্টবেঙ্গলের খেলা সম্ভব নয়। কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল অংশ না নিলে সেখানেও অবনমনের আওতায় চলে আসবে লাল হলুদ।
সোচ্চার সমর্থকরা
ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা যেমন শহরের বিভিন্ন জায়গায় শ্রী সিমেন্টের বিরোধিতায় বিক্ষোভ সংগঠিত করছেন, তেমনই সিংহভাগ সমর্থক আবার ইস্টবেঙ্গলের কর্তাদের ভূমিকায় প্রবল অসন্তুষ্ট। শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতি তাঁরা একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না। ইবিআরপি-সহ লাল হলুদ সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেবব্রত সরকার, কল্যাণ মজুমদারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করছেন। লাল হলুদে ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে অনেক ফুটবলারও ক্লাব ছেড়েছেন বা নতুন ক্লাবের সন্ধানে রয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি
সোশ্যাল মিডিয়ায় দিদি বললেই সই হবে হ্যাশট্যাগ দিয়ে নানা মতামত ঝড়ের গতিতে ছড়াতে শুরু করেছে। গতবারও শেষ মুহূর্তে যেমন উদ্যোগ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইনভেস্টর জোগাড় করে দিয়ে আইএসএলে লাল হলুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন, ইস্টবেঙ্গলের সিংহভাগ সমর্থক চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বেরিয়ে আসুক আশু সমাধান।