কারও বয়স ১৫-১৬ কেউ বা ২৫ কিংবা তার একটু বেশি, বেশিরভাগই স্কুল কলেজে পড়া ছেলেমেয়ে ওরা। কিন্তু এবারের লকডাউনটা বাড়িতে বসে কাটায়নি ওরা। বন্ধুরা মিলে তৈরি করে ফেলেছে একটা ছোট টিম, নাম 'শিলদা সেভিয়ার্স'। আর তারপরই মাঠে নেমে পড়েছে কোভিড রোগীদের সাহায্য করতে। বেলপাহাড়ি, শিলদা, বিনপুর, ডুমুরিয়া, গন্ডাপালের জঙ্গল ঢাকা গ্রামগুলোতে করোনা ঢুকেছে এবার৷ অসুস্থ হলে টেস্ট করাতে ভয় পাচ্ছেন গ্রামের পর গ্রাম৷
করোনা হয়েছে শুনলেই একঘরে করে দেবে গ্রামে! কে বাজার করে দেবে! না বেরোলে খাবেই বা কী? ওষুধই বা পাবে কোথায়? মাঝ রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে গাড়ি কোথায় পাবেন হাসপাতাল যেতে? এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির কোয়েল মন্ডল, পুজা লাহা, দেবদূত দাস, দীপঙ্কর দে-রা। কোভিড পজিটিভ রোগীর বাড়িতে বাজার করে দেওয়া, ওষুধ অক্সিমিটার নিয়ে পৌঁছে যাওয়া কিংবা পুরো বাড়ি অসুস্থ হলে দু'বেলার রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া সবই করছে শিলদা সেভিয়ার্স টিম।
অক্সিমিটার পৌঁছে দিয়েই থেমে থাকছে না সেভিয়ার্সরা৷ মিটারের রিডিং ৯০ এর নীচে নামলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা সোজা রোগীর বাড়িতে হাজির হচ্ছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর কিংবা সিলিন্ডার নিয়ে। কোন বাড়িতে কোভিড রোগী সুস্থ হওয়ার পর স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করছে সেভিয়ার্সরা৷ মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংক্রমিত এলাকায় পিপিই পরে পৌঁছে যাচ্ছে এই টিম, এলাকা স্যানিটাইজেশনের পাশাপাশি মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার বিলি করে আসছে প্রত্যন্ত এলাকা গুলোতে। করোনা নিয়ে সচতনতা তৈরি চেষ্টা করছে গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে৷
কিভাবে কাজ করে শিলদার সেভিয়ার্সরা?
কোভিড রোগীদের জন্য দু'বেলার রান্নার কাজটা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে তৃণা মন্ডল, কোয়েল, পুজা, মানসী কর্মকার ও অমিত কোলে। প্রতিদিনের বাজারের দায়িত্ব থাকে শুভঙ্কর দে, বিল্টু পাল, সত্য দাস, সৌরভ দাস, গোপাল, সাহেব কর্মকারদের কাঁধে। কোভিড রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া, প্রয়োজনে ব্লাড টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ, ক্যাথিটার লাগানোর কাজগুলো করছেন সেভিয়ার্স টিমের অমিত কোলে, অভিজিৎ মন্ডল, সৌরভ দাসরা৷ অমিত কোলে পেশায় প্যাথলজিস্ট৷ শিলদায় একটি প্যাথল্যাবও রয়েছে তাঁর৷
কিভাবে সেভিয়ার্সের শুরু?
সেভিয়ার্সের সদস্য বিল্টু পাল ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাকে বলেন, ' আমাদের এলাকায় তখন গ্রামে গ্রামে জ্বর, অনেকে হঠাৎ করে মারাও যাচ্ছেন৷ কিন্তু টেস্ট হচ্ছে না। টেস্ট হলেও অক্সিমিটার নেই তাই বোঝা যাচ্ছে না অক্সিজেন লাগবে! এভাবে এক বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমাদের এক বন্ধু পেশায় সাংবাদিক, কলকাতায় থাকাকালীন ওর করোনা হয়৷ তারপর সুস্থ হয়ে ঝাড়গ্রামে ফিরে আসে৷ ওর নিজের কেনা একমাত্র অক্সিমিটারটা নিয়ে আমরা প্রথমে কাজ শুরু করি। ওটা একজন কোভিড রোগী দিয়ে তারপর সে কিছুটা সুস্থ হলে অন্য আরএকজনকে দিতাম৷ এরপর বন্ধুবান্ধবরা মিলে কিছু অক্সিমিটার কিনি, সঙ্গে মাস্ক স্যানিটাইজার ডোনেট করেন অনেকে৷ আমাদের অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং খাবার দেওয়ার জন্য অর্থ সাহায্য করেন ডঃ অনির্বাণ গাঙ্গুলি। তারপর কাজ করতে করতে টিম তৈরি হয়ে যায়৷ প্রচুর মানুষ এগিয়ে আসেন। সাহায্যের হাত বাড়ান৷ তাদের ভালোবাসা ও আশ্বাসেই আমরা কাজ করতে পারছি।'