সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়: বিতর্ক (controversy) তাঁর পিছু নিয়েছে সারা জীবন। তাই তো শেষ জীবনে নিজ দেশ ছেড়ে নিয়েছিলেন কাতারের (qatar) নাগরিকত্ব (citizenship)। কিন্তু তিলোত্তমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অদ্ভুত কাঁচা মিঠে আমের মতো। এই শহর তাঁকে আপন করে নেয়, পরমুহূর্তেই তাঁকে পরিত্যাগ করে। আবার মন ভোলায় অন্য কোনও ভাবে।

তিনি ভারতের পিকাসো (pikaso)৷ কোনওদিন ক্যানভাসে আঁকা পছন্দ করতেন না। সামনে যা পেতেন ভেবে নিতেন ক্যানভাস। এমন এক শিল্পীর সারা জীবন জুড়ে যেমন রয়েছে খ্যাতি তেমন রয়েছে বিতর্কও। তবে কলকাতার (kolkata) সঙ্গে তাঁর এক অদ্ভুত সম্পর্ক। এই যেমন অভিজাত ক্যালকাটা ক্লাব। সেখানে একবার তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কারন সেখানে স্যুট ব্যুট পরে যেতে হবে। তিনি উপরে হ্যাট কোট টাই পড়তেন কিন্তু পায়ে তো কিছু পড়তেন না। খালি পায়েই থাকতেন তিনি। রয়্যাল ক্লাব পোশাকবিধি থেকে বেরোবে না৷ শিল্পী থাকবেন নিজের মতো। শেষে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এম এফ হুসেন। এই ঘটনা নিয়ে তৎকালীন কলকাতার সংবাদ মাধ্যম তুমুল সমালোচনা করেছিল৷ এত বড় শিল্পীকে এমন অসম্মান। এই দূরে ঠেলে দেওয়া , মুহূর্তেই কাছে টেনে নেওয়া আর কি।

পঞ্চাশ-একান্নর কলকাতা। অকাদেমীতে বার্ষিক প্রদর্শনী। ফিদা হুসেনের ছবি ১৫০ টাকাতেও কেউ কেনেনি। পরে তাঁর ছবিই এই কলকাতার বহু মানুষের বাড়িতে স্থান পেয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। কোটি টাকাও দিয়েছেন এমনও অনেকেই ছিলেন এই কলকাতা থেকেই।

আবার তিনি যখন নগ্ন সরস্বতীর ছবি আঁকলেন, তখন দেশ জুড়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছে ভারতের পিকাসোর। দেশের বিভিন্ন তাঁর প্রদর্শনী ভাঙচুর করা হয়েছে। কলকাতার তো অন্যপথের পথিক। এই শহরের শিল্পীরা উদার। তাঁরা শিল্প বোঝেন। শিল্পীর মান দেন। তাঁর সমর্থনে সমবেত হয়েছিলেন সমস্ত শিল্পী। তাই আপ্লুত হন হুসেন সাহেব। ৮৮ বছরের জন্মদিনে ছবি দেখাতে কোথাও না গিয়ে যেখানে মান পেলেন সেই কলকাতায় ছবি দেখাতে। কিন্তু সেই বিতর্ক। যা তাঁর পিছু ছাড়েনি। এবারও তাই হল। সাক্ষাৎকারে এমন একটি মন্তব্য করে বসলেন যে সব কলকত্তাইয়া শিল্পীরা সারা দেশের উল্টো পথে হেঁটে হুসেনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরাই বেজায় ক্ষুণ্ন হলেন। ব্যথিত করল তাঁদের। শুরু হল প্রদর্শনী বয়কট। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এড়িয়ে যান এম এফ হুসেনের প্রদর্শনী উদ্বোধন।

আবার এই কলকাতায় এলেই তাঁর সিরাজ রেস্তোরাঁয় যাওয়া চাই। সিরাজের বিরিয়ানি তাঁর মনের অজস্র আঘাতে যেন মলম লাগাত। শিল্পীর জন্ম মহারাষ্ট্রের পন্ঢারপুরে। বাবা কাপড়ের কলের কর্মী। ছেলে লেখাপড়ায় করে না। মন আঁকাঝোকায়। পয়সা।দেয় না আঁকা। ‘আর্ট স্কুল’ ভরতি করলেও ছেলের যখন সেই স্কুল পছন্দ হল না ঠিক করেন ছেলে ঘি-এর ব্যবসা করুক।

তা হয়নি। ভরতি করেন ‘স্যর জে জে আর্ট স্কুল’-এ। উত্থান এখান থেকেই তবে লড়াইয়ের মাধ্যমে। এক সময় রঙ, তুলি, ক্যানভাসের জন্য সিনেমার হোর্ডিং এঁকেছেন। কাঠের খেলনা রং করেছেন। নকশা করেছেন আসবাবে। স্টুডিয়ো ছিল গ্র্যান্ট রোডের ফুটপাথ। যা পেরেছেন খেয়েছেন। থাকতেন গ্যারেজে। তবে ছবি আঁকা থামেনি । সাতচল্লিশ-এ তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা গড়লেন ‘বোম্বে প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্ট গ্রুপ’। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.