গ্রুপ পর্যায়ে
১৯৮৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ, যা প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ নামে খ্যাত, হয়েছিল ৯ থেকে ২৫ জুন। সাদা পোশাক, লাল বলে। একেকটি ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারের। মজার ব্যাপার হলো, ভারত ফাইনাল-সহ আটটি ম্যাচের মাত্র দুটিতেই পুরো ৬০ ওভার খেলেছে। গ্রুপ বি-তে ভারতের সঙ্গে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবোয়ে। প্রথম ম্যাচ ভারত খেলেছিল ৯ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে যশপাল শর্মার ৮৯ ও সন্দীপ পাটিলের ৩৬ রানের সুবাদে ভারত ৬০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৬২ তোলে। ৫৪.১ ওভারে ক্যারিবিয়ানরা গুটিয়ে যায় ২২৮ রানে। রজার বিনি ও রবি শাস্ত্রী তিনটি করে উইকেট নিয়েছিলেন। ১১ জুন জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল ভারতের। জিম্বাবোয়ে ১৫৫ রান তোলার পর ভারত ১৩৫ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতেছিল। এই ম্যাচে মদন লাল তিনটি এবং রজার বিনি ২টি উইকেট নেন। সন্দীপ পাটিল ৫০ ও মোহিন্দর অমরনাথ ৪৪ রান করেছিলেন। ১৩ জুন অবশ্য ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়। ট্রেভর চ্যাপেলের ১১০ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ৩২০ রানের পাহাড়প্রমাণ রান তোলে অজিরা। এই ম্যাচে ৪৩ রানে ৫ উইকেট নেন কপিল দেব, মদন লাল দুটি। কপিলের ৪০ ও শ্রীকান্তের ৩৯-এ ভর করে এরপর ভারত অবশ্য ১৫৮-র বেশি এগোতে পারেনি অল আউট হওয়ার আগে।
ফিরতি ম্যাচে
ফিরতি ম্যাচে ১৫ জুন ভারত খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ভিভিয়ান রিচার্ডসের ১১৯ রানের ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পৌঁছে দেয় ৯ উইকেটে ২৮২ রানে। রজার বিনি নেন ৩ উইকেটে। ভারত এই ম্যাচে অল আউট হয়ে যায় ২১৬ রানে। অমরনাথ ৮০ রান করেছিলেন। দিলীপ বেঙ্গসরকার রিটায়ার্ড হার্ট হন ৩২ রানে। কপিল করেছিলেন ৩৬। মাইকেল হোল্ডিং তিনটি এবং অ্যান্ডি রবার্টস ২ উইকেট নিয়েছিলেন। ১৮ জুন বিশ্বকাপের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট ভারতের। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ৯ রানে ৪ উইকেট এবং ১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ভারত। ৭৭ রানে ষষ্ঠ, ৭৮ রানে সপ্তম এবং ১৪০ রানে অষ্টম উইকেট পড়ে যায়। ভারতকে এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন কপিল দেব। খেলেছিলেন ১৩৮ বলে ১৭৫ রানের অপরাজিত ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ১৬টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকান। এরপর তিন ওভার বাকি থাকতে জিম্বাবোয়েকে ২৩৫ রানে থামিয়ে দেয় ভারত। মদন লাল তিনটি এবং রজার বিনি দুটি উইকেট পেয়েছিলেন। ২০ জুন আরও একটি স্মরণীয় জয় ভারতের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যশপাল শর্মার ৪০ ও সন্দীপ পাটিলের ৩০ রানের সুবাদে ভারত ৫৫.৫ ওভারে তোলে ২৪৭ রান। ৩৮.২ ওভারে মাত্র ১২৯ রানে গুটিয়ে যায় অজিরা। মদন লাল ২০ রানের বিনিময়ে এবং রজার বিনি ২৯ রানের বিনিময়ে চারটি করে উইকেট দখল করেছিলেন। এই জয়ের সুবাদে ভারত পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে।
