কলকাতা : বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আরও এক নক্ষত্র পতন। তবে শুধু বাংলা বা ভারতবর্ষ বলা ভুল, বিশ্ব হারালো এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে। পরিচালক কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের (Buddhadeb Dasgupta) প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিনোদন মহল।

বর্ষীয়ান এই পরিচালকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta)। প্রয়াত ও পরিচালকের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অভিনেত্রী জানালেন ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ (Mondo Meyer Upakhyan) ছবির শুটিংয়ের গল্প। অভিনেত্রীর আক্ষেপ ধরা পড়ল তার গলায়।

অভিনেত্রী জানালেন,”বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মানেই আন্তর্জাতিক মানের ছবি ও আন্তর্জাতিক সম্মান। ভারতীয় ছবিকে গ্লোবাল প্লাটফর্মে দেখা। বিশ্বের মানচিত্রে স্বীকৃতি পাওয়া। একটা কথা ওনার ব্যাপারে প্রযোজ্য যে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মানেই আন্তর্জাতিক ভাবে সিনেমার পরিচয় পাওয়া। খুব ছোট ছিলাম যখন আমার কাকু, যিনি পেশায় ডাক্তার আমাকে ‘গৃহযুদ্ধে’র (Grihoyuddha) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে ছিলেন। সেটা আমার কাছে একটা বিস্ময় ছিল। তখন অনেকটা ছোট ছিলাম বলে হয়তো ছবিটার মূল্য ততটা বুঝিনি কিন্তু একটা ভালো ছবির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল সেদিন। পরে যখন ছবিটি দেখেছিলাম তখন সেই ছবির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বুঝেছি অভিনয় কোন পরিসরের হতে পারে। অভিনয় কতটা মানুষকে এক্সপ্লোর করতে পারে। অঞ্জন দত্ত, মমতা শঙ্কর, গৌতম ঘোষের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ওনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই । বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিচালক আমাকে ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ ছবির জন্য প্রস্তাব দেন। তখন আমার কর্ম জগতে একদমই প্রথমের দিক। আমার বোধগম্য হয়নি আমি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারব কিনা। কিন্তু উনি আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন। বলেছিলেন এই চরিত্রটি আমিই করতে পারব। কিন্তু আমার নিজের উপর আস্থা ছিল না। এরকম একটা হেভিওয়েট চরিত্র। একজন বেশ্যা, মা এমন একটি বলিষ্ঠ মহিলা চরিত্র বলে কথা। কিন্তু উনি আমার ওপর বিশ্বাস রেখে ছিলেন। সেই সময় বয়স বা বুদ্ধি কোনটাই হয়ে ওঠেনি আমার এরকম একটা চরিত্র করার। অনেক বকাবকিও করেছেন কিন্তু আমি জানিনা কীভাবে ওই চরিত্রটার মধ্যে দিয়ে আমি নিজেকে তুলে ধরেছিলাম।

আমার মনে আছে খুব ভোরবেলা আমাদের শুটিং হতো আর ওই ম্যাজিক লাইফটা যদি উনি না পেতেন তাহলে উনি শুটিং ক্যানসেল করে দিতেন। তারপরে শেষে যে ফলাফলটা বের হতো সেটা যা অসাধারণ হত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই ছবি বেস্ট ফিল্ম হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। সেটা আমার কাছে একটা খুব বড় প্রাপ্তি। আমার ছবি জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে আর এই ছবিতে আমি মুখ্য ভূমিকায় এটা আমার কাছে নিঃসন্দেহে খুব আনন্দের।

যদিও আমি খুবই ক্ষুদ্র ওনার ব্যাপারে কথা বলার জন্য কিন্তু তাও উনি যে পরিধির কাজ করেছেন এবং আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন তা আমাদের কাছে পাঠ্যপুস্তকের মত। সেই পাঠ্যপুস্তক পরের প্রজন্ম পড়বে। আমি খুবই দুঃখিত উনি যখন পরবর্তীকালে আরেক ছবি ‘উত্তরা’র জন্য আমাকে প্রস্তাব দেন, তখন আমি তা করতে পারিনি। আমার বাবাকে উনি চিঠি লিখেছিলেন এই ছবিতে আমার চরিত্র এবং ছবিটির বিষয়বস্তু বর্ণনা করে। কিন্তু আমি অন্যান্য বেশ কয়েকটি ছবির জন্য অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায় সে ছবিটি করতে পারিনি। আর এই আক্ষেপটা আমার সারাজীবন থাকবে এমনকি আমার বাবাও আমার উপর খুব অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।

আমি ভাবতে চাইও না ভাবতে পারবো না উনি আমাদের মধ্যে নেই। উনি যা ঐতিহ্য রেখে গেছেন তা অমর।
আমার কাছে ওনার তৈরি সবথেকে পছন্দের সিনেমাগুলি বাঘ বাহাদুর, চরাচর, গৃহযুদ্ধ, তাহাদের কথা।
একজন মননশীল ব্যক্তিত্ব যিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। একজন পরিচালক,কবি,সমালোচক। পরেও কথা ছিল ওনার সঙ্গে আবার ছবি করার।

আজ সত্যি খুব অন্ধকার একটা দিন। যে ব্যক্তিত্বের দ্বারা আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি,আন্তর্জাতিক প্যানারোমাতে যার উজ্বল তার কাজ চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।”

বুধবার সকাল ছটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে মৃত্যু হয় পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। জানা যায়, বৃক্ক জনিত সমস্যার কারণে ডায়ালাইসিস চলছিল তার।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.