ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের আবেদন
২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি হলদিয়ায় ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্রিজ বিহারীজি-র কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন তমলুকের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। কাঁথি শহরের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে সংস্থার কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর ফান্ড থেকে কাঁথি পুরসভাকে একটি ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ (চিঠির নম্বর- 413/MP(LS)/DA-2020 dated 4th Jan 2020) । মাঝে কিছু জটিলতায় অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার প্রক্রিয়া আটকে ছিল। তখন ফের সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন দিব্যেন্দু অধিকারী। এরপর গত শুক্রবার ২ জুলাই কাঁথি পুরসভাতে আসে ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। দীর্ঘদিনের দাবিপূরণে স্বস্তি পান কাঁথিবাসী।
সম্পর্কের অবনতি
দিব্যেন্দু অধিকারী গত বছর যখন অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে চিঠি পাঠান তখন পুরসভার মাথায় ছিলেন তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। দীর্ঘদিন পুরসভার চেয়ারম্যান ও প্রশাসক পদে থাকা সৌমেন্দুকে পদ থেকে তৃণমূল সরিয়ে দেয় তাঁর দাদা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর। সৌমেন্দুও বিজেপিতে যোগ দেন। এরপর কাঁথি পুরসভা ইয়াসের পর শুভেন্দু, সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে পুরসভা থেকে ত্রিপল চুরির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে। সেই মামলা বিচারাধীন। বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। দিব্যেন্দুও দলবদল করেননি। তবু কাঁথিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নানা কু-কথায় বিদ্ধ হয় অধিকারী পরিবার। শিশির অধিকারী তাঁদের বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছিলেন, সময় হলেই ফের এ সব কথার জবাব দেবে কাঁথির মানুষ। তাঁরা সকলেই সত্যটা জানেন।
কৃতিত্ব নিয়ে রাজনীতি
দিব্যেন্দু অধিকারীকেও বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও পরে দলের কোনও কর্মসূচিতে ডাকেনি তৃণমূল কংগ্রেস। এতে দিব্যেন্দু-অনুগামীদের ক্ষোভ রয়েছে। এখন দিব্যেন্দুর চিঠির প্রেক্ষিতে কাঁথি পুরসভা ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পেলেও বর্তমানে পুরসভা যাঁরা পরিচালনা করছেন তাঁরা সাংসদের অবদানকে পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তাঁদের হাতিয়ার জেলা প্রশাসনের চিঠি। যাতে লেখা রয়েছে, হলদিয়ার ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দিলেন। ২ জুলাই লেখা সেই চিঠিটির মেমো নম্বর- 112/XXXXII/Tourism। এর কোথাও উল্লেখ নেই সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর নাম, এমনকী সাংসদকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ফলে বিরোধীরা তো বটেই, তৃণমূলের একাংশও সাফ বলছেন, কৃতিত্ব নেওয়ার রাজনীতি থেকে সরকারি দফতরও মুক্ত হতে পারল না!
দিব্যেন্দুকে চিঠি আইওসি-র
তবে দিব্যেন্দু অধিকারীর চিঠির প্রেক্ষিতেই যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কাঁথি পুরসভাকে ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছে সে কথা জানিয়েছে হলদিয়ার আইওসি কর্তৃপক্ষ। সাংসদের কাছে যে চিঠি আইওসি-র তরফে পাঠানো হয়েছে তার নম্বর HR/CSR/21-02। ৩ জুলাই লেখা সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংসদের অনুরোধ পেয়ে গত ২৭ জুলাই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে জানানো হয় কাঁথি পুরসভার জন্য ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স প্রদানের কথা। গত ২ জুলাই পদ্ধতি মেনে তা কাঁথি পুরসভাকে দেওয়াও হয়েছে। অবশ্য দলবিরোধী কোনও কার্যকলাপে যুক্ত না থাকা সাংসদের এই উন্নয়নমূলক কাজের সুবিধা নিলেও কাঁথি পুরসভা বা জেলা প্রশাসন কেন সেই সাংসদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখল বা তা আদৌ সৌজন্যমূলক কিনা তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কেউ কেউ ঠারেঠোরে বলছেন, উপর মহলকে খুশি রাখতেই এভাবে ধরি মাছ, না ছুঁই পানি বা জলে নেমেও মাথার চুল না ভেজানোর এই রণকৌশল! বিরোধীদের কটাক্ষ, দলের সাংসদের প্রতিই যেখানে তৃণমূলের এমন মনোভাব, তাতে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের কাজ করার কতটা সুযোগ বাংলায় রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।