খোলা মনে উত্তর দিলেন পিচাই
ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে গুগলের সদর দফতরে বসে বিবিসির অমল রাজনের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বললেন সুন্দর পিচাই। মার্ক জুকেরবার্গের সঙ্গে কথা হয় কিনা, সোশ্যাল মিডিয়ায় বাক স্বাধীনতা, কোন গাড়ি চালাচ্ছেন এবং দু'টি বিকাশ সম্পর্কে, যা তিনি মনে করেন বিশ্বের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে নবজাগরণের সৃষ্টি করতে পারে, সব কিছুর উত্তর দিলেন একেবারে খোলা মনে। গাড়ির প্রতি সেভাবে টান না থাকলেও বর্তমানে টেসলা গাড়ি চালাচ্ছেন সুন্দর পিচাই।
কোভিডে ভারতের অবস্থা কাঁদিয়েছিল
সাক্ষাতকারের সময় অমল রাজন পিচাইকে জিজ্ঞাসা করেন শেষ কবে তিনি কেঁদেছিলেন? পিচাই খুব সহজভাবে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কোভিডের সময় ট্রাকে করে সারি সারি মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল গোটা বিশ্বজুড়ে। গত কয়েক মাসে ভারতে যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম।' প্রসঙ্গত, ভারতে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে মে পর্যন্ত ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ আছড়ে পড়েছিল। যার জেরে শতাধিক মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে দেশবাসী এবং মৃতদেহ ভাসতে দেখা গিয়েছে গঙ্গা নদীতে এবং সারি সারি কোভিড দেহ পোড়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে।
ভোলেননি ভারতকে
গুগল সিইওকে তাঁর শেকড় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকার নাগরিক হলেও ভারত আমার মধ্যে গভীরভাবে রয়েছে। সুতরাং আমি এখন কে তার বড় অংশ ভারত।' পিচাইয়ের জন্ম তামিলনাড়ুতে এবং তিনি বড় হয়েছেন চেন্নাইতে। সাক্ষাতকারের সময় গুগল সিইও জানান যে তিনি তামিলনাড়ুর মধ্যবর্তী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এবং তিনি এও জানিয়েছেন যে বিভিন্ন প্রযুক্তি তাঁর ওপর পরিবর্তনশীল প্রভাব ফেলেছিল, পুরনো রোটারি ফোন যেখানে অপেক্ষার তালিকা থাকত শুরু করে মাসিক নৈশভোজে যাওয়া স্কুটারটিও। পিচাই বলেন, ‘বেড়ে ওঠার সময় প্রযুক্তি আমাকে একটি জানলা দিয়েছিল যেখান থেকে আমি নিজের বাইরে দেখতে পারতাম। এটা আমায় পরিবারের খুব কাছে এনেছিল। প্রত্যেক সন্ধ্যায় আমরা একসঙ্গে বসে টেলিভিশনে দুরদর্শনে বিশেষ অনুষ্ঠান সারে জাহা সে আচ্ছা দেখতাম। আমি আমার সহকর্মীদের এখন তা বোঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু আমি পারি না এবং ইউটিউবে তা দেখাই।
নতুন প্রযুক্তি আকর্ষণ করত পিচাইকে
পিচাই সাক্ষাতকারে এও বলেন, ‘আমি যখন তরুণ বয়সের, প্রত্যেকটি নতুন প্রযুক্তি আমায় নতুন সুযোগ ও শিক্ষা দিত, যা দেখে আমি বেড়ে উঠেছি। তবে এটি অন্য কোথাও থেকে আসার জন্য আমাকে সর্বদা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আজ, ভারতের মানুষ তাঁদের কাছে প্রযুক্তি আসার অপেক্ষা রাখে না। ভারতে প্রথম সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ঘটছে।'
আমেরিকায় তাঁর সফর মোটেও সহজ ছিল না
গত বছরের এক সাক্ষাতকারে সুন্দর পিচাই ভার্চুয়ালি জানিয়েছিলেন যে তিনি যখন ২৭ বছর আগে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ভারত ছেড়েছিলেন তখন তিনি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হয়েছিলেন। পিচাই জানান যে তিনি যখন ক্যালিফোর্নিয়াতে আসেন তখন তিনি যেমনটা ভেবেছিলেন সেটা ঠিক তেমন ছিল না। পিচাই বলেন, ‘আমেরিকা খুবই ব্যয়বহুল দেশ। বাড়িতে ফোন করতে হলে ২ ডলার খরচ করতে হত। ভারতে আমার বাবার মাসের বেতন যত ঠিক ততটাই ব্যাকপ্যাকের খরচ ছিল।' তবে ৪৮ বছরের শীর্ষ এক্সিকিউটিভ জানান যে ভাগ্যের চেয়েও বড় জিনিস তিনি এখানে পেয়েছেন তা হল প্রযুক্তির প্রতি তাঁর গভীর আসক্তি ও খোলা মন।
পড়াশোনা ও কর্মজীবন
সুন্দর পিচাই চেন্নাইতে বড় হয়েছেন এবং আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং স্নাতকোত্তর হন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়াও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন হোয়ার্টন স্কুল থেকে। ২০০৪ সালে তিনি গুগলে যোগ দেন এবং গুগল টুলবার ও পরে গুগল ক্রোম উন্নয়নে সহায়তা করেন, যা এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ইন্টারনেট ব্রাউজার।