ফের সহজেই বিরোধীরা সরব হওয়ার সুযোগ পেলেন, 'ফেস লস' হবে নাতো তৃণমূলের?

ভুয়ো ভ্যাকসিন-কাণ্ডে কার্যত তোলপাড় রাজ্য। আর এরই মধ্যে দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে একাধিক নেতার ছবি কার্যত অস্বস্তিতে ফেলেছে শাসকদল তৃণমূলকে। এমনকি ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেবাঞ্জনের ছবিকে সামনে এনে শাসকদলের উপর চাপ বাড়াচ্ছে বিজেপি।

অস্বস্তি যে এতটাই যে দেবাঞ্জনের সঙ্গে তাঁর ছবি থাকা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে কার্যত মেজাজ হারাতে দেখা যায় ফিরহাদ হাকিমকে।

তাঁর সাফ মন্তব্য ছিল, সারাজীবন মানুষের কাজ করে যাব গালিগালি খাওয়ার জন্য! কে এসে প্রণাম করল আর পাল্টা আমি করলাম তাতে কেলেঙ্কারি হয়ে গেল। ছবি ঘিরে অস্বস্তিতে সাংসদ তথা আইএমএ কর্তা শান্তনু সেনও। কারণ তাঁর ছবি সামনে আসতেই পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।

এমন বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেবাঞ্জনের ছবি সামনে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও! বিষয়টি যথেষ্ট কড়া ভাবে নিয়েছেন তিনি আর তাঁর দল। প্রকাশ্যে বিষয়টি বিজেপির কারসাজির কথা বললেও দলের মধ্যে এই নিয়ে কার্যত কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি।

আর এরপরে দলের তরফ থেকে সমস্ত নেতা-বিধায়ক-মন্ত্রীদের জন্যে একগুচ্ছে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নির্দেশিকাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে তৃণমূলের বিধায়ক বা নেতা মন্ত্রীদের! দুম করে চলে যাওয়া যাবে না।

অনুষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এমনকি যে কোনও ব্যাক্তির সঙ্গে ছবি তোলার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে! কিন্তু যেখানে বিধায়কদের সাবধান করা হচ্ছে সেখানে এটা কি করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

আজ মঙ্গলবার বিধানসভা থেকে সোজা সল্টলেকে মুকুল রায়ের বাড়িতে চলে যান মমতা। উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার সকালে চেন্নাইতে মৃত্যু হয়েছে মুকুল-পত্নী কৃষ্ণা রায়ের। আর সেই খবর পাওয়ার পরেই দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা মুকুলের বাড়িতে পৌঁছে যান নেত্রী। সেখানে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান। রাজনীতির বাইরেও একটা সম্পর্ক ছিল তাঁদের মধ্যে।

এরপর যখন বেরিয়ে আসলেন সেই সময় তাঁর কাছাকাছি দেখা গেল কৌস্তুভ রায়কে! একটা সময় আর পি গ্রুপের কর্ণধার এই কৌস্তুভ রায়ের বিরুদ্ধেও প্রতারণার করার অভিযোগ উঠেছিল। ৫১৫ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। কানাড়া ব্যাঙ্ক-সহ ১০টি ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে না মেটানোর অভিযোগ!

আর ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। বেশ কয়েকবার কৌস্তুভ রায়ের বাড়িতে ও অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। পরে গ্রেফতারও করা হয়েছিল!

দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর এখন তিনি যদিও মুক্ত। দলনেত্রীর নিজের অজান্তে তাঁর পিছনে এমন একজনকে দেখা গেল যাকে নিয়ে বিতর্ক! একাংশ বলছেন ২০২৪ এর দিকে তাকিয়ে এগোচ্ছে তৃণমূল! সাদা গায়ে যাতে কোনও কালো দাগ না পড়ে সেদিকে তাকিয়ে নির্দেশ জারি করা হচ্ছে।

আর সেখানে দলনেত্রী এমন একজনকে তাঁর পিছনে জায়গা করে দিলেন তাঁকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এমনকি অনেকের আশঙ্কা, এই ছবিকে সামনে রেখে কোনও কুকীর্তি চলবে না তো? যাতে নিজের অজান্তে খোদ নেত্রীর 'ফেস লস' হয়? কৌস্তুভের সঙ্গে মমতার এই ছবি ঘিরে কি বলছেন বিরোধী? শাসক তৃণমূলের মত-ই বা কি?

