সুমন ভট্টাচার্য: মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা সিনেমার চাইতেও রোমাঞ্চকর| কিংবা অ্যাডভাঞ্চারাস| না হলে দাউদ ইব্রাহিম থেকে জয়পাল সিং ভুল্লার,জীবনের রোডম্যাপ টা একরকম হয় কেন?কেন একজন পুলিশকর্মীর ছেলে হয়ে ওঠে অপরাধ জগতের কিংপিন? কি কারণে আইনের রক্ষকের ছেলে আইন ভাঙাটাকে এত সহজ করে ধরে নেয়? বুধবার কলকাতার নিউটাউনে নিহত পাঞ্জাবের গ্যাংস্টারের জীবনের কাহিনী জানতে জানতে মনে হচ্ছিল,আসলে আমাদের অজান্তেই দাউদ ইব্রাহিম কোথাও একটা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ফেলেছে| যেখানে মুম্বইয়ের এই গ্যাংস্টার শুধু আচার্য নন, রোলমডেলও|
ভুল্লারের সঙ্গে কি আশ্চর্য মিল দেখুন দাউদের| পুলিশকর্মীর ছেলে, প্রথমে ছোট অপরাধ| তারপরে জেলে যাওয়া| সেখানে অপরাধজগতের আরো লোকজনদের সঙ্গে পরিচয়| আরেকটু বড় দিগন্ত খুলে যাওয়া| একটা অপরাধের নেটওয়ার্ক তৈরিতে মনোনিবেশ| সেখান থেকে আরেকটু বড় অপরাধে হাত লাগানো| একটা আন্তঃরাজ্য যোগাযোগ তৈরি হওয়া| এইবার বিদেশি রাষ্ট্রের গোয়েন্দাসংস্থা টোপ দেবে, আরেকটু বড় কাজের হাতছানি| সেইখান থেকে অর্থ এবং আরো অনেককিছুর লোভে অপরাধজগতের চাঁই হয়ে ওঠা| গল্পের শুরু এবং মাঝের অংশটা প্রায় এক| পাঞ্জাবের এই গ্যাংস্টারের এক্সপায়ারি ডেট শুধু একটি তাড়াতাড়ি ছিল, এই যা|
প্রশ্ন উঠতে পারে পাঞ্জাবের এই গ্যাংস্টারের কলকাতাকে বেছে নেওয়ার কারণ কি? গা ঢাকা দেওয়ার জন্য কলকাতাতেই এসেছিল কেন? বাবলু শ্রীবাস্তবের চেলা মাঙ্গে যে কারণে প্রায় ২০ বছর আগে কলকাতায় এসেছিল এবং পার্কস্ট্রিটে এনকাউন্টারে মারা গিয়েছিল,আজও সেটাই কারণ| তালীবনশ্যাম এই বঙ্গভূমির অসাধারণ ভৌগলিক অবস্থান| বিমান না চললেও, আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ থাকলেও, এতগুলো আন্তর্জাতিক সীমানা কাছে যে কোনো উপায়ে টপকে অন্যদেশে ঢুকে পড়া যায়| আর তাহলেই ভারতের আইন এবং অপরাধের তালিকা থেকে নিষ্কৃতি|
কিন্তু আগে যেগুলো রামগোপাল বর্মা বানিয়ে মুগ্ধ করে দিতেন, বা এখন যেগুলো আমাজন প্রাইম বা নেটফ্লিক্স এর মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখে ভাল লাগে, সেই আন্ডারওয়ার্ল্ড ড্রামাকে বাস্তবে অভিনীত হতে দেখলে একটাই কারণে বিরক্ত লাগে, সংশয় জাগে| প্রশ্ন জাগে আমাদের জেলগুলো তাহলে কি শুধু নামেই সংশোধনাগার হয়েছে, আসলে সেখানে কিছুই সংশোধন হয় না? বরং আরো পাক্কা অপরাধী তৈরিতে সাহায্য করা হয়? ভুল্লারের জীবনীপঞ্জি দেখলে সেইরকমই ভ্রম হয়|
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.