বেড়ে ওঠা দিদার কাছে
মাদুরাই জেলার সাক্কিমঙ্গলম গ্রামের বাসিন্দা রেবতী। এখন বয়স ২৩। ৫ বছর বয়সে প্রথমে হারান বাবাকে, মাস ছয়েক বাদে মাকেও। ছোটবেলার সেই ঘটনা রেবতীর মনে নেই, সেটা স্বাভাবিকও। তাঁর কথায়, শুনেছি বাবা মারা গিয়েছিলেন পাকস্থলীর কোনও অসুখে। আর মা প্রয়াত হন ব্রেন ফিভারে আক্রান্ত হয়ে। এরপর আমাকে ও বোনকে বড় করেছেন দিদা কে আরাম্মল। কখনও অন্যের জমিতে কিংবা কোনও ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ করে। দিদাকে অনেক আত্মীয় বলেছিলেন আমাদেরও কাজে পাঠানোর জন্য। কিন্তু তিনি সেই পরামর্শ খারিজ করে তাঁদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওরা স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে। টোকিও অলিম্পিকে রওনা হওয়ার আগে রেবতী কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছে ৭৬ বছরের সেই মহীয়সী নারীর প্রতি, যিনি বাবা-মাকে হারানো দুই শিশুকে শিক্ষার আলো দিতে দিনমজুরির কাজ করেও বড় করেছেন।
বদলেছে জীবন
দিদার সেই অদম্য মনোভাবে রেবতী ও তাঁর বোন দুজনেরই জীবন আজ বদলে গিয়েছে। পঠনপাঠনের পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সের সাফল্যে রেবতী মাদুরাই ডিভিশনে রেলে টিটিই-র চাকরি পেয়েছেন। তাঁর বোন এখন চেন্নাইয়ের পুলিশ অফিসার। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তামিলনাড়ু স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কোচ কে কান্নানের প্রশিক্ষণে নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন রেবতী। রেবতীর অ্যাথলিট হওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সঙ্কোচ ছিল দিদার। কিন্তু তাঁকে বুঝিয়ে রাজি করেন কে কান্নান। তাঁর উদ্যোগে মাদুরাইয়ের কলেজে পড়ার সময় হস্টেলে থাকার সুযোগ পান রেবতী, এতে তাঁর অনুশীলনেও সুবিধা হয়। রেবতীর কথায়, আমি আর বোন বেঁচে রয়েছি দিদা কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের বড় করেছেন বলে। আর ক্রীড়াক্ষেত্রে যা সাফল্য পেয়েছি সব কান্নান স্যরের জন্যই।
খালি পায়ে দৌড়
রেবতী জানিয়েছেন, এমন একটা সময় ছিল যখন দৌড়ানোর জন্য জুতো কেনার পয়সা ছিল না। খালি পায়েই দৌড়াতাম। কলেজ মিট, এমনকী ২০১৬ সালে কোয়েম্বাটোরে জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপেও নামি জুতো ছাড়াই। কিন্তু তারপর সমস্ত কিট, সঠিক ডায়েট-সহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেন কান্নান স্যর। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কান্নানের কাছেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন রেবতী। এরপর সুযোগ পান পাতিয়ালার এনআইএসে। প্রথম দিকে ১০০ ও ২০০ মিটারে দৌড়াতেন, পরে জাতীয় শিবিরের কোচ গালিনা বুখারিনার পরামর্শে ৪০০ মিটারের উপরই জোর দেন। রেবতীর কথায়, বুখারিনা ম্যাডামের কথায় কান্নান স্যর রাজি হতেই ৪০০ মিটারকে বেছে নিই। এর সুবাদেই আজ অলিম্পিকে নামতে পারছি। কান্নান স্যর আমাকে বলতেন, একদিন তুমি অলিম্পিকে দেশের হয়ে নামবে। ফলে এবার সেই স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। কিন্তু সব কিছু যে এত তাড়াতাড়ি হবে ভাবিনি। তবে নিজের সেরাটা যে উজাড় করে দেব তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
অলিম্পিকের পথে
তামিল ভাষায় বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেছেন। দু বছর আগেও হিন্দি বলতে পারতেন না। তবে এখন হিন্দিতে কথা বলতে কোনও অসুবিধাও হয় না। ২০১৯ সালে ফেডারেশন কাপে ২০০ মিটারে রুপো জিতেছিলেন। ইন্ডিয়ান গ্রাঁ প্রি ফাইভ ও সিক্সে ৪০০ মিটারে ওই বছরই চ্য়াম্পিয়ন হন যথাক্রমে ৫৪.৪৪ ও ৫৩.৬৩ সেকেন্ড সময় করে। চলতি বছরের গোড়ায় চোটের কারণে ফেডারেশন কাপ-সহ কিছু ইভেন্টে নামতে না পারলেও ইন্ডিয়ান গ্রাঁ প্রি ফোরে ৪০০ মিটারে জয়ী হন। জাতীয় আন্তঃ রাজ্য প্রতিযোগিতায় ৫৩.৭১ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রিয়া মোহন ও এমআর পূভাম্মার পরই ছিলেন তৃতীয় স্থানে। অলিম্পিকের জন্য ফোর ইনটু ফোর হান্ড্রেড মিটার রিলে দল নির্বাচনের ট্রায়ালে ৫৩.৫৫ সেকেন্ড সময় করে সকলের চেয়ে সেরা পারফর্ম করতেই মেলে টোকিও যাওয়ার ছাড়পত্র। অ্যাথলেটিক্সের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ব্যস্ত থাকলেও কলেজ যেভাবে তামিল ভাষায় বি.এ. উত্তীর্ণ হতে সহযোগিতা করেছে তাতে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রেবতী। এখন তাঁর পাখির চোখ টোকিও অলিম্পিক।