বেফাঁস খোকন
বর্ধমানে এক দলীয় সভায় বিধায়ক খোকন দাস ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে, সবচেয়ে বেশি আসন নিয়ে বাংলায় ফের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর একটি দল সাংবাদিকদের মধ্যে টাকা ছড়িয়ে, পয়সা ছড়িয়ে, মদের বোতল দিয়ে ভেবেছিল বাংলায় তারা ক্ষমতায় আসবে! খোকন বিজেপির নাম না নিয়ে নিশানা করতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রতি এই অসম্মানজনক মন্তব্য করায় নিন্দার ঝড় ওঠে।
পাশে নেই দল
খোকনের এই মন্তব্য তৃণমূল কংগ্রেস যে সমর্থন করে না সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের রাজ্য মুখপাত্র তথা বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু। তিনি বলেন, এই ধরনের মন্তব্য আমাদের দল সমর্থন করে না। কেউ এমন বলে থাকলে তা তাঁর ব্যক্তিগত মত। তিনি সত্যি এমন মন্তব্য করে থাকলে ভুল করেছেন। দল এটা সমর্থন করে না। যদিও বিধায়কের এই বক্তব্যের এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায়। চাপে পড়ে সাফাই দিতে গিয়ে বিধায়ক খোকন দাস বলেন, আমি এভাবে বলতে চাইনি। একটু ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।
ধিক্কার বিজেপির
বিধায়ক নিশানা করতে চেয়েছেন বিরোধী দল বিজেপিকেই। সাংবাদিকদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য নিয়ে বর্ধমান শহরের বিজেপি নেতা প্রবাল রায় বলেন, বিধায়ক যে কথা বলেছেন, বর্ধমান জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে ধিক্কার জানাচ্ছি। সাংবাদিকরা গণতন্ত্রের মূল্যবান স্তম্ভ, তাঁদের আমরা সম্মান, শ্রদ্ধা করি। মদের বোতল, টাকা দিয়ে কেনা তো দূরের কথা। বিশ্বের বৃহত্তম দলের নেতৃত্বের এমন দুর্দশা হয়নি যে তেমনটা আমাদের করতে হবে। আমাদের দলের এমন রুচিও নেই। সাংবাদিকদের আমরা শ্রদ্ধার চোখেই দেখি। তবে যিনি বলেছেন তিনি বা তাঁর দল এমন পথ অবলম্বনকে সমর্থন করেন কিনা সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন।
বিধায়ককে নিয়ে জলঘোলা
এরই মধ্যে বর্ধমান পুরসভার কাজকর্মে বিধায়ক খোকন দাসের হস্তক্ষেপের অভিযোগ ঘিরে অস্বস্তি বেড়েছে প্রশাসনিক মহলেও। ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাতেই সেই খবর প্রথম প্রকাশিত হয়। তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হওয়া সত্ত্বেও পুরসভার দুই কর্মীকে তিন মাসের জন্য বিভাগীয় বদলি হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত যে বৈঠকে হয় তাতে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের প্রাক্তন এক কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, বিধায়কের মতামতকে মান্যতা দিয়েই এই বদলি। এমনকী বিধায়ক ও পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই বদলি বলে আদেশনামায় উল্লেখ করা হয়। শুধু তাই নয়, ২২ জুন পুরসভার টেন্ডার কমিটির বৈঠকেও বিধায়কের উপস্থিতি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়। বিধায়কের দাবি ছিল, তিনি এগজিকিউটিভ অফিসারের আমন্ত্রণ পেয়েই দুই বৈঠকে ছিলেন। কিন্তু কোনও মতামত ব্যক্ত করেননি। পুরসভার কাজকর্মেও হস্তক্ষেপ করেননি।
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা
প্রশাসনিক মহলে অবশ্য শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা শুরু হয়েছে। পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহর দাবি, বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। তবে উনি কোনও প্রভাব খাটাননি। চিঠিতেও সেটা স্পষ্ট রয়েছে। যদিও পুরপ্রশাসক দীপ্তার্ক বসু চিঠির বয়ান নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, বিধায়ককে নিয়ে একের পর এক উন্নয়নমূলক আলোচনা পুরসভায় চলছিল। সেখানে ওই বয়ানে চিঠি কেন লেখা হল তা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। টেন্ডার কমিটির বৈঠকে বিধায়কের উপস্থিতি যে বেআইনি সে কথাও এগজিকিউটিভ অফিসারের কথায় স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, বেচারহাটে অম্রুত প্রকল্পের কাজ করতে বাধা এসেছিল। স্থানীয় মানুষজনকে বোঝাতে জনপ্রতিনিধির ভূমিকা থাকে। সে কারণেই তাঁকে ডাকা হয়েছিল। উনি কোনও কথা বলেননি। এখানেও প্রশ্ন, সেটা তো বিধায়কের সঙ্গে আলাদাভাবেও কথা বলা যেত, টেন্ডার কমিটির মিটিংয়ে ডাকার কোন দরকার ছিল? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তাকে মান্যতা দিতে গোটা ঘটনা পরম্পরার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছে তৃণমূলেরই একাংশ। ২০১৮ সালে বোর্ডের মেয়াদ শেষের পরেও কীভাবে এত বছর পুরসভার ঘর আটকে খোকন দাস নিজের অফিস চালাচ্ছেন তা নিয়েও সরব হয়েছেন অনেকেই।