ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস, হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই কমিটি গঠন করে তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

বাংলায় ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে রাজ্য। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্টের। আর এই অবস্থায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর এহেন নির্দেশের পরেই তৎপরতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। অন্যদিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে, এই আশঙ্কা করে মামলাকারীকে সর্বোচ্চ আদালতে ক্যাভিয়েট দাখিল করতে চলেছেন মামলাকারী আইনজীবী অনিন্দ্য সুন্দর দাশ।

আট সদস্যের কমিটি গঠন

জানা গিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মানবাধিকারি কমিশন। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নির্দেশে আট সদস্যের একটি টিম বা দল তৈরি করে কমিটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি বাংলায় এসে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে তদন্ত করবে। জানা গিয়েছে, খুব শিঘ্র এই টিম বাংলাতে আসবে। যে সমস্ত এলাকা থেকে ভোটের পরে একের পর এক হিংসার খবর উঠে এসেছে সেখানে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই কমিটি রিপোর্ট হাইকোর্টকে জমা দেবেন বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও এই কমিটি কথা বলবে।

প্রাক্তন গোয়েন্দার নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে কমিটি

প্রাক্তন আই বি প্রধান রাজীব জৈনের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে এই কমিটি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, তদন্ত করবেন তাঁরা। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নির্দেশে তৈরি এই কমিটিতে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন আতিফ রশিদ, জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য রাজুবেন এল দেশাই, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিরেক্টর জেনারেল সন্তোষ মেহতা, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের আধিকারিক প্রদীপ কুমার পাঁজা ও রাজ্য আইন বিভাগের সেক্রেটারি রাজু মুখোপাধ্যায় রয়েছেন। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন আধিকারিক রয়েছেন বিভিন্ন বিভাগ থেকে।

মানবাধিকার কমিশনে যান রাজ্যপাল

গত কয়েকদিন আগেই দিল্লি যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আর সেখানে পৌঁছেই কার্যত নজিরবিহীনভাবে মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন তিনি। অরুণ মিশ্রের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। যা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। একজন রাজ্যপাল তিনি মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারেন কিনা টা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জানা যায়, মানবাধিকার কমিশনের কাছে বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বেশ কিছু নথি তুলে দেন। পালটা তাঁকে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন বিচারপতি। জানা যাচ্ছে, রাজ্যপালের এই রিপোর্ট এই কমিটির অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।

একাধিক কমিশন ঘুরে গিয়েছে বাংলা

শিশু সুরক্ষা কমিশন, মহিলা কমিশণ সহ ভোটের পর একাধিক কমিশন এসেছে। সন্ত্রাসের অবস্থা খতিয়ে দেখেছে। এমনকি খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের টিম বাংলায় ঘুরে গিয়েছে। সেই সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যে জমা পড়েছে। আর এই তথ্য কাজে কি লাগতে পারে মানবাধিকার কমিশনের? প্রশ্ন রাজনৈতিকমহলের।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সাহায্যের নির্দেশ

রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলার শুনানির জন্যে স্পেশাল বেঞ্চ গঠন করা হয়। সোমবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় এই বেঞ্চে। শুনানিতে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বলে, রাজ্য সরকার প্রথমে বিষয়টি স্বীকার করতে চায়নি। কিন্তু আদালতের কাছে বেশ কিছু প্রমাণ এসেছে। যা নিয়ে আদালত চুপ করে বসে থাকতে পারে না। সেই কারণে ১৮ জুন হিংসার তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কমিটি গঠন করার নির্দেশ হাইকোর্টের। নির্দেশ অনুযায়ী, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং রাজ্য মানবাধিকার কমিশন সবরকম সাহায্য করবে। কোনও রকম অসহযোগিতার অভিযোগ উঠলে নির্দেশ অবমাননা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টে রাজ্যের আবেদন

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনার তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রত্যাহারের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানায় রাজ্য সরকার। আবেদনে বলা হয়েছিল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হাতে দায়িত্ব না দিয়ে রাজ্য সরকারকে আরও একবার সুযোগ দেওয়া হোক। সোমবার প্রথম দফাতেই সেই মামলার শুনানি হয়।

More CALCUTTA HIGH COURT News  

Read more about:

calcutta high court

English summary
NHRC Sets Up Committee to Probe Complaints of Post-poll Violence in West Bengal