সুজন চক্রবর্তী - (সিপিএম)- আমি ছবিটা দেখিনি তাই জানি না আসলে বিষয়টা কী ঘটেছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বচ্ছ ও সৎ লোক কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর ডাইনে ও বাঁয়ে সেই সব লোকের থাকার যোগ্যতায় বেশি যাদের বিভিন্ন রকম ত্রুটি ও অপরাধে নাম আছে৷

সায়ন্তন বসু - (বিজেপি) 'এরকম ঘটনা বহুবার ঘটেছে৷ এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী বিদেশে গিয়েছেন ওরঁ সফরসঙ্গী হোটেলে চামচ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। আবার উনি বিদেশ থেকে ফিরেছেন ওঁর আর এক সফরসঙ্গীকে সিবিআই বিমানবন্দরেই গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। ওঁর বিধানসভার সদস্যদের বিরুদ্ধেই তো একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে৷ উনি ২০১৬ ভোটের সময় বলেছিলেন এদের দলে রাখবেন না। এখন তাঁরাই মন্ত্রী। খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লোকজন ওর সঙ্গে থাকে না। উনিও রাখতে চান না।'

দেবাংশু ভট্টাচার্য (তৃণমূল মুখপাত্র) 'কৌস্তভ রায় মিডিয়া পারসন হিসেবে দিলীপ ঘোষেরও ইন্টারভিউ নিয়েছেন৷ উনি সংবাদমাধ্যম কর্মী হিসেবে যেখানে খুশি যেতে পারেন, তার দায় কারও নয়।' এরপর ওয়ানইন্ডিয়াবাংলার পক্ষ থেকে দেবাংশুকে প্রশ্ন করা হয়, দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে দলের বড় নেতাদের ছবি বাইরে আসায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তৃণমূল সমর্থকদের। আপনার কী মনে হয় না নেতাদের পাশে কারা ঘুরছেন সে বিষয়ে আরও সাবধানী হওয়া উচিৎ আপনাদের?

প্রশ্নের উত্তরে দেবাংশু বলেন, 'দেখুন উনি জননেত্রী, মানুষের নেত্রী৷ ওঁর আশেপাশে প্রচুর মানুষ থাকেন। এবার তাদের কাউকে ডেকে আনা হয় না৷ না সম্ভব তাঁদের নামে কটা কেস আছে চেক করা। না জেনে কারও পাশে কেউ দাঁড়ালে সেটা দোষের নয়। বরং সব জেনেও মেহুল চোকসী, নীরব মোদীকে পাশে রেখে ঘুরতেন নরেন্দ্র মোদী সেটা অন্যায়।

এরপর এই বিষয়ে সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য নিয়ে দেবাংশু বলেন, 'এসব ভুলভাল কথা বলেই ওঁরা আজ শূন্য৷ কার পাশে রাজ্যের মানুষরা আছে কাদের পাশে নেই, সেটা রাজ্যবাসী ২রা মে-তেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।'

কলকাতা পুরসভা ঘেরাও অভিযান ছিল প্রতীকী, শক্তি প্রদর্শনের জন্য নয় মন্তব্য দিলীপ ঘোষের

অন্যদিকে, কৌস্তুভ রায় দীর্ঘদিন মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ। এর আগে মমতা বন্দ্যপাধ্যায়ের ছবি কেনা নিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন এই ব্যবসায়ী! সিবিআই ছবি কেনা নিয়ে বেশ কয়েকবার জেরাও করে। মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরার পর নতুন করে একফ্রেমে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার দেখা গিয়েছে কৌস্তুভকে।

More MAMATA BANERJEE News  

Read more about:
English summary
opposition get opportunities again, may be another face loss of tmc?
Story first published: Tuesday, July 6, 2021, 21:10 [IST]