সুমন ভট্টাচার্য: টিকিয়া আর রুমালি রুটি। কিংবা মুচমুচে চিকেন রোল। গড়িয়াহাটের মোড়ে বই খুঁজতে খুঁজতে কিংবা টুকটাক কেনাকাটি সারতে সারতে সস্তায় খাওয়া-দাওয়া। এতটাই সস্তা ছিল যে এক সময় দশ টাকায় চমৎকার টিকিয়া দিয়ে দুটো বা তিনটে রুমালি রুটি খাওয়া হয়ে যেত। আজ থেকে তিরিশ বছর আগে ‘গড়িয়াহাটের মোড়, মিনি মিনি মিনি বাস’-এর মাঝে খাওয়ার জন্য এটাই ছিল ‘বেদুইন’ এর সঙ্গে আমাদের পরিচয়ের প্রধান কারণ। সস্তায় লোভ লাগানো খাবার।
‘বেদুইন’ এর সেই ছোট্ট দোকান থেকে আজ দক্ষিণ কলকাতায় এই ‘ফুড ব্র্যান্ড’-এর অনেক আউটলেট। এমন কি গড়িয়াহাটেই রাসবিহারি অ্যাভিনিউ এর উপর বাসন্তী দেবী কলেজের বিপরীতে চমৎকার রেস্তোরাঁও হয়ে গিয়েছে। আড়ে এবং বহরে ‘বেদুইন’ নামক ফুড চেনের এই বৃদ্ধি হলেও তার ‘ইউএসপি’ বা ইউনিক সেলিং পয়েন্টটা একই রয়ে গিয়েছে। সস্তায় ভালো খাবার। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং কলেজ পড়ুয়াদের মানিব্যাগের দিকে নজর রেখে যেন ‘বেদুইন’ এর খাবারের দাম ঠিক করা হয়। আর সেই কারণেই বোধহয় দিনে দিনে দক্ষিণ কলকাতায় এই ‘ফুড ব্র্যান্ড’ এর জনপ্র্রিয়তা বেড়েছে।
সেই কারণেই বোধহয় এখনও গড়িয়াহাটের কাছে প্রথম যে ছোট্ট ‘আউটলেট’ দিয়ে ‘বেদুইন’ এর যাত্রা শুরু, তা আজও স্বমহিমায় বিরজমান। এখনও দুপুর থেকেই উপচে পড়া ভিড়, রোল কিংবা কাবাবের মারকাটারি বিক্রি। ওই ছোট ‘আউটলেট’ এর সামনে দাঁড়িয়ে যত লোক খান, তার চাইতে বেশি লোক হয়তো প্যাকেটে করে খাবার নিয়ে বাড়িও চলে যান। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে যখন বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি অ্যাপের রমরমা এবং অনেকেই গিয়ে খাওয়ার চাইতে বাড়িতে নিয়ে এসে উদরপূর্তি করতে চাইছেন, তখনও ‘বেদুইন’ এর বিক্রিতে কোনও কমতি নেই।
কবির সুমন যখনও কবির হননি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো যখন গড়িয়াহাটের মোড়ে দাঁড়িয়ে সুন্দরীদের দর্শন পাওয়াটা একটা ‘অনুশীলন’ ছিল, প্রায় তিরিশ বছর আগে সেই সময় থেকে দক্ষিণ কলকাতার ‘ফুড ম্যাপ’-এ ‘বেদুইন’ এর আবির্ভাব। তখনও পকেটে দশ টাকার নোট থাকলে কবিতার বই এবং ভরপেট খাবারের স্বপ্ন দেখা যেত। সেই স্বপ্নের যতার্থ সঙ্গত করতো ‘বেদুইন’ এর খাবার-দাবার। টিকিয়া-রুটি বা রোল সস্তা ছিল বলে আমাদের বেশি টানতো, কিন্ত আস্তে আস্তে অন্য মোগলাই খানাতেও ‘বেদুইন’ নাম করে ফেলল। যেমন বিরিয়ানি বা মাটন চাপ কিংবা রেশমি কাবাব।
আমি গত শতকের আট এবং নয়ের দশকের সেই সময়টার কথা বলছি, যখনও পার্ক সার্কাসে ‘সিরাজ’ এরই একছত্র শাসন চলছে, অন্য চ্যালেঞ্জারদের আবির্ভাব হয়নি। তখনও উড়ালপুল দিয়ে শহরের ট্রাফিককে মসৃন করে তোলাটা শুরু হয়নি। তাই দক্ষিণ কলকাতার যে অংশটা মননে, সংস্কৃতিতে, প্রেমে এবং অপ্র্রেমে শহরের ল্যান্ডস্কেপে নতুন করে রঙ ছড়াচ্ছিল, সেই গড়িয়াহাট বা গোলপার্কে ‘বেদুইন’ ছিল নতুনতম আবিষ্কার। ‘বেদুইন’কে কৃতিত্ব দিতে হবে এই কারণে যে তার সাফল্য মোগলাই খানায় পরিচিত অন্য ব্র্যান্ডগুলিকেও টেনে আনে গোলপার্ক বা গড়িয়াহাট চত্ত্বরে। অর্থাৎ এটা সেই ‘জুতা আবিস্কার’ এর মতোই গল্প আর কি। গোলপার্ক কিংবা গড়িয়াহাট যেমন ‘বেদুইন’ এর মাধ্যমে মোগলাই খানায় নতুন করে মজলো, তেমনই দক্ষিণের এই সমৃদ্ধশালী অংশে টিকিয়া-রুটি থেকে বিরিয়ানি-চাপ এর এতটা বড় বাজার রয়েছে দেখে অন্য বড় ব্র্যান্ডগুলো গড়িয়াহাট-গোলপার্কে চলে এল।
ভোজন রসিকরা যেমন কখনও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ভাবেননি, তেমনই ‘বেদুইন’ এর টিকিয়া-রোল খাওয়ার সময় কিংবা নরম তুলতুলে রেশমি কাবাবে কামড় দিতে গিয়ে কিছু ভাবার দরকার নেই। এই করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে আমি লাইন দিয়ে ‘বেদুইন’ এর এই ছোট্ট আউটলেট থেকে মালাই-কাবাব আর ফিস রোল কিনে নিয়ে গিয়েছি। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গিয়েছি কলেবরে বৃদ্ধির পাশাপাশি ‘বেদুইন’ এখন মাছের বিভিন্ন পদও তৈরি করে। যেমন ফিস রোল বা ফিস তন্দুরি। এবং এই সব নতুন ‘স্পেশালিটি’ ‘বেদুইন’কে আরও জনপ্রিয় করেছে। রোলের মধ্যে যদি ‘চিকেন’ এর পরিবর্তে মাছের টুকরো থাকে, তাহলে তা ভোজন রসিক বাঙালিকে তো টানবেই।
ছোট্ট একটা দোকান থেকে দক্ষিণ কলকাতায় অনেক আউটলেট, এমনকি ‘ফাইন ডাইনিং’ এর রেস্তোরাঁ ‘বেদুইন’ এর মুকুটে এত পালক জুড়ে গেলেও এখনও তাদের আসল তুরুপের তাস সস্তায় মোগলাই খানা। গড়িয়াহাট বা গোলপার্কে এখন অনেক চ্যালেঞ্জার থাকলেও রুমালি রুটি আর টিকিয়ার জন্য, কিংবা মোগলাই খানার অন্য কোনও পদ চাখতে ‘বেদুইন’ মধ্যবিত্তের ভরসাস্থল।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.