কোপেনহাগেন: কেবল খেলা নয়, সম্প্রীতি-সংহতি-ঐক্যের আরেক নাম হল ফুটবল। আর সেটা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন(Chrtistian Eriksen)। হাসপাতালে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টা যখন এদিন পার করছিলেন এরিকসন তখন পার্কেন স্টেডিয়ামে(Parken Stadium) এক অদ্ভুত সম্প্রীতির বাতাবরণ। গ্যালারির দু’দিকে বসে দু’দেশের সমর্থকেরা। একদল সমস্বরে বলছে ক্রিশ্চিয়ান তো পরক্ষণেই অন্যদল বলছে এরিকসেন। ড্যানিশ ফুটবলারের দ্রুত আরোগ্য কামনায় দু’দেশের সমর্থকদের সেই গগনভেদী চিৎকার বোধহয় পৌঁছে গিয়েছিল এরিকসনের হাসপাতালের বেডে।
তাইতো প্রায় ঘন্টাখানেক পর গোটা ফুটবলবিশ্বকে স্বস্তি দিয়ে জানান দেওয়ালেন যে তিনি বিপন্মুক্ত। হাঁফ ছাড়ল ফুটবল পাগল জনতা। মাঠে যখন তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা চলছিল তখন হাতে-হাত আর দাঁতে দাঁত চেপে মানবপ্রাচীর তৈরি করেছিলেন সতীর্থরা। সেই প্রাচীর ভাঙে কার সাধ্যি। উৎকন্ঠায় তখন ফিনিশ ফুটবলারদের চোখেও জল। হাসপাতালে অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর প্রাণের চেয়ে প্রিয় সতীর্থদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন এরিকসন। হ্যাঁ, তিনি কথা বলতে পারছেন এখন। আর ভিডিও কলে সতীর্থদের অভয় দিয়ে ম্যাচটা পুরো খেলার কথা জানান ইন্টার ফুটবলার।
ইতালিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো(Fabrizio Romano) তেমটাই জানিয়েছে। এরিকসন সংজ্ঞাহীন হয়ে লুটিয়ে পড়ার পর ম্যাচটি সাময়িক স্থগিত রেখেছিল উয়েফা(UEFA)। ক্রিশ্চিয়ানের স্থিতিশীল হওয়ার খবর পৌঁছনোর পর দু’দলের অনুরোধে ম্যাচটি পুনরায় শুরু হয়। তবে ক্রিশ্চিয়ানের বেঁচে থাকার কারণ হিসেবে আজ কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন দলের অধিনায়ক সাইমন কায়ের এবং দলের চিকিৎসকেরা। কায়ের নিশ্চিত করেন এরিকসনের শ্বাসবায়ু চলাচল করছে। এরপর মেডিক্যাল স্টাফেরা মাঠেই কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন(CPR) পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগে এরিকসনের হৃদযন্ত্রকে পুনরায় সচল করতে সাহায্য করেন। সূত্রের খবর সিপিআর সিস্টেমের সঠিক প্রয়োগেই নাকি মাঠেই সংজ্ঞা ফেরে ড্যানিশ তারকা ফুটবলারের।
ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড(Denmark vs Finland) ইউরোর তৃতীয় ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ এদিন এই ভয়ানক ঘটনার সাক্ষী থাকে। ৫৫ মিনিটের মাথায় হঠাতই বল ধরতে গিয়ে মাটিতে সংজ্ঞাহীন হয়ে লুটিয়ে পড়েন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। অক্সিজেন সাপোর্টের মাধ্যমে স্টেডিয়াম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় ইন্টার মিলান (Inter Milan) ফুটবলারকে। স্ট্রেচারে করে যখন ডেনমার্কের তারকা ফুটবলারকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন চিত্রগ্রাহকদের থেকে আড়াল করতে দু’পাশে ফিনল্যান্ডের পতাকা ঘিরে ধরেন মেডিক্যাল স্টাফেরা। তাঁর সতীর্থরা কার্যত এসকর্ট করে নিয়ে যাচ্ছিলেন এরিকসনকে। মাঠে প্রাথমিক শুশ্রূষা চলাকালীন এরিকসনের সতীর্থদের চোখে জল দেখে চরম উৎকন্ঠায় ভুগছিলেন দেশ-বিদেশের তামাম অনুরাগীরা।
মেডিক্যাল এমার্জেন্সির কারণ দেখিয়ে প্রাথমিকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হয় ম্যাচ। গোলশূন্য স্থগিত হওয়া ম্যাচটি পরবর্তীতে চালু হলে ম্যাচটি এক গোলে জেতে ফিনিশরা। ইউরোর আবির্ভাব মঞ্চ জয় দিয়ে স্মরণীয় রাখে ফিনল্যান্ড। কিন্তু ম্যাচে একমাত্র গোল করে কোনও সেলিব্রেশন করেননি জোয়েল পোজানপালো। ডেনমার্ক হয়তো হারল, কিন্তু জিতে গেল ফুটবল।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.