ব্রিটিশ বধ
২২ জুনের সেমিফাইনালে ৩২ বল বাকি থাকতে ভারত ইংল্যান্ডকে হারায় ৬ উইকেটে। ইংল্যান্ড ২১৩ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল। কপিল দেব তিনটি এবং বিনি ও অমরনাথ ২টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। ৫৪.৪ ওভারে ভারত চার উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। যশপাল শর্মা ৬১, সন্দীপ পাটিল অপরাজিত ৫১ ও অমরনাথ ৪৬ রান করেন। ইংল্যান্ডের ডেভিড গাওয়ার বলেছিলেন, আমরা কীর্তি আজাদ এবং অমরনাথের বোলিং বুঝতেই পারিনি। মিডিয়াম পেসারের মতো দৌড়ে এসে স্পিনারের মতো বোলিং করেন অমরনাথ। আর স্পিনার হয়েও মিডিয়াম পেসারের গতিতে বল করছিলেন আজাদ, যিনি একটি উইকেটও পেয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক ফাইনাল
তিরাশির বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল ২৫ জুন। পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল দু-বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস হেরে ব্য়াট করতে নেমে ভারত ৫৪.৪ ওভারে ১৮৩ রানে অল আউট হয়ে যায়। কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত করেছিলেন সর্বাধিক ৩৮। পাটিল ২৭ ও অমরনাথ ২৬ রান করেন। রবার্টস ৩টি, হোল্ডিং মার্শাল ও ল্যারি গোমস ২টি করে উইকেট নেন। গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স,ভিভিয়ান রিচার্ডস, অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড-সমৃদ্ধ তারকাখচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫২ ওভারে ১৪০ রানে থামিয়ে দিয়ে ইতিহাস গড়েছিল ভারত। দলের ৫ রানের মাথায় গ্রিনিজ আউট হয়েছিলেন। তাঁকে ফেরান বলবিন্দর সিং সান্ধু। এরপর দলকে যেভাবে হেইন্স ও রিচার্ডস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাতে ভারতের আশঙ্কা বাড়ছিল, তবে আত্মবিশ্বাস অটুট ছিল। ব্রেক থ্রু দেন মদন লাল। দলের ৫০ রানে হেইন্স ও ৫৭ রানে রিচার্ডসকে ফিরিয়ে। এরপর ৭৬ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট পড়ে ক্যারিবিয়ানদের। ১১৯ রানে জিওফ্রে দুজঁকে ফিরিয়ে ফের ব্রেক থ্রু, এবার অমরনাথের। শেষে ৪৩ রানে জয় ছিনিয়ে লর্ডসে ইতিহাস। ভারতের প্রথম বিশ্বজয়। ফাইনালে মদন লাল ১২ ওভারে ২ মেডেন-সহ ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। ৭ ওভারে ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ফাইনালের সেরা হন অমরনাথ। সান্ধু নিয়েছিলেন ৩২ রানে ২ উইকেট। কপিল ১১ ওভারে ৪ মেডেন-সহ ২১ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছিলেন অ্যান্ডি রবার্টসের উইকেট।
সোনালি সফর
তিরাশির বিশ্বকাপে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় কপিল দেব ছিলেন পাঁচ নম্বরে। ৮ ম্যাচে ৩০৩ রান কপিলের, গড় ৬০.৬০। সর্বাধিক উইকেটশিকারী রজার বিনি। ৮ ম্যাচে মোট ৮৮ ওভার করে ৯ মেডেন-সহ ৩৩৬ রানের বিনিময়ে দখল করেছিলেন ১৮ উইকেট। মদন লালের সংগ্রহে ছিল ১৭ উইকেট। কপিল ১২টি এবং অমরনাথ ও সান্ধু ৮টি করে উইকেট পেয়েছিলেন। সুনীল ভালসনই হলেন ভারতীয় দলের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি বিশ্বকাপজয়ী দলে থাকলেও একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করে এদিন টুইট করেছে বিসিসিআই ও আইসিসি।