মুকুল রায়ের পদক্ষেপে চাপে পড়ে রণনীতি বদলাচ্ছে বিজেপি!
বিজেপি যে একুশের বিধানসভা ভোটের পর মুকুল রায়ের পদক্ষেপে চাপে পড়ে রণনীতি বদল করছেন তাঁর প্রমাণ হল রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বয়ান। বিধানসভা শুরুর দিনই তিনি মুকুল রায়কে নিশানা করেছিলেন। আর শনিবার তিনি আক্রমণ শানালেন নাম না নিয়েই। তাঁর এই আক্রমণের সুর বদলই প্রমাণ করে দিয়েছে চাপে রয়েছে বিজেপি।
তৃণমূলের পাল্টা চালে মুকুল রায় 'বিজেপিতে'ই!
মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বিধায়ক পদ বাতিলের দাবি তুলেছিলেন। বিজেপির পক্ষ থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ বিষয়ে তদ্বির শুরু করেছিলেন। তা এখন বিচারাধীন। এরপর তৃণমূল পাল্টা চাল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন। অন্তত বিজেপির বিধায়ক হিসেবে তিনি বিরোধী বেঞ্চেই বসছেন।
মুকুলকে পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসাতে
তৃণমূল এই গেম খেলে মুকুল রায়কে পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসাতে চলেছে। সাধারণত পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হন বিরোধী বিধায়কের মধ্যে কেউ। সেই হিসেবে বিজেপি চেয়ারম্যান পদের দাবিদার। তবে সংবিধানে এমনও লেখা নেই যে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বিরোধী দলকেই ছাড়তে হবে।
এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা তৃণমূল কংগ্রেসের
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুকুল রায়কে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসানোর পরিকল্পনা করছে তৃণমূল। তাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। সরকারিভাবে নথিভুক্ত থাকবে ওই পদ বিরোধী বিধায়ককেই দেওয়া হয়েছে। আর ঘুরিয়ে শাসকদল তৃণমূল নিজেদের লোককেই বসিয়ে দিচ্ছে ওই পদে।
অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি, প্ল্যান বদলাতে হচ্ছে তড়িঘড়ি
এভাবেই সুপরিকল্পিতভাবে বিজেপিকে প্যাঁচে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি সরকারিভাবে বলতে পারবে না যে মুকুল রায় বিজেপির বিধায়ক নন। মুকুল রায় বিধানসভা শুরুর দিনেই বসেছিলেন বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে বিরোধী বেঞ্চে। সেই ছবিই আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। তাই প্ল্যান বদলাতে হচ্ছে তড়িঘড়ি।
মুকুল রায় ঠিক কতজন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ!
বিজেপির ভাবনায় জড়ো হয়েছে, মুকুল রায় ঠিক কতজন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। অনেকের সঙ্গে যে মুকুল রায়ের সম্পর্ক ভালো, তার প্রমাণও দিয়েছেন শুক্রবারের বিধানসভা। কেননা বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের মাঝে বিজেপি যখন ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তখন বিজেপির দুই বিধায়ক মনোজ টিগ্গা ও জুয়েল মুর্মু মুকুল রায়ের পায় হাত দিয়ে প্রণাম করে গিয়েছেন।
বিজেপি সহজভাবে নিচ্ছে না মুকুল রায়কে প্রণামের বিষয়টি
সেই ঘটনা বিজেপি নেতৃত্বের নজর এড়ায়নি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ভালোভাবে নেননি, তা তাঁর শরীরি ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছিল। তবে মনোজ টিগ্গা বা জুয়েল মুর্মু উভয়েই জানিয়েছেন নেহাতই সৌজন্য দেখিয়েই তাঁরা প্রণাম করেছেন। তবে বঙ্গ বিজেপি এত সহজভাবে বিষয়টিকে নিচ্ছে না।
মুকুল বিরোধী আসনে, নিশানা দিলীপ ঘোষের
ওই ঘটনার পর শুক্রবার মুকুল রায়ের নাম নিয়ে সরাসরি আক্রমণের রাস্তায় হেঁটেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছিলেন, বাংলার রাজনীতিতে মুকুল রায় একজন বরিষ্ঠ নেতা। তিনি বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে তৃণমূলে যোগ দিলেন। আর এখন তিনি নির্লজ্জের মতো আমাদের বেঞ্চে বসে রয়েছেন। পিএসি চেয়ারম্যান হবেন বলেই কি তিনি ত্রিশঙ্কু হয়ে গেলেন?
মুকুল রায়ের হাতযশে বিজেপিতে না বড়সড় ভাঙন লেগে যায়!
তৃণমূলের এই মাস্টারস্ট্রোকে তীব্র অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। মুকুল রায় তিনি বঙ্গ বিজেপির অন্দরে অস্বস্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছেন। দিলীপ ঘোষ-রা বুঝতে পারছেন না কত জন বিধায়ক, সাংসদ বা নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগযোগ রাখছেন। তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন, কখন না মুকুল রায়ের হাতযশে বিজেপিতে বড়সড় ভাঙন লেগে যায়।
তৃণমূল নেতা হয়ে ছড়ি ঘোরাবেন মুকুল, মেনে নিতে হবে বিজেপিকে।
আর বিজেপির কাছে বড় জ্বালা হল, এখন সেই মুকুল রায়কে পাশে নিয়েই তাঁদের বসতে হবে বিধানসভায়। বিজেপি এই অস্বস্তি লুকনোর জায়হা পাচ্ছে না। বিজেপি কেনওদিনই প্রমাণ করতে পারবে না যে, মুকুল রায় তাঁদের বিধায়ক নয়। খাতায়-কলমে তিনি বিজেপির বিধায়ক থাকবেন, আর তৃণমূল নেতা হয়ে ছড়ি ঘোরাবেন, তা মেনে নিতে হবে বিজেপিকে।
রাজনীতি থেকে নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, নিশানা দিলীপের
এই অবস্থায় রণনীতিতে বদল আনছে বিজেপি। এদিন মুকুল রায়ের নাম না নিয়েই দিলীপ ঘোষ বলেন, একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সাধারণ মানুষের কাছে কী উদাহারণ তৈরি করছেন। রাজনীতি থেকে নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। এরপর মানুষ আর রাজনীতি সম্পর্কে আগ্রহ দেখাবে না। একজন লোক আমাদের দল থেকে জিতল, তাঁকে অন্য দলে যোগদান করিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান করানো হচ্ছে।
তৃণমূলের চালাকির রাজনীতির প্রতিবাদ করবে বিজেপি
দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, এটা সংসদীয় পরম্পরা নয়। এই চালাকির রাজনীতির প্রতিবাদ করব আমরা। আমাদের বৈঠকে প্রস্তাবও নিয়েছি। সরকার যদি চালাকি করে, নীতি না মানে, আমরা তার বিরোধিতা করব। ইতিমধ্যে আমরা তা শুরু করেছি। এই প্রতিবাদ ও বিরোধিতা চলতে থাকবে।